Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চুক্তির ভেড়াজালে ফেলে বন্ধুত্ব পাবেন না ঘৃণা বাড়বে - ভারতের প্রতি গয়েশ্বর রায়

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক ‘সর্বোচ্চ শিখরে’ হওয়ার পরও কেন এত চুক্তি -এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গতকাল দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এই প্রশ্ন তুলে বলেন, এখন বলা হচ্ছে, মিডিয়ার ভাষায় ভারতের সাথে বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ, হিমালয়ের চ‚ড়াও আরো উপরে, এত উচ্চতাসম্পন্ন, এতো মানসম্পন্ন বন্ধুত্বের মধ্যে অবিশ্বাস না থাকলে এত এত চুক্তি লিখতে হয় কেন, স্বাক্ষর করতে হয় কেন? তিনি বলেন, ভারতকে ভাবতে হবে- যেমন একটি সংসার, একটি দাম্পত্য জীবন কাবিন দিয়ে নিশ্চিত করা যায় না। ঠিক বন্ধুত্বটাও কখনো শুধু চুক্তি দিয়ে নিশ্চিত করা যায় না। আমি ভারতবাসীকে বলব, চুক্তির বেড়াজ্বালে ফেলে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পাবেন না। দিনের পর দিন এটা ঘৃণা বাড়বে। এই ঘৃণা একদিন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো ফেটে পড়ে, ধ্বংস দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হায়দ্রাবাদ হাউজে গত শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক ৩টি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে ‘জাতির মুক্তির সনদ-১৯ দফা, জাতীয় সম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাক’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সদ্য সম্পাদিত প্রতিরক্ষাবিষয়ক ৩টি সমঝোতা স্মারকের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা মনে করি, এটি ভারতের নিরাপত্তা চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চুক্তির হয়নি। ভারত তার ভ‚-খÐকে নিরাপদ করার জন্য অন্যান্য বড় বড় শক্তির সাথে যদি কখনো তার যুদ্ধের প্রয়োজন হয়, তখন তারা বাংলাদেশটাকে ভারতের একটি অংশ হিসেবে যাতে অবাধে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য তাদের এই নিরাপত্তা চুক্তি। এছাড়া আর কিছুই না।
সার্বভৌমত্বের কথা যদি বলেন। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, সেই দেশের তিনদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে বৃহত্তম রাষ্ট্র, এটা কী আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান? নিশ্চয়ই না।

ভারত থেকে অস্ত্র ক্রয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ফেলানীর লাশ পড়ে থাকে তাতে ভারতে কিছু যায় আসে না। কারণ, আমরা পণ করেছি আমরা গুলি ছুড়ব না কিন্তু বিএসএফ গুলি ছুড়বে নাÑ এই অঙ্গীকার তারা করেনি। গুলি চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে। সুতরাং তাদের অস্ত্র প্রয়োজন, তারা বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করে। আর আমি সীমান্তে গুলি ছুড়ব না, আমি মিয়ানমারের সীমান্তে গুলি ছুড়ব না, ভারতের দিকে গুলি ছোড়া তো দূরের কথা তাদের বন্দুকও দেখানোর ক্ষমতা নেই। তাহলে আমি প্রশ্ন করতে চাই, আমাদের অস্ত্র কিসের প্রয়োজন? আমি এই অস্ত্র দিয়ে কী করব? যে টাকা দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করব সেই অর্থ যদি সামরিক বাহিনীকে দেয়া হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে ভালো থাকতে পারবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাংবাদিকরা লিখেছেনÑ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত বিরাট সম্মান দিছে। আরে ভাই, ব্যক্তিগতভাবে সম্মান দিছে না রাষ্ট্রকে দিছেÑ এটা আপনাকে বুঝতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে যদি একটা সামান্য কুঁড়েঘরের রাখার পরও তিস্তা পানির নিশ্চয়তা যদি ভারত নিশ্চিত করত, সেটা হতো বাংলাদেশের জন্য সম্মান।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধটা আমরা করেছি, আমাদের দেশটা স্বাধীন করার জন্য এবং আমাদের মা-বোনদের সম্মান গেছে, আমাদের ভাইরা রক্ত দিছে, জীবন দিছে এবং পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছে। আজকে যদি ভারত আমাদের সাথে বন্ধুত্বের নামে এই ধরনের প্রভুত্বগিরি না দেখানোর চেষ্টা করত, তাহলে অকৃত্রিম ভালোবাসায় এই দুই দেশ থাকবেÑ এটা স্বাভাবিক ছিল এবং একাত্তরে আমাদের সহযোগী হিসেবে তারা সবসময় আমাদের কাছ থেকে ধন্যবাদ পাবে এটাই স্বাভাবিক। একাত্তরে এই কৃতজ্ঞতাটা যদি চুক্তি করে নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, তাদের ইচ্ছার মধ্যে কোনো ক‚ট-কৌশল ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, পত্রিকা পড়ে যা বুঝলাম, তাতে অনেক সম্মান দিয়েছে। ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এতো সম্মান দিয়ে যদি হাতে চুড়ি পরিয়ে দেয়, তখন এই চুড়ির অবস্থাটা কি হয়? সেজন্য বলছি, ভারত-বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব হয় না এবং শেখ হাসিনা ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু না।
চুক্তি এবং কথাবার্তার দৃষ্টিতে মনে হয়, একজন খুব ‘ওভিডিয়েন্ট’ দাসীর ভূমিকায় থাকতে পারে অর্থাৎ ভারতকে সেবা করার তুষ্ট করার জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করবে, দেশটাকে বিপন্ন করবে শুধু একটি ক্ষমতার লোভে।
১/১১-এর থেকে এই সময় পর্যন্ত প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর অভিযোগ করে বলেন, ভারত এক দশক ধরে ডিসাইড করতে শুরু করেছে, বাংলাদেশের কে সরকার হবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবে। শুধু তাই নয়, এখন আপনারা যদি সচিবালয়ে যান, আপনাদের জাতীয় প্রেস ক্লাবেরও মনে হয় আসে বহুত ইন্ডিয়ান বাংলাভাষী, অন্যভাষীরা আসেন। দাদা ভালো আছেন, একটু কাজ-কর্ম দেন না। একটু সেতুমন্ত্রীর কাছে ঠিক করাইয়া দেব নে। অর্থাৎ ভারতীয় লোকরা এখানে এসে বিভিন্ন তয়-তদ্বীর করে, পোস্টিং-ট্রান্সফার-ব্যবসা-বাণিজ্য। লোকে বলে যে, প্রণব মুখার্জীর (ভারতের প্রেসিডেন্ট) ছেলে অভিজিৎ মুখার্জীও মাঝে-মধ্যে আসে এই ধরনের প্রমোট করতে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য। এটা ইন্ডিয়ান পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে, বিভিন্নভাবে শোনা। আমরা কোথায় আছি? দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸানও জানান তিনি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, টেরিটোরিয়াল যে সভরেনিটিটা, এই সার্বভৌমত্বটা গতকালকে (শনিবার) ভারতের জিম্মায় দিয়ে দিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীÑ এর চাইতে দুঃখজনক কিছু থাকতে পারে না। সবচেয়ে অবাক কাÐ, এই ধরনের একটা দেশ বিক্রি চুক্তি করার আগে তারা কিন্তু সামনের দিকে ‘হাওয়াই মিঠাই’য়ের মতো তিস্তা চুক্তির কথা বলত। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন আসেন, সেটি দেখিছিÑ তিস্তা চুক্তি হবে হবে, এরপর দুইদিন আগে বলা হলো এটাকে সরিয়ে রাখো।
এবারো প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফরের সময়ে এই তিস্তা চুক্তি হবে, শেষ মুহূর্তে হতেও পারেÑ এরকম নানা সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। এরপর দেখা গেলো তিস্তা চুক্তি হয়নি, প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। আমাদের বাঁচা-মরা এখন ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’তে পরিণত হতে যাচ্ছে। এজন্য কী আমরা একাত্তর সালে জীবন উজাড় করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে, পিন্ডির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিল্লির নিখড়ে বাঁধার জন্য কী যুদ্ধ করেছি?
ক্ষমতাসীন সরকার এহেন সমঝোতা করে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবিরের পরিচালনায় আলোচনা সভায় যুগ্ম মহাসচিব হারুন-অর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, বিএনপির রমেশ চন্দ্র দত্ত, দেবাশীষ মধু, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ