Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুফতি হান্নান ও রিপনের ফাঁসির সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

কাশিমপুর ও সিলেট কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মুফতি হান্নানের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হবার পর কাশিমপুর কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের জন্য ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে জানান, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের প্রেসিডেন্টের কাছে করা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর দেখা করতে তাদের স্বজনদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে বার্তা পাঠানোর পর বিকেল পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কোনো স্বজন কারাগারে দেখা করতে আসেনি। এদিকে ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কমপ্লেক্সসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, প্রেসিডেন্টের কাছে করা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার খবর সোমবার ফাঁসির দÐপ্রাপ্ত দুই বন্দিকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে তাদের স্বজনদেরও কারাগারে দেখা করতে মঙ্গলবার সকালে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কেউ কারাগারে দেখা করতে আসেননি।
তিনি জানান, তাদের ফাঁসি কার্যকরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। কারাগারে জল্লাদ ও ফাঁসির মঞ্চ সবকিছুই প্রস্তুত আছে। তবে কবে কখন তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে তা জানা যায়নি।
এর আগে আদালতে মৃত্যুদন্ডের রায়ের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী প্রেসিডেন্টের কাছে করা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচের কপি সোমবার কারাগারে পৌঁছায়।
জেল সুপার আরো জানান, ২৭ মার্চ কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তারা প্রেসিডেন্টের কাছে তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। পরে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে যায়। স¤প্রতি ওই আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। সোমবার তাদের আবেদন নাকচের কপি কারাগারে পৌঁছায়। এখন বিধি মোতাবেক তাদের ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ওই আবেদন রিজেক্ট হওয়ার পর প্রাণভিক্ষার আবেদন করার দিন থেকে ২২ দিনের কম নয় এবং ২৮ দিনের বেশি নয় এমন সময়ের মধ্যে ফাঁসির দন্ড কার্যকর করার বিধান রয়েছে।
এর আগে জেল সুপার জানিয়েছিলেন, ফাঁসির রায়ের রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের অনুলিপি ২১ মার্চ রাত পৌনে ১২টার দিকে কারাগারে পৌঁছায়। পরদিন বুধবার সকাল ১০টার পর তা তাদের পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া ওইদিন সিলেট কারাগার থেকে আসা মৃত্যু পরোয়ানাটিও রাতে তাদের পড়ে শোনোনো হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।
এ গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুল কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপন সিলেট জেলা কারাগারে ফাঁসির সেলে বন্দি রয়েছেন।

এদিকে, কারাগারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কমপ্লেক্স ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম, বিপিএম (বার) কাশিমপুর কারাগার ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, কারাগার ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি জানান, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেন কোনো প্রকার অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে জন্য জেলা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সতর্ক ও তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এছাড়া ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল আরোহীদের থামিয়ে দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে।
সিলেটে যে কোনো মুহূর্তে জঙ্গি রিপনের ফাঁসি
আবুল কালাম আজাদ/ মামুনুর রশীদ মামুন সিলেট থেকে জানান, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকরে সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে জল্লাদ। ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনা পেলে যেকোনো মুহূর্তে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারেই ফাঁসি কার্যকর হবে জঙ্গি রিপনের। এমন তথ্য জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রেসিডেন্ট নাকচ করার পর সেই চিঠি গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। চিঠি পাওয়ার পরপরই আমরা আসামিকে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার খবর জানিয়েছি। রিপনের পরিবারও অবহিত হয়ে শেষবারের মতো তার সঙ্গে দেখা করে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই চিঠিতে জেলকোড অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এখন বিধি মোতাবেক দন্ড কার্যকরে আমরা প্রস্তুত আছি। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ও সব প্রক্রিয়া শেষ হলেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে।’
রিপনকে এখন সিলেট কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে বলেও জানান জেল সুপার ছগির মিয়া।
এদিকে জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের সঙ্গে গতকাল শেষ দেখা করেছেন তার বাবা-মা ও স্বজনেরা।  কারা সূত্র জানায়,  গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পরে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সেখানে এসে সাক্ষাৎ করে যান তার বাবা আবদুল ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। সাক্ষাৎকালে রিপন তার বাবা-মা ও ভাইকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করেন।
জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়েছে জেনে তারা শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করে যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ