Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চার জনের ফাঁসির আদেশ হাইকোর্টে বহাল

রাজন হত্যা মামলায়

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ জাজ সুড নট কম্প্রোমাইজ -বিচারপতি
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের সবজি বিক্রেতা শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ৪ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কামরুল ইসলাম, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত নূর মিয়া শাস্তি কমিয়ে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছেন। এছাড়া সাত বছর করে কারাদন্ড বহাল রাখা হয়েছেÑ মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদের। এক বছরের দন্ড বহাল রয়েছে দুলাল আহমদ ও আয়াজের। গতকাল মঙ্গলবার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ রায় দেন। এসময় আদালত বলেছেন, বিচারের ক্ষেত্রে ধনী-গরিব সবাই সমান। আমরা বিচারক, এ দেশেরই মানুষ। আমরা সব সময় নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করে থাকি। যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়। এ জাজ সুড নট ক¤েপ্রামাইজ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন কৌঁসুলি ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, আসামিপক্ষে এসএম আবুল হোসেন, বেলায়েত হোসেন ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। এই মামলায় চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, রাজন হত্যার মতো ঘটনা সমাজে যেন আর কখনো না ঘটে, কেউ যেন আর নিজেদের হাতে আইন তুলে না নেয়। সে জন্য মৌলিক আইনের প্রতি সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই যেন আইন বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে পায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় মামলায় পর তদন্ত শেষ করে একই বছর ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। বিচার শেষে একই বছর ৮ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে কামরুলসহ ৪ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐাদেশ দেন। ১৩ আসামির মধ্যে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদÐ, তিনজনকে সাত বছরের কারাদÐ ও ২ জনকে এক বছরের কারাদÐ দেন আদালত। খালাস দেয়া হয় তিনজনকে। পরে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স পৌঁছে হাইকোর্টে। পরে আপিল করেন দÐপ্রাপ্ত কয়েকজন। গত ৩০ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ১২ মার্চ রায়ের দিন ১১ এপ্রিল ধার্য করেন হাইকোর্ট।
রায়ে সন্তেুাষ প্রকাশ করলেও শঙ্কা কাটেনি রাজনের মায়ের
সিলেট অফিস :
দেশ-বিদেশে আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় কামরুল ইসলামসহ চার আসামিকে বিচারিক আদালতের দেয়া ফাঁসি এবং ছয়জনের কারাদÐও গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টে বহাল রাখায় সন্তুষ প্রকাশ করে দ্রæত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন, রাজনের মা লুবনা বেগম।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সিলেটের জালালাবাদ থানার বাদেয়ালি গ্রামে নিজের বাড়িতে গেলে লুবনা বেগম বলেন, ‘এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। রায় দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি’।
একই সঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আসামিরা খুব প্রভাবশালী। এই রায়ে পর তারা ক্ষুব্দ হয়ে আমাদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ন হয়ে পরতে পারে। আমাদের পরিবারের ক্ষতি করতে পারে। তাই রায় বাস্তবায়নের পূর্বপর্যন্ত আমি আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি।
নিজের সন্তান হত্যার বিচার দ্রæত সম্পন্ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান লুবনা বেগম।
আজিজুর রহমান ও লুবনা বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে সামিউল আলম রাজনকে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশে রাজনকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
হত্যাকান্ডের মাত্র চার মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর রাজন হত্যা মমালায় সউদি প্রবাসী কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত। যা গতকাল মঙ্গলবার বহাল রাখে হাইকোর্ট।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ