Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে হুমকি ও বিপদে ফেলবে না

সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে কোনো হুমকিতেই ফেলবে না, বিপদেও ফেলবে না। বরং এর মাধ্যমে আমাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নততর প্রশিক্ষণের সুযোগের সৃষ্টি হবে।
গতকাল  (সোমবার) দুপুরে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তায় পানি নেই দাবি করে কয়েকটি  ছোট নদীর পানি বণ্টনের যে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন, বাংলাদেশ তা আমলে নেয়নি। মমতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, তার প্রস্তাব আমাদের আমলে নেয়ার দরকার নেই। তিস্তা তিস্তাই, তিস্তার পানি বণ্টন করার জন্য আরেকটি নদীর কোথায় কী হবে,  সেটা এখানে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রেসিডেন্ট ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তার বিষয়টি তিনি  শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে বলেছেন।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে হাসানুল হক ইনু বলেন, যারা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি, তাদের উদ্দেশে বলবÑ প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে সাইবার নিরাপত্তা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও ঋণসহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব চুক্তি হয়েছে; এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরো একধাপ অগ্রগতি হলো। তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চলমান ভারত সফর ও ভারতের সাথে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিরাচরিত ঢালাও বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে তিনি চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত নন, এমনকি চুক্তির শিরোনামগুলোও পড়ে দেখেননি। কোন চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘিœত হলো বা কোন চুক্তিতে দেশ বিক্রি হলো, তাও স্পষ্টীকরণ করতে পারেননি। তার বক্তব্যের জবাবে আমাদের বক্তব্য আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্যই আপনাদের এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের আমন্ত্রণে আপনারা এখানে উপস্থিত হওয়ায় আপনাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বহুল আলোচিত প্রতিরক্ষা খাতের ৩টি চুক্তির বিষয়ে আমি বলতে চাই, চীনের সাথে বাংলাদেশ-চীন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি-২০০২সহ রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ বিভিন্ন  দেশের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে ১০টি চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ তার শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সামরিক সরঞ্জাম কেনে চীন থেকে। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় আমাদের ক্রয়কে আরো বহুমুখী ও প্রতিযোগিতামূলক করা এবং নির্দিষ্ট কোনো নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার একটি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মান বৃদ্ধি পাবে, যুগোপযোগী চাহিদা পূরণ সহজ হবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাথে আগে থেকেই সামরিক ক্ষেত্রে  যৌথ মহড়া, যৌথ অনুশীলন, উচ্চ পর্যায়ে সফর, প্রতিরক্ষা কলেজগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, দুই বছর অন্তর প্রতিরক্ষা সংলাপসহ বিভিন্ন সহযোগিতা রয়েছে। চুক্তিগুলোর মাধ্যমে সহযোগিতার বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোকেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত রূপ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক একটি কাঠামোগত রূপমাত্র, নতুন বিষয় নয়।  ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে কোনো হুমকিতেই ফেলবে না, বিপদেও ফেলবে না। বরং এর মাধ্যমে আমাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নততর প্রশিক্ষণের সুযোগের সৃষ্টি হবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই ইসলামের নাম ব্যবহার করে ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে ভারত বিরোধিতার নেতিবাচক রাজনীতি চলছে। পাকিস্তান আমলের সেই বস্তাপচা রাজনীতি বেগম খালেদা জিয়া এখনও বহন করে চলছেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হবার আগে-পরে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হলে ফেনী পর্যন্ত ভারতের দখলে চলে যাবে’। চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক দিনের মধ্যেই বেগম জিয়া কয়েক শ’ গাড়ির বহর নিয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করে নিজেই প্রমাণ করেছিলেন তার দেয়া বক্তব্য মিথ্যা।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগেও বিএনপি-জামায়াত বলেছিল, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশের মসজিদগুলোতে আজানের বদলে উলুধ্বনি শোনা যাবে’। ‘ভারত দেশ দখল করে নিলো’, ‘ইসলাম গেল’ ইত্যাদি পাকিস্তানি বস্তাপচা রাজনীতির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে রাজনীতির অঙ্গন সাময়িকভাবে বিষাক্ত করা গেলেও সাধারণ মানুষ এসব মিথ্যাচারে আর বিভ্রান্ত হয় না, বিশ্বাস করে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ