পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জোর করে টাকা আদায় : টাকা না দিলে মারধর ও নাজেহাল করে : পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
নূরুল ইসলাম, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে ফিরে : সারাদেশে ট্রেনে হিজড়াদের অত্যাচার বেড়েই চলেছে। যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করা ওদের প্রধান কাজ। টাকা না দিলে হিজড়ারা এমন কিছু কাজ করে যাতে মানসম্মানের হানি হয়। আবার টাকার জন্য যাত্রীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেল পুলিশের পরোক্ষ সহযোগিতায় হিজড়ারা ট্রেনে ট্রেনে চাঁদাবাজি করে। হিজড়াদের দ্বারা আক্রান্ত হলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বরং পরে উল্টো হিজড়াদের পক্ষে সাফাই গায়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঈশ্বরদী, আজিমনগর, আব্দুলপুর, সান্তাহার, জয়পুরহাট, বিরামপুর, পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইলসহ বেশ কিছু স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালেই হিজড়ার দল ট্রেনে উঠে পড়ে। পূর্বাঞ্চলে শায়েস্তাগঞ্জ, নরসিংদী, আখাউড়া, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, ভৈরববাজারসহ বেশ কিছু স্টেশনে হিজড়াদের অত্যাচার বেশি। হিজড়ারা ট্রেনে উঠলেই যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলের আরএনবির চিফ কমান্ড্যান্ট শাহ আলম ভূঁইয়া গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি হিজড়াদের নিয়ন্ত্রণ করার। স্টেশনে ট্রেন থামার পর হিজড়ারা যাতে না উঠতে পারে সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া আছে। তারপরও ওরা উঠে পড়ে। ইদানীং তারা আবার কৌশল পাল্টে টিকিট কেটে ওঠে। তিনি বলেন, এদের নিবৃত করার জন্য দরকার ‘মাইর’। কয়েকজন যাত্রী একত্রিত হয়ে ‘মাইর’ দিলেই এরা আর চাঁদা দাবি করবে না।
সরেজমিনে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত ট্রেনে ভ্রমণকালে যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে লাল-সবুজ কোচ যুক্ত হওয়ায় যাত্রীসেবার মান অনেকাংশে বেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেনের গতিবেগ বেড়েছে। বেশিরভাগ ট্রেনই এখন সময় মেনে চলে। কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটলে ট্রেন সময়মতোই স্টেশনে আসে। এ জন্য যাত্রীরা বর্তমান রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হকের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর হু হু করে রেলের উন্নতি হচ্ছে। রেলের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। এত সব প্রশংসার মধ্যেও যাত্রীদের অভিযোগ হিজড়াদের নিয়ে। হিজড়ারা ট্রেনযাত্রীদের জন্য এখন বড় আতঙ্ক। পার্বতীপুরে নীলসাগর এক্সপ্রেসের একজন ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, রেলমন্ত্রী যদি বিষয়টার দিকে নজর দেন তাহলে আমরা হয়তো রেহাই পেতাম। পুলিশ ও আরএনবি তৎপর হলেই হিজড়াদের নিবৃত করা সম্ভব। হিজড়াদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রেল সেবার ষোল আনাই পূর্ণ হবে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের চিহ্নিত কিছু স্টেশনে এবং ট্রেনে হিজড়ারা নিয়মিত ওঠে। তারা যাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করে। কোন যাত্রীকে কত টাকা দিতে হবে তা নির্ভর করে হিজড়াদের ইচ্ছার ওপর। দেখা যায়, একজন যাত্রীর কাছে ২০ টাকা নিলেও তার পাশের যাত্রীর কাছে দুইশ’ টাকা দাবি করে বসে। টাকা দিতে গড়িমসি করলে হিজড়ারা যাত্রীদের কাপড় ধরে টানাটানি করে। কখনো কখনো গোপনাঙ্গে হাত নিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। তখন ছেলে-মেয়ের সামনে পিতা, স্ত্রীর সামনে স্বামী বা মায়ের সামনে ছেলের সম্মানহানি ঘটে। বাধ্য হয়ে তখন চাহিদামাফিক টাকা দিতে বাধ্য হয় তারা। জানা গেছে, রেলের দুই অঞ্চলের প্রায় সবগুলো ট্রেনেই হিজড়ারা ওঠে। এর মধ্যে নিয়মিত হিজড়াদের দেখা মেলে ঢাকা-রাজশাহীর সিল্কসিটি, ঢাকা-খুলনার সুন্দরবন, ঢাকা-চিলাহাটির নীলসাগর, ঢাকা-সিলেটের উপকূল এক্সপ্রেস, হাওর এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-চিলাহাটির রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেসে। অনেকেরই অভিযোগ, রেলপুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে, যাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করে। এ জন্য অনেকেরই সন্দেহ হিজড়াদের চাঁদাবাজির টাকার ভাগ পায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রী জানান, গত ৭ মার্চ পূর্বাঞ্চলের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে হিজড়ারা টাকা না পেয়ে একজন যাত্রীকে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ হিজড়াদের বিচার তো করেইনি উল্টো তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনগুলোতে প্রতিনিয়ত হিজড়াদের দ্বারা লাঞ্ছিত, অপমানিত হচ্ছেন যাত্রীরা। দলবলে থাকে বলে তাদের চাঁদাবাজি ও অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস করে না যাত্রীরা। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ কমান্ড্যান্ট শাহ আলম ভূঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, যেসব স্টেশনে আরএনবি ইউনিট আছে সেসব স্টেশন থেকে হিজড়ারা ট্রেনে উঠতে পারে না। তারপরও যে তারা একেবারে ওঠে না তা নয়। তিনি বলেন, রেলপুলিশ হিজড়াদের বিরুদ্ধে বহু মামলা দিয়েছে। তারপরও তাদের উৎপাত কমেনি। বরং তারা কৌশল পাল্টে ট্রেনে উঠছে। একজন হিজড়া টিকিট কেটে ট্রেনে উঠলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।