পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্লমবার্গ : এই সেই দেশ যেখানে ক্ষমতায় থাকতে নাছোড়বান্দা এক স্বৈরশাসকের সাথে আরব বসন্তের সংঘাত ঘটেছিল। আজকের সিরিয়া কয়েক দশকের মধ্যে আরব বিশে^র সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। চল্লিশ বছরের বেশিরভাগ সময়ই সিরিয়ার নেতারা দেশের মধ্যকার মিশ্র ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠিগত গ্রæপগুলোর মধ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছেন। তারপর আসে গৃহযুদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষ সিরীয়, স্বদেশী ইসলামী উগ্রপন্থী ও বিদেশী সুন্নি জিহাদিরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, সে সাথে তারা নিজেদের মধ্যেও লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। সেই সংঘাত এখন সাত বছরে পড়েছে। নিহত হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজারের মত মানুুষ, আত্মপ্রকাশ করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এ যুদ্ধ আসাদের পক্ষে টেনে এনেছে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হেজবুল্লাহ গ্রæপকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও অন্যান্য আরব দেশগুলো সমর্থন দিয়েছে বাশার বিরোধী বিদ্রোহীদের। জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দিকে আসাদের শাসন অব্যাহত থাকা মেনে নেন। কিন্তু এই এপ্রিলে সিরিয়ার বেসামরিক লোকদের উপর বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে। সরকারী বাহিনীই গ্যাস হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন সিরিয়ার ব্যাপারে বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।
পরিস্থিতি
৪ এপ্রিল ইদলিব প্রদেশে রাসায়নিক গ্যাস হামলায় ৭২ জন লোক নিহত হয়। এ ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, এ গ্যাস হামলার কড়া জবাব দেয়া প্রয়োজন। তিনি এ সময় বলেন, আসাদকে অপসারণের জন্য একটি জোট সংগঠিত করার পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন যা সম্ভবত সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পরাজয়ের পর বাস্তবায়ন করা হবে। সিরিয়ায় আইএসের প্রাথমিক সাফল্য লাভ এবং প্যারিসে হামলার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়কেই সিরিয়া যুদ্ধের গভীরে টেনে আনে। আসাদ সরকারের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন তাকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অগ্রগতি লাভে সক্ষম করে যাদের কয়েকটি গ্রæপ যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের সমর্থনপুষ্ট ছিল। এদিকে সরকারী বাহিনী দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী আলেপ্পো পুনর্দখল করে। তুরস্ক আসাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নমনীয় করে এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের সাফল্য তুরস্কের কুর্দিদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদ জোরদার করবে এ আশংকায় রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়। ট্রাম্প প্রথমে আইএসের বিরুদ্ধে লড়তে রাশিয়ার অংশীদারিত্বের পক্ষে কথা বলেন। এর ফলে আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীরা বিপাকে পড়ে। এখন ট্রাম্প বলছেন যে ৪ এপ্রিলের গ্যাস হামলা সিরিয়া ও তার নেতার প্র্রতি তার মনোভাব পাল্টে দিয়েছে। উল্লেখ্য, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ দেশটির শহরগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং যুদ্ধপূর্ব জনসংখ্যার অর্ধেককে গৃহহীন করেছে। প্রায় ৪০ লাখ লোক উদ্বাস্তু হয়েছে। তারা পাশ^বর্তী দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছে ও লাখ লাখ লোক ইউরোপীয় দেশগুলোর করুণা নির্ভর হয়েছে।
পশ্চাৎপট
ফরাসি আশ্রিত দেশ সিরিয়া দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬৬ সালে আলাবি সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের সামরিক অফিসাররা ক্ষমতা দখল করে। এ ঘটনা শতকরা ৭০ শতাংশ সুন্নী মুসলমানের দেশে সংখ্যালঘু শিয়াদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। সিরিয়ার ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টান, দ্রæজ ও কুর্দি রয়েছে। ভিন্নমতকে নির্মমভাবে দমনের মাধ্যমে হাফেজ আল আসাদ দীর্ঘকাল ক্ষমতায় ছিলেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে বাশার আ আসাদ প্রেসিডেন্ট হন। পিতার পথ অনুসরণ করে বাশারও ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করেন। তার বিরোধী হালকা অস্ত্রসজ্জিত বিদ্রোহীদের দমনের জন্য তিনি বিমান হামলা, হেলিকপ্টার গানশিপ, আর্টিলারি ও ট্যাংক ব্যবহার করেন। সিরিয়া ও সিরিয়ার বাইরে বৃহত্তর অঞ্চলে বাশার বিরোধী লড়াইয়ের চরিত্র ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু অচিরেই সিরিয়ার আলাবি ও সর্বত্র শিয়ারা বাশার সরকার এবং সুন্নীরা বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। ২০১৩ সালে এক বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক সঙ্গে রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ নির্ধারণ ও সেগুলোর গুদাম ধ্বংসের জন্য জাতিসংঘ পরিদর্শকদল দল গঠনে কাজ করে। তবে সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায়, বাশার সরকার ও আইএস উভয়ই ৪ এপ্রিলের আগে গ্যাস হামলা চালিয়েছে। তবে রাশিয়া সিরিয়া সরকারকে রক্ষায় নিরাপত্তা পরিষদে বারবার ভেটো দিয়েছে।
যুক্তি
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে আসাদের পতন ঘটাবে তা স্পষ্ট নয়। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বড় সামরিক অভিযানে রাশিয়ার সৈন্যদের সাথে যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া দেশেও তা ব্যাপক বিরোধিতার সৃষ্টি করতে পারে। সিরিয়ায় মার্কিন সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালেও ট্রাম্প বৃহত্তর মার্কিন ভূমিকা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন প্রশ্ন আসে যে আসাদের পতনের জন্য কি করা হবে। রাশিয়া আসাদের প্রতি সমর্থনের পক্ষে বলেছে যে সিরিয়াকে ধর্মনিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সবচেয়ে বড় কথা অখন্ড রাষ্ট্র রাখা তাদের লক্ষ্য। কিছু বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে আসাদের পরাজয় যে শূন্যতা সৃষ্টি করবে, ইসলামপন্থী গ্রæপগুলো সে শূন্যতা পূরণ করতে ধাবিত হবে।
সর্বশেষ, ৪ এপ্রিল সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর গ্যাস হামলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র গতকাল শুক্রবার সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সিরিয়া একে তার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে আখ্যায়িত করেছে। রাশিয়া এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।