পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রত্মতত্ত¡-পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ কিছু জানে না : উদাসীন প্রশাসন, পুলিশ
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে :প্রত্মতত্ত¡ অধিদপ্তরের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত বগুড়ার ঐতিহাসিক নবাব প্যালেসের কেন্দ্রে অবস্থিত শতায়ুবর্ষি দুর্লভ প্রজাতির জয়তুন গাছটি কেটে ফেলা হলো প্রত্মতত্ত¡ অধিদপ্তরের অজান্তেই। বগুড়ার বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরও বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানে না। ঘটনাটি জানাজানির পর বগুড়ার ঐতিহ্য সচেতন সর্বস্তরের মানুষের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণের। রোববার সকালের দিকে দিকে প্যালেসের ভেতরের শতবর্ষি জয়তুন গাছটি কেটে ফেলা হচ্ছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়লে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে পান। কারা কেন দুর্লভ প্রজাতির এই গাছটি কাটছে তা’ জানতে চাইলে প্যালেসের ম্যানেজার দাবিদার জাহেদুল ইসলাম লজে বলেন, এটা একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি। বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মিলন, আলহাজ আব্দুল গফুর ও শফিকুল হাসান জুয়েল ক্রয়সূত্রে এই প্যালেসের মালিক। আমি তাদের নিয়োজিত ম্যানেজার হিসেবে গাছ কাটার অর্ডার দিয়েছি। মালিকদের সম্পত্তির সুরক্ষা ও কর্তৃত্বের প্রমাণের জন্যও গাছটি কাটা হচ্ছে বলে তিনি দম্ভোক্তি করেন।
অন্যদিকে সরকারি গেজেট অনুযায়ী প্যালেসটি সংরক্ষিত বলে ঘোষিত হওয়ায় গাছ কাটার খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের একজন ফিল্ড ইন্সপেক্টর হাসিবুল হাসান প্যালেসের ভেতরে যান। তার সামনেই গাছ কাটার চলমান থাকলেও তিনি তা বন্ধ করার চেষ্টা করেননি। মিডিয়াকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এই গাছ কাটার আইনত কোনো সুযোগই নেই। তারপরও আমি যা দেখলাম, তার লিখিত বিবরণ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করব। বাকিটা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
মিডিয়াকর্মীরা ফোনে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি তাকে জানায়নি কেউ। আবার কাউকে বলেন, প্যালেসের সুরক্ষার জন্য জয়তুন গাছের দু’-একটি ডাল কাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই শুধু ডাল কাটার মৌখিক অনুমতি দিয়েছি, গাছ কাটার নয়।’
বগুড়ার জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সরকারিভাবে এই প্যালেসটির সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় নিয়মিত যে মূল্যবান ও দুর্লভ প্রত্মসম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে নীলকুঠি হিসেবে নির্মিত দুই শতাধিক বছর বয়সী এই প্যালেসটি নিলামে কিনে নেন বগুড়ার নবাব আব্দুস সোবহান চৌধুরী। ১৮৯২ সালে তৎকালীন বাংলার ছোট লাট চার্লস ইলিয়ট ‘আব্দুস সোবহান চৌধুরীকে’ নবাব খেতাব দেয়া উপলক্ষ্যে নিজ হাতে গাছটি রোপন করেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশে জয়তুন গাছের সংখ্যা দুই-তিনটির বেশি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ আলী (বগুড়া) এই প্যালেসেরই মোতয়াল্লি ছিলেন। তার অবর্তমানে ওয়াকফ’ এ লিল্লাহকৃত এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি তার বৈমাত্রেয় ভাই ওমর আলী চৌধুরী এবং দুই পুত্র সৈয়দ হাম্মাদ আলী ও হামদে আলী বেকারত্ম্য ও দারিদ্র্যের কবলে পড়ে বেআইনি প্রক্রিয়ায় এটি দফায় দফায় বিক্রি করে দেন। গত বছর বগুড়ায় স্থানীয়ভাবে এই প্যালেস রক্ষায় ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠলে সরকার এটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।