পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামুনুর রশীদ মামুন, সিলেট থেকে : সিলেটের সাড়ে ১১ লাখ কৃষক পরিবারে চলছে হাহাকার, ফসল হারানোর মাতম। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় কষ্টার্জিত বোরো ধান হারিয়ে উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত তারা। দু’দিন ধরে বৃষ্টিপাত কিছুটা থামলেও পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসল ঘরে তোলার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কৃষি অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আগাম বন্যায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় অন্তত দুই লাখ ১৪ হাজার ১২ হেক্টর বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ফসলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় সাড়ে ১১ লাখ কৃষক। আগাম বন্যায় এ অঞ্চলে কত টাকার ফসলহানি হয়েছেÑ এমন তথ্য কৃষি অধিদপ্তর গতকাল শনিবার পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ চলছে। দু’একদিনের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে।
তবে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, আগাম বন্যায় শনিবার পর্যন্ত বোরো ফসলহানি দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, এবার সিলেট বিভাগের চার জেলায় চার লাখ ৫৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৭৬ হাজার ৮৩৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৫০ হাজার ৪৬৪ হেক্টর, হবিগঞ্জে এক লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ হেক্টর, সুনামগঞ্জ দুই লাখ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর। তিনি জানান, সিলেট বিভাগে বোরো চাষ করেছেন এমন কৃষকের সংখ্যা ১১ লাখ ৮১ হাজার ১১৩ জন। এর মধ্যে সিলেটে তিন লাখ ২৮ হাজার ৬৪ জন, মৌলভীবাজারে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৮৯ জন, হবিগঞ্জ দুই লাখ ৮৫ হাজার ২২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে তিন লাখ ২০ হাজার ৮৪৫ জন।
ড. মামুনুর রশিদ জানান, আগাম বন্যায় সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। হাওর-বাওরের এ জেলায় চাষকৃত বোরো ধানী জমির প্রায় অর্ধেকই পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ এবং বন্যার পানি কমলেও ফসল রক্ষা করা কঠিন হবে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় চাষকৃত ৭৬ হাজার ৮৩৩ হেক্টর জমির মধ্যে আগাম বন্যায় এ জেলায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সূত্র জানায়, এ জেলায় আবাদকৃত ৫০ হাজার ৪৬৪ হেক্টরের মধ্যে প্রায় প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৭৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক মজুমদার মো. ইলিয়াস জানান, হবিগঞ্জে আগাম বন্যায় প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ জেলায় বোরো চাষাবাদ হয় এক লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ জেলায় পানিতে ডুবে ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকা।
বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম জানান, এ জেলায় চাষাবাদকৃত দুই লাখ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর মধ্যে এক লাখ দেড় হাজার হেক্টর বোরো জমির বোরো ধানই কৃষকের গোলায় উঠেনি। এই বিপুল পরিমাণ জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ জেলায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার ‘ফ্লাশ ফ্লাড’ বা পাহাড়ি ঢলের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খোঁজ নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলহানি
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পাশে না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী , সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জে তিন লক্ষাধিক কৃষিজীবী পরিবার ফসল হারিয়ে এখন নিঃস্ব। অতি বর্ষণ ,পাহাড়ি ঢলে এবং হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সর্বনাশ হয়েছে। দুই লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির মধ্যে বিভিন্ন হাওরের প্রায় ৯০ ভাগ জমির ফসল ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। ফসলের এত বড় বিপযর্য়ের পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পাশে না পাওয়ায় সুনামগঞ্জের কৃষকরা ক্ষুব্ধ।
ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মেরুদÐ ভেঙে গেছে। এ জেলার কৃষকরা এখন ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত কৃষকদের পাশে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এ এলাকা বাংলাদেশ থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্র্ণ জেলা সুনামগঞ্জ। এ জেলা থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হয়। অথচ এ জেলার মানুষ সব দিক থেকে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। বেঁচে থাকার সম্বল ফসল হারানোর পরও শান্তনা দেয়ার মতো সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে কৃষকরা পাশে পায়নি। কৃষকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সুনাগঞ্জের ফসল বিপর্যয়ের ঘটনা নিয়ে সারাদেশ তোলপাড়। অথছ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা নীরব। আক্ষেপের সুরে তারা বলেন, এ দুঃখ রাখি কোথায়। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এক ফসলি বোরো ফসল এ জেলার কৃষকদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু এবার ফসল হারানোয় কৃষকদের ঘরে খাবার নেই। নেই কোনো অর্থকড়ি। কীভাবে তারা বাঁচবেন সে ভাবনায় দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর পাড়ের বাসিন্দা মশলঘাট গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক শওকত মিয়া জানান, শনির হাওরটি এখনো কোনো উপায়ে টিকে আছে। তবে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণকারী কোনো ঠিকাদার, পিআইসি কিংবা পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে বাঁধের ধারেকাছে পাওয়া যায়নি। তারা দুর্বল বাঁধ নির্মাণ করেছেন, তাই জনরোষে পড়তে পারেন এ আশঙ্কা থেকে তারা আড়ালে রয়েছেন। এলাকার কয়েকশত মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন। যার ফলে হাওরটি এখনো টিকে আছে। তিনি বলেন, তার এ হাওরে চার-পাঁচ হাল ফসলি জমি রয়েছে। তাই তিনি সার্বক্ষণিক হাওরের খোঁজখবর রাখছেন। তিনি বলেন, হাওরের ফসল টিকলেও উৎপাদন ভালো হবে না। কারণ পানির ঠাÐায় ধানে ভালো করে চাল হয় নাই। তিনি আরো বলেন, ভাটি এলাকার ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্বরপুর উপজেলার কৃষকরা ফসল হারিয়ে নিঃস্ব জেলা কৃষকদলের সভাপতি আ ত ম মিসবাহ ইনকিলাবকে বলেন, এবার সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের এত বড় বিপর্যয় ঘটল অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বিপর্যস্ত কৃষকদের পাশে দেখা যায়নি। এটি এ জেলারবাসীর জন্য খুবই দুঃখজনক। এতে বুঝা যায়, এ সরকারের মন্ত্রীরা মানুষের পাশে নেই। তারা আছেন নিজের চিন্তায়। অথচ বিএনপি আমলে এক সময় সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। অথচ বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা বিপর্যস্ত কৃষকের পাশে নেই। এদিকে গতকাল (শনিবার) সকালে সুনামগঞ্জ শহরের পূরবী সুপার মাকের্টে জেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মলনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিসহ দায়ী বাঁধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সংবাদ সম্মলনে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএপির আহŸায়ক নাসির উদ্দিন চৌধুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।