Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ওবামা ৬ বছরে যা পারেননি একটি মাত্র পদক্ষেপে তার চেয়ে বেশী করেছেন ট্রাম্প

সিরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি টেলিগ্রাফ : ৪ এপ্রিল সিরিয়ার খান শেইখুনে রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালানো হয়। এমন নয় যে সিরিয়া যুদ্ধে এই প্রথম গ্যাস হামলা চালানো হল, এমন নয় যে এটাই শেষ গ্যাস হামলা। ২০১৩ সালে ঘুটাতে বিষাক্ত গ্যাস হামলার পর তার ঘোষিত রেডলাইন বলবত করতে অনিচ্ছুক বারাক ওবামা সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কংগ্রেসের অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হন।
ওবামা ও জাতিসংঘ বাশার আল আসাদের সিরীয় প্রতিদিন জনগণকে হত্যা থামাতে ব্যর্থ হন। তাদের শূন্য বাগাড়ম্বরের পর নৃশংসতার মর্মান্তিক আবর্ত ভেঙ্গে ফেলতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে অপছন্দের প্রার্থী ট্রাম্প নেতৃত্ব শূন্যতা দূর করতে এগিয়ে এসেছেন। ওবামা ৬ বছরে যা পারেননি ট্রাম্প একটি মাত্র পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বেশী করেছেন।
৭ এপ্রিলে সিরিয়ার শায়রাত বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালিয়ে যে পার পাওয়া যাবে না তারই ইঙ্গিত। শুধু এ হামলাতে সিরিয়া যুদ্ধের অবসান হবে না। তবে তা এ আশার সৃষ্টি করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ হত্যাকাÐ থামাতে কাজ করবে।
ট্রাম্পকে মনে রাখতে হবে যে এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এবং জাতিসংঘের সমর্থন থাক বা নাই থাক, সিরিয়াতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বলবত করতে হবে। সিরিয়ার উপর একটি নো ফ্লাই জোন দেশের অভ্যন্তরে জনগণকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সামাজিক মাধ্যম ইতোমধ্যেই যেমনটি বলেছে, এ পদক্ষেপ বিরোধী বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর জনগণের সমর্থন পেতে পারে।
যারা দেশটি থেকে পালিয়েছে তারা এনজিওগুলোর কাছে বলেছে যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নয়, সিরীয় ও রুশ জঙ্গি বিমানের নির্বিচার বোমাবর্ষণই হচ্ছে তাদের দেশত্যাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বোমাবর্ষণ বন্ধ হলে তা এ সকল লোকদের কিছু অংশকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফিরে আসার পথ খুলে দেবে।
এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে কাজ করা দরকার নেই। পাশ্চাত্য ও আঞ্চলিক মিত্রদের জোট এ ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারে। তুরস্ক, সউদী আরব, জর্দান, ফ্রান্স ও জাপান দ্রæত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে সমর্থন জানিয়েছে। ফ্রান্স আরেকটু এগিয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করতে সহযোগিতা করার কথা বলেছে যা আসাদের জন্য একটি প্রকৃত হুমকি হতে পারে। সিরিয়ার বেলায় বাগাড়ম্বর হল সস্তা এবং সামরিক ব্যবস্থা ছাড়া আসাদকে নিয়ে কোনো কথাবার্তা কাজে আসে না।
ট্রাম্পের প্রতি অদূরদর্শিতার অভিযোগ প্রশাসনের সাথে তার সম্পূর্ণ নৈকট্যের অভাবকেই প্রদর্শন করে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তার ঘনিষ্ঠতম দু’জন পরামর্শদাতা হলেন ডেরেক হার্ভে ও জোয়েল রেবার্ন যারা সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ও ইরাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ অঞ্চলের ব্যাপারে তাদের ভালো ধারণা রয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের যেখানে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের অভাব থাকে, তাদের ক্ষেত্রে তা নেই।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) এইচ আর ম্যাকমাস্টার উভয়েই অতিমাত্রায় যুদ্ধপাগল হলে তার মাশুল দেয়ার বিষয়টি জানেন। যখন সর্বাপেক্ষা মৌলিক আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লংঘিত হবে তখনি শুধু তারা ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী। ৭ এপ্রিলের সকালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সম্পর্কে ম্যাকমাস্টার দাবি করেন যে ঐ বিমান ঘাঁটির রুশ সৈন্যরা যাতে হামলার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এ থেকে বোঝা যায় যে তারা রাশিয়ার সাথে সংঘাতের বিস্তৃতি না ঘটাতে সচেতন এবং সে কারণে পূর্ব সতর্কতা গ্রহণ করেন।
ওবামার আমলে ব্যাপার ছিল অন্যরকম। সিআইএ ও পেন্টাগন বাশারবিরোধী বিদ্রোহীদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় ছিল না যা পরে এক প্রহসনে পরিণত হয়।
শায়রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ২০১২ সালের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কিছু যুক্তিকে ইতোমধ্যে বাতিল করেছে। তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ এখনো শুরু হয়নি এবং সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দিতে অক্ষম ছিল বা আগ্রহী ছিল না। তারা দেখিয়েছে যে আসাদ সরকারকে বিচ্ছিন্ন করে শাস্তি দেয়া যায়।
নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ে আমি হতাশ হয়েছি, আমি যে মূল্যবোধকে ধারণ করি তার সাথে তার নেতৃত্ব মেলে না। কিন্তু আসাদের বিরুদ্ধে হামলার বিষয়ে তিনি এ উপলব্ধির পরিচয় দিয়েছেন যে এ স্বৈরশাসক সিরিয়ার যুদ্ধের মূল কারণ এবং তিনি এ মূল কারণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয়েছেন যা তার পূর্বসূরী করেননি। নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার নিন্দা ও বক্তৃতা সিরীয়দের প্রাণ রক্ষা করে না যা গত ছয় বছরে প্রমাণিত হয়েছে। আসাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা।
আসাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নেয়া ব্যবস্থা একুশ শতকে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে এক নয়া অধ্যায় রচনা করতে পারে, তা হল আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে ও তা বলবত করতে হবে। এদিকে ট্রাম্পের সবচেয়ে কঠোর বিরোধীরাও তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবেন ও স্বীকার করবেন যে তিনি সঠিক লক্ষ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েেেছন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ