Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অরুণাচলের মানুষ ভারতের অবৈধ শাসনে সুখী নয় : চায়না ডেইলি

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টাইমস অব ইন্ডিয়া : চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র ‘চায়না ডেইলি’ বুধবার চীন সীমান্তের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে দালাই লামাকে সফরের অনুমতি দেয়ার জন্য নয় দিল্লির সমালোচনা করে অরুণাচল প্রদেশের জনগণ ভারতের অবৈধ শাসনে সুখী নয়। তারা কঠিন জীবন কাটাচ্ছে এবং চীনে ফিরে আসার জন্য তাকিয়ে আছে বলে দাবি করেছে।
চীন দালাইলামার অরুণাচল সফর, বিশেষ করে তাওয়াং সফরের বিরোধিতা করেছে যাকে তারা দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে গণ্য করে। চীনা মিডিয়া ও পররাষ্ট্র দফতর বারংবার এ অঞ্চলে দালাই লামার সফরের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছে।
চায়না ডেইলি এক উস্কানিমূলক নিবন্ধে বলে, ভারতের অবৈধ শাসনে দক্ষিণ তিব্বতের মানুষ কঠিন অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার এবং তারা চীনে ফিরে আসতে চাইছে।
এ নিবন্ধে অবশ্য কম্যুনিস্ট চীনের শাসনের বিরুদ্ধে ১২০ জন তিব্বতির আত্মাহুতি প্রদানসহ বিভিন্ন সময়ে তিব্বতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
দালাই লামার সফর প্রদর্শন করেছে যে তিনি তার বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রæপের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিনিময়ে তাওয়াং জেলা দিয়ে দেয়ার অপেক্ষা করতে পারেন না। সুষ্ঠু দালাইলামা ১৬৮৩ সালে তাওয়াং-এ জন্মগ্রহণ করেন এবং তা তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্রস্থল।
চায়না ডেইলি ৮১ বছর বয়স্ক ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দালাই লামার ব্যাপারে বলে, ইতিহাসে ১৪তম দালাইলামা উত্তরসূরিদের কাছে একজন গোলমাল সৃষ্টিকারী বলে চিহ্নিত হবেন।
নিবন্ধে বলা হয়, দালাইলামার সফর তার নিজের, জনগণ, দেশ ও আঞ্চলিক শান্তির প্রতি তার বিশ^াসঘাতকতার প্রমাণ। এতে বলা হয়, বসবাসের জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীলতার কারণে দালাইলামা তার প্রভুদের খুশি করতে আকুল। কিন্তু তিনি প্রভুদের কৃপা পেতে তার বিনিময়ে দক্ষিণ তিব্বত বিক্রি করার মধ্য দিয়ে খুব বেশি দূর এগিয়ে গেছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ২০ বারেরও বেশি নিজেকে ভারতের সন্তান বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এবার চীন-তিব্বত সীমান্ত সমস্যার সমাধান, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা অগ্রাহ্য করে সমস্যা সৃষ্টি করে এ অঞ্চলকে ভারতের কাছে বিক্রি করে তার পরিচয়ে অতিরিক্ত ওজন যোগ করতে চাইছেন।
ভারত ও চীন গত ২০ বছর ধরে তাদের সীমান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা করে আসছে, কিন্তু এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি।
ভারত ও চীনের মধ্যে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের ৩,৪৮৮ কি. মি. দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে সমস্যা রয়েছে। চীন যেখানে অরুণাচলকে দক্ষিণ চীন বলে আখ্যায়িত করে সেখানে ভারত আকসাই চীনকে বিরোধপূর্ণ এলাকা বলে দাবি করে যা ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় চীন দখল করে।
চায়না ডেইলির নিবন্ধে বলা হয়, দালাইলামা আঞ্চলিক শান্তির সাথে বিশ^াসঘাতকতা করেছেন। সীমান্ত সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য চীন ও ভারতের জনগণের সাহস ও প্রজ্ঞা প্রয়োজন। স্পর্শকাতর এলাকায় দালাইলামার সফর কারো জন্য উপকারে আসবে না।
দালাইলামা ৯ দিনের সফরে অরুণাচলে রয়েছেন। এ রাজ্যে এই তার প্রথম সফর নয়। ২০০৯ সালেও তিনি অরুণাচল সফর করেন এবং তখনো চীন সরকার তার সফরের বিরোধিতা করেছিল।
চীন কূটনৈতিকভাবে এ সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত মিডিয়ায় এ জন্য দালাইলামার সমালোচনা করা হয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলে, তারা ঐতিহ্য অনুসারে লাসার দাসাউ মন্দিরের পবিত্র শবাধার থেকে ভস্ম সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে তিব্বতের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মগুরু মনোনীত করবে। বেইজিং দালাইলামার উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নাকচ করে দিয়েছে।
বুধবারের নিবন্ধে ভারতে ৫৮ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানো দালাইলামাকে অরুণাচলের ব্যাপারে তার অবস্থান পরিবর্তনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৫৯ সালে ভারতে পালিয়ে আসার পর দালাইলামা প্রথমে দক্ষিণ তিব্বতের উপর ভারতের সার্বভৌমত্ব সমর্থন করেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে।
অরুণাচল প্রদেশের অংশ বিশেষের উপর চীনের দাবির সমর্থনে নিবন্ধে ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, ১৯০০-এর দশকে তথাকথিত ম্যাকমোহন লাইনের দ্বারা অরুণাচলকে চীন থেকে পৃথক করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের সরকারী কর্মকর্তা হেনরী ম্যাকমোহন প্রস্তাবিত চীনের সাথে এ সীমান্ত রেখা তিব্বত-ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় যা সিমলা চুক্তির অংশ। তবে চীন এ চুক্তি বৈধ মনে করে না ও মানে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ