Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিষণœতা প্রতিরোধে মাদকমুক্ত সমাজ প্রয়োজন

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম এ জব্বার : কয়েকদিন আগে পালিত হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশ হিসেবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-Depression –Let us talk অর্থাৎ বিষণœতা -চলো কথা বলি। বিষণœতাগ্রস্ত ব্যক্তিকে একঘরে করে না রেখে সমাজের নিত্যদিনের কর্মপ্রবাহের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, বন্ধুমহল, কর্মস্থলে সহকর্মী, স্কুল-কলেজে তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠী, শিক্ষক সকলেই যার যার অবস্থান থেকে বিষণœতাগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলে এবং ভাব বিনিময় করে কিংবা কি কারণে বিষণœতায় ভুগছেন তা খুঁজে বের করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলে বিষণœতাগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিষণœতা থেকে মুক্ত করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে বিষণœতার হার গত ২০০৫ হতে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে শতকরা ৮০ জন লোক বিষণœতায় ভুগছে মর্মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
বিষণœতা কি, এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞবৃন্দ বলেন, এটা এক প্রকার অসুখ, মানসিক ব্যাধির বহিঃপ্রকাশ। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে রয়েছে সব সময় দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হতাশার মধ্যে থাকা, কর্মস্পৃহা হ্রাস পাওয়া, কর্মক্ষমতা হারানো, শারীরিক ও মানসিক শক্তি হ্রাস, দুঃশ্চিন্তগ্রস্ত হয়ে থাকা, কাজকর্মে মনোযোগ না থাকা ইত্যাদি। এছাড়া ক্ষুধামন্দ, কম বা বেশি ঘুমানো, অস্থিরতা বিরাজ করা, হতাশাগ্রস্ত মনোভাব নিয়ে চলাফেরা করা এবং নিজেকে সব সময় দোষী ভাবা ও নিজের ক্ষতি করার চিন্তা ইত্যাদি বিষণœতার অন্যতম লক্ষণ।
বিষণœতায় কেন ভুগে এমন প্রশ্নের জবাব মেলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। দরিদ্রতা, প্রত্যহিক জীবনে চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান বেশি থাকা, কর্মসংস্থানের অভাব, প্রিয়জনকে হারানো, সম্পর্কে ভাঙন, শারীরিক ও মানসিক শক্তি হ্রাস পাওয়া, দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থতায় থাকা, হঠাৎ আঘাত পাওয়াজনিত কারণে মানুষ বিষণœতায় ভুগতে পারে। তামাক, ধূমপান এবং মাদকের ব্যবহারের কারণে যুব সমাজের একটি অংশ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি ও বিষণœতায় ভোগে এবং নিজেদের অজান্তেই জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
বিষণœতা থেকে মুক্তি লাভের উপায় কি এ বিষয়ে গবেষণা কম হয়নি। তবে বিষণœতা প্রতিরোধে সুন্দর ও সহায়ক পরিবেশের বিকল্প নেই। পরিবার, কর্মস্থলে সহকর্মী, স্কুল-কলেজ তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠী ও শিক্ষক এবং বন্ধু-বান্ধবের উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেলে বিষণœতাগ্রস্ত ব্যক্তি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হলে বিষণœতা থাকার কথা নয়। বিষণœতায় আক্রান্ত ব্যক্তির বিষণœতার কারণ খুঁজে যথাযথ প্রতিকার দেয়া গেলে বিষণœতা থেকে মুক্ত রাখা যায়। এছাড়া, সুষম ও ঝুঁকিমুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যয়াম, ধর্মকর্ম এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মানব কল্যাণের জন্য মন মানসিকতা গড়ে তুলতে পারলে বিষণœতা প্রতিরোধ করা যায়।
যে কোন দেশে যুব সমাজ একটি বড় সম্পদ। কিন্তু তাদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বিশ্বে আজ বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ। মাদকের ব্যবহারের কারণে বিশ্বে বৃহৎ জনগোষ্ঠী তথা যুব সমাজ ধবংসে নিপতিত হচ্ছে। যুব সমাজকে তামাক, ধূমপান এবং মাদকের ব্যবহার থেকে মুক্ত রাখার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো এক জোট হয়ে কাজ করছে। প্রতিবছর ৩১ মে পালিত হয় বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস এবং ২৬ জুন পালিত হয় বিশ্ব মাদক মুক্ত দিবস। সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার মাধ্যমে তামাক ও মাদকের ব্যবহার প্রতিরোধে কাজ করে। যুব সমাজ যাতে মাদকের আসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ে সে দিকে পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তি যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মাদক এবং এর প্রভাবজনিত বিভিন্ন রোগ ও বিষণœতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি ও কৌশল বাস্তবায়ন করে বিষণœতামুক্ত সুস্থ ও দক্ষ যুব শক্তি গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং দক্ষ যুব শক্তি গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যুব সমাজকে দক্ষ ও শিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তামাক, ধূমপান এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়া লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির সুফলও দৃশ্যমান। তথ্য-প্রযুক্তিতেও আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা ও গণস্বাক্ষরতার হারও বেড়েছে। প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও মাথা পিছু আয় বাড়ার কারণে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে গণমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা কার্যক্রম মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুযোগ-সুবিধা সকল স্তরের জনগণ ভোগ করেছেন। এসব জীবনমানের উন্নয়নমূলক গৃহীত পদক্ষেপ একটি সুস্থ ও শক্তিশালী জনসম্পদ গড়তে সহায়ক হবে। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে বিষণœতামুক্ত দক্ষ ও সুস্থ যুব সমাজ গড়ার জন্য তামাক ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও নাগরিক সমাজ যার যার অবস্থান হতে এগিয়ে আসলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে।
লেখক : ব্যাংকার ও নির্বাহী সচিব, আধূনিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন