Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগামী পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকতে দেশ বিক্রি করেছে : খালেদা জিয়া

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১:২০ এএম

আমরা শৃঙ্খলিত হবো না, হতে দেবো না \ আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই
স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয় বলেছেন, আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান সরকার ‘দেশ বিক্রি’ করে দিয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কারো গোলামি করার জন্য নয়, কারো শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। আমরা শৃঙ্খলিত হবো না, হতে দেবো না। সম্মানের সহিত বাঁচতে আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই। গতরাতে গুলশানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব  কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে সরকার যাদেরকে বলা হয়, তারা আসলে জনগণের সরকার নয়, তারা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয়। ভবিষ্যতেও তারা একই পরিকল্পনা করছে কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসবে। আজকে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য পাঁচ বছরের জন্য এটা একটা চুক্তি করেছে। কী পাঁচ বছর তাকে থাকতে দিতে হবে। এই চুক্তি তো তিনি সেজন্য করলেন। ওই পাঁচ বছর পরে উনারা বোধহয় কাগজে কলমে দেশটাকে লিখে দিয়ে মনে হয় বিদায় নেবে আর কী?
কীভাবে আগামী পাঁচ বছর থাকবে প্রশ্নের বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কীভাবে তারা পাঁচ বছর থাকবে? ভোট হবে না। এই চুরি-চামারি করে, নানা রকম পুলিশকে দিয়ে, ছাত্রলীগ-গুÐালীগ তাদের সবার হাতে হাতে তো অস্ত্র আছেই, তাদেরকে নিয়ে সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন যারা আছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে এই নির্বাচনে জিতে। তারা নির্বাচনে জিতে না ওদেরকে জিতানো হয়, ওই নিয়ে তারা সন্তুষ্টি।  
জঙ্গিও প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে এটা শুধু এদের (আওয়ামী লীগ) নয়, আরো অনেকের মহাপরিকল্পনা যে বাংলাদেশের মানুষকে ঠুঁটো বানিয়ে রাখতে হবে, মূর্খ, অকেজো, দুর্বল বানিয়ে রাখতে হবে। সেজন্য আপনাদের মতো শিক্ষিত বিবেকবানদের জাগতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে এর থেকে রেহাই পাবো না। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কারো গোলামী করার জন্য নয়, কারো শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। আমরা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছে, এতো লোক মৃত্যুবরণ করেছে তাদের রুহু শান্তি পাচ্ছে না এদের এই গোলামীর শৃঙ্খলের জন্য। আমরা শৃঙ্খলিত হবো না, হতে দেবো না।
নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরমধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এগুলো হলো- ‘বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা’ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, ‘কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের ওয়েলিংটনে (নিলগিরি) ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়া দিল্লি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘নিরপেক্ষ’ নন অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, তিনি নিরপেক্ষ নন, তার কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। সর্বশেষ কুমিল্লায় নির্বাচন হলো, সেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। তিনি নিরপেক্ষ হলে কুমিল্লায় আমরা ৫০ হাজার ভোটে জিততাম, সেখানে কেটে কেটে ক্ষমতাসীনরা ব্যবধান কমিয়েছে। তিনি (সিইসি) আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার পথই অনুসরণ করে চলেছেন। এর বাইরে কিন্তু তিনি যাচ্ছে না।
রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের কার্যালয়ে সদ্য সমাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও পুনর্নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ বিজয়ী কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ চেয়ারপার্সনের হাতে পুস্পস্তবক তুলে দেন।
গত ২২ ও ২৩ মার্চে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল সভাপতি-সম্পাদকসহ ৮টি পদে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ প্যানেল সহ-সভাপতি, সহ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ৬টি পদ পায়।
 
ক্ষমতাসীনদের সাথে জামায়াতের সখ্যতা প্রসঙ্গ টেনে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদের সাথে আতাঁত করে আওয়ামী লীগ ’৮৬ সালে নির্বাচনে গিয়েছিল। আমরা যাইনি। তারা (আওয়ামী লীগ) তখন সঙ্গি খুঁজে পায় না। একলা গেলে খারাপ দেখায়, সেজন্য জামায়াতে ইসলামকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে গেলো। এখন জামায়াতে ইসলাম রাজাকার খারাপ। তখন কিন্তু নিজামী সাহেবের (মতিউর রহমান নিজামী) সাথে মিটিং-টিটিংয়ের ফটো-টোটোগুলো আছে, মওদুদ সাহেবেও সাক্ষী আছে।
এ সময়ে আইনজীবীদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার ঠিক পেছনের আসনে বসা মওদুদ আহমেদ দলের চেয়ারপারসনের কাছে এসে স্বল্প কন্ঠে বললেন, ম্যাডাম আমি তো গিয়েছিলাম। ছবি আছে।  
খালেদা জিয়া বলেন, হয়ত আপনি (মওদুদ আহমদ) মাইন্ড সেট করে রেখেছিলেন, বিএনপিতে আসবেন। একটা রেকর্ড রেখেছিলেন। ওই সব ছবিতে তারা কিভাবে মিটিং করছেন, কেউ সালাম করছেন, কেউ ঝুঁকে সালাম করছেন, নানা রকমের অঙ্গভঙ্গি ছবি আছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সখ্যতা কাদের বেশি ছিল? তাদের ছিল। এখনো আছে, এখনো বন্ধুত্ব ঠিকই আছে। বিএনপিকে হারানো জন্য তারা সময়মত ব্যবহার করে।
২০০৮ সালে নির্বাচনে ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচনেও অংশ নেয়ার ব্যাপারে তার আপত্তি থাকার কথা উলে­খ করে খালেদা জিয়া বলেন, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও নেতাদের মুক্তির শর্তে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। নির্বাচনে যাওয়াটার ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যারা ছিল তারা খুব বেশি আগ্রহী ছিল, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে। তারা বললো, নির্বাচনে যেতেই হবে, নির্বাচনে না গেলে ক্ষতি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন তাদের কথা শুনে আমরা নির্বাচনে গেলাম। সেই নির্বাচনে যে ফলাফল বিএনপির এটা কখনোই হতে পারে না। বিএনপিকে হিসাব করে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে এতো সিট দেবে। এই সরকারকে বিদায় করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহবানও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এরা ক্ষমতায় এসেছে। আজকে ১০ বছর হতে চলেছে। দেশের কী অবস্থা, অর্থনীতির কী অবস্থা। ব্যাংকগুলো ফাঁকা করে দিয়েছে। কাজেই দেশ একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সেজন্য আমরা মনে করি, বাইরে যারা আছেন, দেশকে ভালোবাসেন বুদ্ধিজীবীসহ অন্যরা, হকাররা, আসুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করি, দেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাঁচাই। দেশটা বাঁচলে আপনারা বাঁচবেন, সন্মানের সাথে বাঁচবেন।
ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এজে মোহাম্মদ আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা বারের মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • এস, আনোয়ার ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:৪৪ এএম says : 0
    আপনের চৌদ্দ আনা জনবল থাকতে আপনে বইসা আছেন ক্যান.? দেশ বেইচ্চা ফালাইছে, বেইচ্চা ফালইছে বইল্লা আর কাবা কাবা না কইরা কিচ্ছু এক খান করেন। পাঁচ বছরের লাইগ্গা বেচছে তো কি অইছে আপনে পঞ্চাশ বছরের লাইগ্গা কিন্না লন। আর বইসা থাকনের সমায় নাইক্কা। জলদি রাস্তায় নামেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ruhul ami ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:১২ পিএম says : 0
    right
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:১৮ পিএম says : 0
    মাননীয় দেশ নেত্রী, আপনি কি মনে করেন ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ভারতের ভূমিকা আছে? আপনাদের দুই নেত্রীর কথা অনুযায়ী তা ই মনে হচ্ছে। তা হলে ত ভারতকে খুশি রেখে ই চলতে হবে। যে বা যার দল ভারতকে বেশী খুশি করতে পারবে সে বা তার দল ক্ষমতায় আসিন হবে। এমন জেনে ও ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রনব বাবুকে আপনি সন্মান দেখালেন না। একজন অবুজ শিশু ও মনে হয় এমন ভুল করবে না। হয়ত বলবেন উপদেষ্টারা ভুল করছে। আমি বলছি, ভুল আপনার। কেননা, ভাত খাওয়ার লোকমা দিতে উপদেষ্টা লাগে না, নিজ জ্ঞানে লোকমা দিতে হয়। শুধু কি তাই। ভোটারবিহীন সরকার ভোট খেলা খেলালো, আপনি চুপ করে ঘুমাইলেন। এক বৎসর পর, ঘুম ভাঙ্গলো। এর মাঝে সরকার তার নিজ লোক বিভিন্ন জাগায় বসায়ে শক্ত হয়ে বসলো। চুখ মুছতে মুছতে আন্দোলনে আসলেন, সরকার ইচ্ছা মত দমন করলো। আপনার দলের সকলকে মামলা মোকদ্দমায় জড়ায়া দিল। ভুল সুধরে নিন। জনগণ আপনার সাথে আছে। হয়ত একদিন সাফল্য আসবে। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ