Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নিয়োগ অবৈধ তবুও তিনি এমডি

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তালুকদার হারুন : নিয়োগ অবৈধ তবুও তিনি এমডি। পদের বিপরীতে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত নির্ধারিত তারিখের মধ্যেও তিনি এ পদের জন্য দরখাস্ত করেননি। আর এভাবে জালিয়াতি করেই ‘পল্লী দারিদ্র্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন’ (পিডিবিএফ) এর এমডির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন সাবেক ব্যবস্থাপক (কেন্দ্রীয় হিসাব) মদন মোহন সাহা। তার নিয়োগ নিয়ে এমন জালিয়াতির বাংলাদেশের কম্পট্টোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের একাধিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে (অডিট রিপোর্ট) উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার পরও পিডিবিএফের এমডি পদে বহাল রয়েছেন মদন মোহন সাহা।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কম্পট্টোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের একাধিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে পিডিবিএফে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কয়েকটি অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত অতিরিক্ত পরিচালক (আইটি) শহীদ হোসেন সেলিম, অতিরিক্ত পরিচালক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা আমিনুল হক এবং ভারপ্রাপ্ত এমডি মদন মোহন সাহা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত এমডি মদন মোহন সাহা সম্পর্কে অডিট রিপোর্টে মন্তব্য কলামে বলা হয়েছে, আবেদনকারী মদন মোহন নির্ধারিত সময়ে আবেদন না করায় ওই আবেদনপত্র বিবেচনার সুযোগ ছিল না।
এ কারণে তার নিয়োগ বেআইনি। অডিট রিপোর্টে সুপারিশ কলামে বলা হয়েছে, অবিলম্বে ওই নিয়োগ বাতিল, তার কাছ থেকে সব টাকা আদায় ও তাকে চাকরিচ্যুত করা হোক। নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক। অডিট রিপোর্টে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আমিনুল হক এবং শহীদ হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। শহীদ হোসেন সেলিম ব্যবস্থাপক (আইটি) ওই কর্মকর্তার কম্পিউটারের উপর অ্যাডভান্স কোনো ডিগ্রি না থাকায় তিনি আবেদনের যোগ্য ছিলেন না। ওই কর্মকর্তার বেতন নির্ধারণের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তিনি অভিজ্ঞতার যেসব বিবরণ প্রদর্শন করেছেন তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নথিতে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া আমিনুল হক (ফান্ড ম্যানেজমেন্ট) বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ওই কর্মকর্তার নেই। অভিজ্ঞতার স্বপক্ষে কোনো সনদপত্র তার নথিতে পাওয়া পায়নি। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত একত্রে দু’টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। যা বাস্তবে সম্ভব নয়। তিনি একসময় কৃষি ব্যাংকে চাকরি করতেন, কিন্তু ওই ব্যাংক থেকে কোনো ছাড়পত্র গ্রহণ করেননি। পিডিবিএফ সূত্রে জানা গেছে, নিরীক্ষা রিপোর্টগুলো সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। ওই বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, পিডিবিএফ নিয়ে অডিট রিপোর্টে বর্ণনা করা মন্তব্যের সঙ্গে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি একমত পোষণ করেছে। এসব অডিট রিপোর্টগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ) অডিটের মন্তব্য অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং গৃহীত পদক্ষেপ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে জানাবে। কিন্তু নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠান তথা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ বা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউÐেশন-পিডিবিএফ কর্তৃক আজ অবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, অডিট আপত্তিসমূহ প্রতিফলনের বিষয়ে পিডিবিএফ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উদ্যোগ গ্রহণেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ অডিট আপত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই ইতোপূর্বে এবং বর্তমানে পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে আসীন রয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মদন মোহন সাহা একজন। উল্লেখ্য, অডিট আপত্তিতে অভিযুক্ত কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে তাদের সমুদয় পাওনা পিডিবিএফ কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে পরিশোধ করেছেন।
পিডিবিএফের একটি সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানের সকল অন্যায়, অবিচার, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির হোতা পিডিবিএফের সাবেক ব্যস্থাপনা পরিচালক এ কিউ সিদ্দিকী। পিডিবিএফের দশটি অঞ্চলের জন্য গাড়ি ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয় ও নিয়োগ বাণিজ্য তার সময়েই সংঘটিত হয়েছে। তিনি ২০০১ সালে পিডিবিএফের ১০টি গাড়ি ক্রয়ে সাত লাখ টাকা বেশি মূল্যে ৭০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। তার কর্মকালীন সময়েই সকল অডিট আপত্তি সংঘটিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগসংক্রান্ত সব অনিয়ম হয়েছে সাবেক এমডি এ কিউ সিদ্দিকীর আমলে। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকেই পিডিবিএফের বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এমন সুস্পষ্ট নিদের্শনার পরও বিষয়টি সম্পর্কে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ বা পিডিবিএফ। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রæয়ারি বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবকে দেয়া এক চিঠিতে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের অগ্রগতি বা জবাব চাওয়া হয়েছে। তবে নানা ছুতোয় বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে পিডিবিএফ। উল্লেখযোগ্য অনিয়মের মাধ্যমে পিডিবিএফে যে ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। এসব অনিয়মগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অডিট রিপোর্টে এতসব অনিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারণে বাস্তবায়ন করছে না পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এ ক্ষেত্রে নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের এক শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পিডিবিএফে চলছে নানা কানাঘুঁষা। তবে রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় এনিয়ে কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলতে নারাজ।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মদন মোহন সাহা জানান, অবশ্যই আমি আবেদন করে নিয়োগ পেয়েছি। ১৮ বছর ধরে চাকরি করছি। আমিসহ অনেকের বিরুদ্ধে অতীতে অডিট আপত্তি হয়েছিল। ৪৫ জনকে চাকরিচ্যুত করার কথা বলা হয়েছিল। তাদের কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। ওই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সময় নিয়োগ নিয়ে কিছু ভুলক্রটি হয়তো হয়েছে। তাই কাগজপত্র এদিক-সেদিক থাকতে পারে। এটাকে আমি অস্বীকার করছি না। নিয়োগ অবৈধ নিয়ে তার বিরুদ্ধে অডিট রিপোর্টের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আছে কি না- এ প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।



 

Show all comments
  • রফিক ১২ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:১৫ এএম says : 0
    ওনার জালায় আমরা অস্হির, দয়া করে ওনার বিদায়ের একটু ব্যবস্হা করুন। সিবিএর নামে চাদা দিতে দিতে আমরা ফতুর।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ