পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে খুবির সুপারিশ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তার আহŸান
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : গত মাসের বৃষ্টি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বোরো আবাদে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্লাস্ট ছত্রাকে ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলের এক হাজার ২০০ হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ ক্ষেতেই শুকিয়ে গেছে। এরফলে আক্রান্ত এলাকায় ২০ শতাংশ উৎপাদন কম হবে। বোরো ক্ষেতে ব্লাস্স্টের মহামারি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবারই প্রথম।
গতকাল সোমবার দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একাডেমিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ধানে ব্লাস্ট রোগের মহামারি ও পরবর্তী করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে রোগাক্রান্ত মাঠে করণীয় ও সুপারিশ তুলে ধরেন কৃষিবীদরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সরকারিভাবে সহায়তার আহŸান জানিয়েছেন তারা। প্রসঙ্গÑ খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোর জেলায় তিন লাখ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। লিখিত বক্তব্যে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্লান্ট প্যাথলোজিস্ট প্রফেসর মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, বীজ, বাতাস ও পোকার আক্রমণে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে ধান। রোগাক্রান্ত মাঠের বীজতলা অথবা ক্ষেতে এ রোগ দেখা দিলে জমিতে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণ করতে হবে, আক্রান্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ৮০০ মিলিলিটার (বিঘা প্রতি এক শ’ মিলিলিটার) হিনোসান অথবা হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৫ কেজি (বিঘা প্রতি ৩০০ গ্রাম) বেনলেট বা টপসিন এম স্প্রে করতে কৃষককে নির্দেশনা দিয়েছে তিনি।
ব্লাস্ট রোগাক্রমণের পূর্বে পাঁচ দফা করণীয় উল্লেখ্য করে ভবিষ্যতে এই রোগ প্রতিরোধে তিনটি সুপারিশ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবীদরা। সুপারিশমালা হলোÑ কৃষকদের সময়মতো রোগের অনুক‚ল আবহাওয়া সম্পর্কে অবহিতকরণের ব্যবস্থা, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে আরো বেশি কৃষিবীদ ও ডিপ্লোমা কৃষিবীদ নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
কৃষি অফিসের সূত্রমতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্লাস্ট আক্রান্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, বাগেরহাটের কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ, সাতক্ষীরা জেলা সদর, আশাশুনি, কলারোয়া, নড়াইল জেলা সদর, কালিয়া, লোহাগড়া, যশোরের অভয়নগর ও কেশবপুর।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, বিরি-৬১, বিরি-৬৮ নামক উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো আবাদে ব্লাস্ট নামক ছত্রাক আক্রমণ করেছে। মার্চে বৃষ্টির কারণে রাতের তাপমাত্রা কম এবং মাছের ঘেরের নিচু জমিতে উর্বরতা বেশি থাকায় ব্লাস্ট নামক ছত্রাক বিস্তার লাভ করে। কৃষকরা নাটিভো এডিফেন, এমিস্টারটপ, ট্রোপার নামক ছত্রাকনাশক দিয়ে রোগ দমন করেন। উল্লিখিত উপজেলাগুলোতে ৭২০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস জানান, গত সপ্তাহ থেকে বøাস্ট দমন করা সম্ভব হয়েছে। তবে আক্রান্ত জমিতে উৎপাদন কম হবে।
এই অধিদপ্তরের নড়াইলের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, গত বছর গম বøাস্টে আক্রান্ত হয়। এ বছর তিন উপজেলায় ৮৪ হেক্টর জমি ব্লাস্ট আক্রমণ করে। নাটিভো নামক ছত্রাক নাশক দিয়ে তা দমন করা সম্ভব হয়েছে।
খুবির এটি ডিসিপ্লিনের কৃষিবীদরা জানান, অনুক‚ল আবহাওয়ার কারণে এবার বোরো ধানের ব্লাস্ট রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটে, প্রথমদিকে কৃষকরা তা বুঝে উঠতে পারেননি। ব্রি-ধান ৬১ থেকেই রোগের উৎপত্তি। এ জাতটি প্রত্যাহার অথবা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চাষ করার পরামার্শ দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে সহায়তাদানের আহŸান এবং রোগ সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তারা।
খুুবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ প্রশাসন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশীর আহমেদ। পাওয়ার পয়েন্টে ব্লাস্ট রোগের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক উদ্ভিদ রোগতত্ত¡বিদ প্রফেসর মো. রেজাউল ইসলাম। ব্লাস্ট রোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী, ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশীর আহমেদ এবং প্রফসের মো. রেজাউল ইসলাম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্র্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মো. ইয়াছিন আলী, প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মাহতালাত আহমেদ, প্রফেসর ড. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খান, মোসা. সাবিহা সুলতানাসহ সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ব্লাস্ট রোগের কারণ সম্পর্কে বলা হয়, এক ধরনের ছত্রাক পাইরিকুলারিয়া অরাইজি’র কারণে রোগ বীজ, বাতাস ও পোকার বাহনে এবং বিশেষ করে অনুক‚ল আবহাওয়ার কারণে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ দ্রুত বিস্তার ঘটে। এবারই ব্যাপকভাবে এ রোগের হঠাৎ করে বিস্তার ঘটায় প্রথমদিকে কৃষক বুঝে উঠতে পারেননি। তারা ভেবেছিলেন, কোনো পোকার আক্রমণ। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের ফলে এ রোগ শনাক্ত হয় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে অনেকটা কাজ হয়েছে। তারা যেসমস্ত ছত্রাকনাশক ওষুধের পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়মমাফিক ব্যবহারের ফলে অনেক কৃষক উপকার পেয়েছেন। তবে কৃষকরা এ ব্যাপারে একটু গড়িমসি করায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
রোগ আক্রমণের আগে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত লাগানো- বোরো মৌসুমে বিআর-৩, বিআর-১৪, বিআর-১৬ ও ব্রি ধান-৪৫, আউশ মৌসুমে বিআর-৩, বিআর-১৫, বিআর-২০, বিআর-২১, ব্রি ধান-৪৩; আমন মৌসুমে বিআর-৫, বিআর-১০, ব্রি ধান-৩২, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৪৪ লাগানো। সুস্থ বীজের ব্যবহার; পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা- আক্রান্ত জমির খড়কুঁটা পুড়িয়ে ফেলা এবং ছাই জমিতে মিশিয়ে দেয়া। বিজ শোধন- থায়োফানেট মিথাইল নামক কার্যকরি উপাদান বিশিষ্ট ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে বীজ শোধিত হয়। এই শোধিত বীজ লাগালে বীজতলায় চারা অবস্থায় পাতা ব্লাস্ট কম হবে। সুষম সার প্রয়োগ- সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা এবং আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ রাখা। পটাশিয়ামের অভাবযুক্ত জমিতে পর্যাপ্ত পটাশ সার অথবা আমাদের দেশের কৃষকের প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী ছাই ব্যবহার করা যায়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।