পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব ধরনের বিষয় বিবেচনায় রেখেই সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বৈশাখী উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা দেশে র্যাব পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে থাকছে র্যাব পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী। দেশের সব কয়টা মহানগরে থাকছে র্যাব পুলিশের চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নতুন বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানস্থলে থাকছে সিসি ক্যামেরা, প্রবেশপথে নিরাপত্তা আর্চওয়ে। অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্র করে থাকছে সাদা পোশাকের পুলিশ ও র্যাব, ডগস্কোয়াড এবং বিশেষ মনিটরিং সেল। এছাড়া প্রতিটি জেলা শহরে বৈশাখী অনুষ্ঠানে কড়া নিরাপত্তার জন্য জেলাপুলিশ সুপারকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোন ধরনের অঘটন ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে। সারা দেশে লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য এবং ৮ হাজার র্যাব সদস্য ওই দিন সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
গতকাল পয়লা বৈশাখের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ শান্তি পূর্ণ পরিবেশে উদযাপনে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপনের জন্য নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রমনা পার্ক এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ধানমন্ডি লেক এলাকায় এই দিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ কোন ধরনের বিশৃংখলা ঘটাতে না পারে সে জন্য আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। এছাড়া সারাদেশে পুলিশ ও র্যাব কঠোর সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে। জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তাই করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সন্দেহজনক কাউকে দেখলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় হয়।
আইজিপি বলেন, কোন ধরনের নাশকতা বা জঙ্গি হামলার কোন ধরনের তথ্য এখন পর্যন্ত নেই। আমরা সব কিছু বিবেচনায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে যাতে সবাই বৈশাখী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেই আমারা এবার বেশ কিছু নিরাপত্তা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জেলা শহরেও নির্বিঘেœ বৈশাখী অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষ্যে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যেই বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাবের গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সংস্থার সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দারা অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশের এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছে। রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো আনা হচ্ছেÑ সিসি ক্যামেরার আওতায়। রমনা বটমূলে গত বছরের মতো এবারো থাকছে পুলিশের টু হুইলার। যার মাধ্যমে পুলিশ অনুষ্ঠানস্থল টহল দেবে। সেই সঙ্গে নববর্ষের সকালে নির্বিঘেœ মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
জানা গেছে, পয়লা বৈশাখ উদযাপন কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি নির্ভরতাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে সাধারণ জনগণকে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ত্যাগ করার আহŸান জানানো হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশের পক্ষ থেকে।
নগরবাসী যাতে নিরাপদে আনন্দমুখর পরিবেশে বৈশাখের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পারে সেজন্য পুলিশ ও র্যাবের তরফ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পরে নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায় বলে সন্ধ্যার আগেই শুক্রবারের পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা নিরাপদ বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনিয়েছেন।
ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে রমনা বটমূল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা ডিএমপির সদরদপ্তর থেকে মনিটরিং করা হবে। এছাড়া রমনা পার্কে একটি আলাদা মনিটরিং সেল থাকবে। ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েক স্তরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ধারিত করে দেয়া পথ দিয়েই প্রত্যেককে মেলা বা অনুষ্ঠানস্থলে যেতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ ও বাহির পথে আর্চওয়ে, তল্লাশি, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ফুট পেট্রোল টিম, ওয়াচ টাওয়ার প্রভৃতি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকবে।
ডিএমপির মিডিয়া শাখার প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে অনুষ্ঠানস্থলে কোনো প্রকার ব্যাগ, সন্দেহজনক বস্তু, অস্ত্র, ছুরি, নেলকাটার, লাইটার নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এ ছাড়া এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মোটরসাইকেলে দু’জন বসতে পারবে না।
গতকাল র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাজধানীর প্রধান বৈশাখী অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থ রমনা পার্ক পরিদর্শন করেছেন। এসময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে র্যাব সদস্যদের নিদের্শনা দেন তাঁরা।
র্যাব জানায়, ঢাকা মহানগরীর রমনা বটমূলে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান আয়োজন হবে। সার্বিক বিবেচনায় জনগণের নিরাপত্তার প্রয়োজনে আসন্ন পহেলা বৈশাখ ১৪২৪-এর সকল গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। রমনা বটমূল ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী ও শাহবাগ মোড় হতে মৎস্য ভবন পর্যন্ত রাস্তায় মেলাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে দেশীয় মেলা আয়োজিত হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা গেছে, র্যাবের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডগ স্কোয়াড, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, গোয়েন্দা শাখা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গত ১০ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার এম আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডিএমপি সদরদপ্তরে নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্তারিত নির্দেশনা দেন বলেও জানা গেছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, ৫টার পর উন্মুক্ত স্থানে কোনো কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা নৃত্যানুষ্ঠান করা যাবে না। তবে ইনডোরে, সুরক্ষিত স্থানে রাতে বা সন্ধ্যার পরও বৈশাখী অনুষ্ঠান করা যাবে।
রাজধানীতে বর্ষবরণ আয়োজনের মূলকেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ফটক বিকেল সাড়ে ৪টার পর বন্ধ করে দেয়া হলেও শহরের রাস্তায় বেড়াতে বা আনন্দ উদযাপনে কোনো বাধা নেই বলে পুলিশ কমিশনার জানান।
এদিকে টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের অন্যান্য জায়গায়, সন্ধ্যার পরে হেঁটে বেড়াতে, গল্প করতে, বৈশাখের রঙ-বেরঙের পোশাক পরে জনগণ আনন্দ উৎসব করবে, পুলিশ পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেব সেক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। রমনা বটমূলে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ ও বাহির পথে আর্চওয়ে, তল্লাশি, ৯টি ওয়াচ টাওয়ার, তিনটি কন্ট্রোল রুম (পুলিশ কন্ট্রোল রুম: ৯৫৫৯৯৩৩, ৯৫৫১১৮৮, ৯৫১৪৪০০, ০১৭১৩-৩৯৮৩১১, ডিএমপি ফোন নং-৯৯৯। রমনা থানা : ০১৭১৩৩৭৩১২৫, শাহবাগ থানা : ০১৭১৩৩৭৩১২৭, ধানমন্ডি থানা : (০১৭১৩৩৭৩১২৬), বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ফুট পেট্রোল টিম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যে কোন ধরনের সমস্যায় এসব নম্বরে জানানোর জন্য পুলিশ সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
নববর্ষের অনুষ্ঠানে প্রবেশে ডিএমপির নির্দেশনা
এবার নববর্ষ নির্বিঘেœ উদযাপনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বন্ধ রাখা হয়েছে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক। দিনটি উদযাপনের জন্য রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হচ্ছে নানা রকমের অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠান নির্বিঘœ ও সুষ্ঠুভাবে যাতে নগরবাসী উপভোগ করতে পারে সে লক্ষে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্দিষ্ট কয়েকটি গেট দিয়ে ঢুকতে পারবেন দর্শনার্থীরা। বাহির হওয়ার জন্যও রয়েছে আলাদা গেট। রমনা পার্কে প্রবেশ পথ থাকবে অরুণোদয় গেট (বেইলি রোডের শেষপ্রান্ত, সুগন্ধা’র বিপরীতে), রমনা রেস্তোরাঁ গেট ও অস্তাচল গেট (শিশুপার্কের বিপরীতে)।
বাহির হওয়ার পথ হলোÑ উত্তরায়ণ গেট (পুলিশ ভবন ক্রসিং, মিন্টু রোডের শেষপ্রান্ত) ও বৈশাখী গেট (ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের বিপরীতে)।
প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার পথ হলোÑ শ্যামলীমা গেট (কাকরাইল মসজিদের দক্ষিণে), স্টার গেট (মৎস্য ভবন ক্রসিং) ও নতুন গেট (বৈশাখী ও অস্তাচল গেটের মাঝামাঝি)।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ পথ হলোÑ শিখা চিরন্তন গেট, বাংলা একাডেমির বিপরীতে নতুন গেট ও চারুকলার বিপরীতে ছবির হাট গেট। বাহির হওয়ার পথ হলো আইইবি গেট, কালী মন্দির গেট ও তিন নেতার মাজার গেট।
এছাড়া বন্ধ থাকবে টিএসসি গেট (রাজু ভাস্কর্য এর বিপরীতে)। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নগরবাসীকে এই নির্দেশনা মানার অনুরোধ করেছে ডিএমপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।