পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দি নিউ আরব : সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আই এস) বিরুদ্ধে যখন ফাঁস ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে, তাদের শক্ত ঘাঁটি রাক্কা দখলের প্রতিযোগিতায় কে এগিয়ে থাকবে তা সে সিরিয়ার কুর্দিশ পিপলস প্রটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্ব¡াধীন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) অথবা রাশিয়ার বিমান সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ার সরকারিবাহিনী যেই হোক না কেন, সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যে এই আগের মুক্তিদাতারা সত্বরই দখলদার বলে গণ্য হবে।
সিরিয়া সরকারের জোয়াল থেকে মুক্ত প্রথম আঞ্চলিক রাজধানী রাক্কার জনগণ কুর্দি, বিদেশী সমর্থনপ্রাপ্ত তুর্কি স্বার্থের পুতুল তথাকথিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ) অথবা যে সরকারের বিরুদ্ধে তারা প্রথম বিদ্রোহ করেছিল এবং তারপর থেকে যারা অসংখ্যবার নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, তাদের কারো দ্বারা শাসিত হতে সম্মত হবে বলে মনে হয় না। গত সপ্তাহে আসাদ সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এবং তার প্রতিশোধমূলক হিসেবে সিরিয়ার শায়রাত বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা উত্তর সিরিয়ার অ-আইএস গ্রæপগুলোর মধ্যে নতুন করে আঁতাত সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন করেছে যা এখন কার্যকর নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে : রাশিয়া কি সিরিয়ায় মার্কিন মাতব্বরির কাছে নতি স্বীকার করবে না জবাবি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে?
সিরীয় সরকার ও তার মিত্র রাশিয়ার প্রতি এক কঠোর অথচ সীমিত বার্তা প্রদানকারী ট্রাম্প প্রশাসন রাক্কা থেকে আইএসকে বিতাড়িত করাসহ বহুমুখী জটিল সমস্যার সম্মুখীন।
যদি তারা এসডিএফের ওয়াইপিজি নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সমর্থন করে তাহলে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের নেতৃত্বাধীন তুরস্ক সরকারের সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হবে। কারণ তুর্কি সরকার ওয়াইপিজিকে এক সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে গণ্য করে যারা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) অঙ্গ সংগঠন।
পিকেকে ও আংকারার মধ্যে তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বে ১৯৮০ সাল থেকে লড়াই চলছে। তারা প্রথমে কুর্দিদের স্বাধীনতা চাইলেও এখন স্বায়ত্ত শাসন ও বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অধিকারের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। কয়েক দশক ধরে চলা এ লড়াইয়ে ৪০ হাজারেরও বেশী লোক মারা গেছে।
ওয়াইপিজি নেতৃত্বাধীন এসডিএফকে সমর্থন এবং তার ফলে তুরস্ক সরকারকে খেপিয়ে তোলা ন্যাটোর ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে তুরস্ক হচ্ছে ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহৎ সেনাবাহিনীর অধিকারী এবং দেশটিকে ঐতিহ্যগত ভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতু হিসেবে দেখা হয়।
সে সাথে তা এরদোগানকে রাশিয়ার আরো কাছে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী যদি আরব অধ্যুষিত রাক্কা দখলে সক্ষম হয় তা সিরিয়া ও ইরাকে বৃহত্তর আরব-কুর্দি গোষ্ঠি লড়াই সৃষ্টি করতে পারে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ওয়াইপিজি যে সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বিরুদ্ধে সে সব এলাকায় জাতিগোষ্ঠিগত নির্মূলীকরণের অভিযোগ করেছে।
এ খবরও আছে যে তুরস্ক সরকার আইএস ও ওয়াইপিজি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আরব গোত্র আল-জাজিরা ও ফোরাতের সমন্বয়ে একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। এটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আঙ্কারার বিরোধ দেখা দেবে।
অনেকেই গোলযোগের সুযোগ নিয়ে সিরিয়া ও ইরাকে এলাকা দখলের জন্য সিরীয় ও ইরাকি কুর্দিদের অভিযুক্ত করেছেন।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে মার্কিন বিমান শক্তির অনুপস্থিতিতে কুর্দিবাহিনী কতটা কার্যকর হবে তা বিতর্কিত বিষয়। ২০১৪ সালে ইরাকে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হওয়ার পর থেকে কুর্দিবাহিনী তাদের সহায়ক ইউনিট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
কুর্দিবাহিনী এবং তুর্কি বা ইরাকি বাহিনীর সাথে তাদের সম্ভাব্য লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র আঙ্কারা বা বাগদাদের বিরুদ্ধে শক্তি ব্যবহার করবে এটা একেবারেই মনে হয় না। এমনকি পিকেকে ও কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে আন্তঃকুর্দি লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও নয়।
বিপরীতভাবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তুরস্কের দাবি মেনে নেয় এবং তুরস্ক নেতৃত্বাধীন ওয়াইপিজি নেতৃত্বাধীন সিরীয় কুর্দিবাহিনী এফএসএ-কে সমর্থন করে তবে তা বিশ^াসঘাতকতা হিসেবে দেখা হবে। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ^স্ত মিত্র হিসেবে তাদের একটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এ রকম কিছু ঘটলে ওয়াইপিজি তখন সিরিয়া সরকারের সাথে যোগ দিতে পারে। সিরিয়া সরকারের সাথে তাদের একটি দুর্বল অনাগ্রাসন চুক্তি রয়েছে, সে সুবাদে রাশিয়া ও ইরানের সাথেও। পিকেকের অস্থায়ী রাজনৈতিক নেতা কেমিল বায়িক এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ইরানের সাথে চুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
তুর্কি নেতৃত্বাধীন একটি বাহিনী যদি রাক্কা দখল করতে পারে তাহলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান আইএসকে ধ্বংস করার গৌরব করতে পারবেন। এর ফলে গণভোটের মাধ্যমে নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালুর তার রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ প্রয়াস শক্তি লাভ করবে। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্য ও বৃহত্তর মুসলিম বিশে^ তার অবস্থান আরো জোরদার হবে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে এরদোগানের কর্তৃত্ববাদী কর্মসূচি শক্তিশালী করা ও উচ্চাকাক্সক্ষী প্রয়াসের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত দেখতে পাবে। অবশ্য এমন নয় যে যুক্তরাষ্ট্র অতীতে শক্তমানব সরকারগুলোর পিছনে দাঁড়ায়নি।
তবে এ রকম হবে বলে মনে হয় না। কুর্দি যোদ্ধা ও সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উপস্থিতিতে তুর্কি সৈন্যরা সংযত আচরণ প্রদর্শন করছে। এরদোগান আগে বাশারকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিলেন। এসডিএফ মানবিজ শহরের কাছে কয়েকটি গ্রাম দখল করার পর রুশ সমর্থিত সিরীয় সৈন্যরা তুর্কি ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মধ্যে বাফার হিসেবে কাজ করছে। মানবিজে মার্কিন সৈন্য আছে।
চূড়ান্তভাবে যদি রাক্কা দখল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে থাকে এবং কিছু না করে আর আসাদের বাহিনী রাক্কা দখল করে তখন যে কেউই এ প্রশ্ন করবে যে গত সাত বছর ধরে যুদ্ধের কারণ কি ছিল যার পরিণতিতে লাখ লাখ লোক নিহত হল?
এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা রাশিয়ার সম্মান বাড়িয়ে দেবে। দেশের নানা স্থানে নিষ্ঠুরতা চালানোর কারণে সিরিয়া সরকারের গ্রহণযোগ্যতা একেবারে বিলুপ্ত হয়েছে এবং সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকাকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করা এক কঠিন ব্যাপার হয়ে পড়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সামঞ্জস্যবিহীন ও কপটাচারী বলে মনে করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র তার কিছু মিত্রকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে এবং তাদেরকে অন্য নটদের দিকে ঠেলে দিতে পারে যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি শত্রæভাবাপন্ন সে সিরিয়া সরকার বা রাশিয়া যেই হোক।
সবচেয়ে বড় কথা, সিরিয়া সঙ্কটের সমাধান এখনো দৃষ্টিসীমার বাইরে।
রাক্কা যেই দখল করুক না কেন, অদূরভবিষ্যতে সিরিয়ায় হত্যাকান্ড চলতেই থাকবে এবং সকলের অভিন্ন শত্রæ আইএস অপসারিত হওয়ার পর দেশটির অবস্থা আসলে আরো মারাত্মক পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।