পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
থমকে আছে ১১শ’২০ কোটি টাকায় ৬১ ধরনের আধুনিক ভারী সরঞ্জাম ক্রয়
শফিউল আলম : চট্টগ্রাম বন্দর ভারী যন্ত্রপাতির (ইকুইপমেন্ট) তীব্র সংকটে ভুগছে দীর্ঘদিন যাবত। আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনার ও খোলা সাধারণ (বাল্ক) উভয় ধরনের পণ্য ওঠানামার উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের সংকটই প্রকট। এতে করে বন্দরে নিত্যদিনের পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে শুধু তাই নয়; স্বাভাবিকে তুলনায় কাজের গতি ধীর হয়ে পড়েছে। বন্দরের সার্বিক গতি ও উৎপাদনশীলতার উপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এক কিলোমিটার দীর্ঘ ৫টি জেটি-বার্থ সমন্বিত সর্ববৃহৎ কন্টেইনার স্থাপনা নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) যান্ত্রিক ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া পুরনো জেনারেল জেটি-বার্থ, ইয়ার্ডে কন্টেইনার এবং খোলা সাধারণ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জাম রয়েছে অনেক কম। বন্দরে গত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট ব্যবহারের চাহিদা অনুপাতে স্থাপনাভেদে শতকরা ২০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত স্বাভাবিক যোগানের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। কারিগরি হিসাবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি নিয়েই বন্দরে বলতে গেলে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এই সংকট বা সীমাবদ্ধতা বন্দরের দক্ষতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরজন্য এখনই অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে বন্দরে পর্যাপ্ত ভারী ইকুইপমেন্ট সংস্থান করাকে অপরিহার্য হিসেবে দেখছেন বন্দর ব্যবহারকারী তথা স্টেকহোল্ডাররা।
যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে বন্দর-ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বাড়তি খরচ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে গুণলেও পরবর্তী সময়ে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে গিয়ে বাস্তবে তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের ভোক্তা সাধারণকেই। বন্দরের কন্টেইনার কিংবা যেকোন ধরনের পণ্যের হ্যান্ডলিং খরচের সাথে দেশের বাজারদরের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১শ’ ২০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ৬১ ধরনের অত্যাধুনিক ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য দুই বছর আগে যে উদ্যোগ চূড়ান্ত করা হয়েছিল তাও থমকে আছে। বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়রে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ মুহূর্তে প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে কী গ্যানট্রি ক্রেনের ঘাটতিসহ বিশেষত কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অধিকাংশ যন্ত্রপাতির সংকট অত্যন্ত প্রকট। তবে যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতিতে দুর্নীতিবাজ চক্রের পোয়াবারো। কেননা যান্ত্রিক সংকটকে পুঁজি করে নেপথ্যে চলছে নগদ ঘুষ বকশিশ স্পিডমানির কারবার।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে কন্টেইনার ও খোলা কার্গো হ্যান্ডলিং করার উপযোগী বিভিন্ন ধরনের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের তীব্র ঘাটতি বিরাজমান থাকার কারণে স্বাভাবিক কাজের গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কমে গেছে বন্দরের যান্ত্রিক দক্ষতা ও সক্ষমতা। চাহিদার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ভারী যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। এতে করে পণ্যসামগ্রীর খালাস, জাহাজীকরণ, স্টেক-মজুদ করাসহ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সময় ও অর্থের অপচয় বেড়ে গেছে। ন্যূনতম প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক সরঞ্জাম ঘাটতি থাকার সুবাদে ব্যবসায়ীদের কার্যত জিম্মি করে প্রতিনিয়ত অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। যান্ত্রিক ঘাটতি, পুরনো জরাজীর্ণ যান্ত্রিক সমস্যার অজুহাতে যথেচ্ছ ঘুষ, কথিত বকশিশ ও ‘স্পিডমানি’র আদায়ের বিনিময়ে কাজ করতে হচ্ছে এমনটি অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক শত শত কোটি টাকা মূল্যের আমদানি-রফতানি পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং করা হয়। বন্দরের এনসিটি, সিসিটি, জেসিবি মিলিয়ে রয়েছে ১৯টি জেটি-বার্থ। প্রধান এ সমুদ্র বন্দরে যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি নিয়েই গতবছর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ টিইইউএস। ২০২০ সালে এ বন্দরকে প্রায় ২৮ লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে (২০ ফুট সাইজ ইউনিট হিসাবে)। কন্টেইনার ওঠানামায় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ১৪-১৫ শতাংশ। কিন্তু ক্রমবর্ধমান পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা অনুপাতে ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম রয়েছে খুবই কম।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি সামাল দেয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) মুনাফালব্ধ নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়নে মোট ১১শ’ ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১ ধরনের অত্যাধুনিক ভারী যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বারবার আশারবাণী শোনানো হয়। কিন্তু বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এখনও ঝুলে আছে। এ সম্পর্কিত ফাইল সচল হয়ে এগুতে না এগুতেই ফের থমকে গেছে। ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) নাকি অন্যকোন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ায় বন্দরের জন্য যান্ত্রিক সরঞ্জাম কেনা হবে তা নিয়েই মূলত সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তা আটকে আছে। অথচ বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, যুগোপযোগী অত্যাধুনিক ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংযোজিত হলে বন্দরের গতিশীলতা, সক্ষমতাসহ উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
যন্ত্রপাতি সংগ্রহের এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়াও রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রীচ স্ট্র্যাকার, কন্টেইনার মোভার, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ। যার সবই কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ভারী যন্ত্রপাতি। দীর্ঘ এক যুগ পর বন্দরে এসব সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরঞ্জাম ক্রয় পদ্ধতি নিয়ে একের পর এক জটিলতার কারণেই এ নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এদিকে সরাসরি ক্রয় (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড ডিপিএম) পদ্ধতিতে বন্দরের জন্য কিছু অপরিহার্য ভারী যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে ফের উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।