পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : মামলা জট বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এতে করে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তিও বাড়ছে। ফলে যথা সময়ে বিচার না হওয়ার হতাশা প্রকাশ করেছেন নারী ও শিশু বিচারপ্রার্থীরা। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মামলা বিচারাধীন। ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। বিষটি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, মানুষ বাড়ছে সাথে অপরাধও দিন দিন বেড়েই চলছে। আদালত কম থাকায় মামলা তুলনামূলকভাবে নিষ্পত্তির হার কম। সরকারের উচিত প্রত্যেকটি জেলায় ট্র্রাইব্যুনাল গঠন করে সৎ ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করা। এতে করে যেমন মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে; বিচারিক সেবারও মান বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হবে। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ মো. আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সুপারিশ পাঠিয়েছি, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। আশা করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভাকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, মামলা জট কমাতে প্রয়োজন দক্ষ ও সৎ বিচারক। বর্তমানে এটার সংকট রয়েছে। আইনমন্ত্রী একজন আইনজীবী তিনি বলেছেন দ্রæত সময়ের আরো ট্রাইব্যুনাল গঠন হবে। এটা ভাল উদ্যোগ, আমরা স্বাগত জানাই। উনার পক্ষে তো সব করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা। তিনি আরো বলেন, সরকার বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়; একারণে বিচার বিভাগের ফাইল দ্রæত চূড়ান্ত অনুমোদন পায় না।
সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে নারী নির্যাতন মামলার ৩৫৮৮টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১১-১৫ সাল পর্যন্ত দেশের মোট ছয়টি জেলার সাতটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১১ হাজার ৮৬৪টি মামলার মধ্যে তিন হাজার ৫৮৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ১৮টি, খালাস হয়েছে একহাজার ৪৭টি, অব্যহতি পেয়েছে দুই হাজার ৫২৩টি। গত ৮ মার্চে নারীপক্ষ আয়োজিত ‘নারী ও শিশুর প্রতি ন্যায়বিচার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ প্রেক্ষিত গবেষণার ফলাফল এমনই তথ্য বেরিয়ে আসে। এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা দায়ের হচ্ছে। কিন্তু নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক কম।
দেশে একের পর এক নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নানাবিধ নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশ উৎকণ্ঠিত। প্রতিদিনই বাড়েছে এ ধরনের ঘটনা। সহিংসতার শিকার নারীর বিচার প্রাপ্তির জন্য বিশেষ আইন ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০৩’ রয়েছে। এর আগে নারী শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রæতগতিতে করতে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করে সরকার। বর্তমানে আগের চেয়ে আইন কঠোর হলেও অপরাধ কমছে না। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী নারী নির্যাতনের বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এ আইনে ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদÐ। আর গণধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদÐ। বিশেষ এ আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচারের জন্য প্রতিটি জেলা সদরে একটি ট্রাইব্যুনাল বা একাধিক ট্রইব্যুনাল গঠন করা কথাও বলা আছে।
সূত্রে জানা যায়, ৬৪টি জেলার মধ্যে বর্তমানে ৫৪টি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এছাড়াও বাকি ১৮টি জেলায় এখনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। এসব জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার বিচারের দায়িত্ব পালন করেন ওই জেলার জেলা জজরা। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা। মামলা সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একটি মামলার বিচার শেষ করতে কয়েক বছর চলে যায়। এতে করে বিচারপ্রার্থীও বিচার পাওয়ার পরিবর্তে হতাশ হয়ে পড়েন।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৫৪টি ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৬০ হাজারের বের্শি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯টি ট্রাইব্যুনালে ৩৯ হাজার ৩০৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮টি ট্রাইব্যুনালে ৩৬ হাজার ৫৮২টি, রাজশাহী বিভাগের ৮টি ট্রাইব্যুনালে ১৩ হাজার ৮৪১টি, রংপুরের ৬টি ট্রাইব্যুনালে ১৭ হাজার ৮২৭টি, খুলনা বিভাগের ৬টি ট্রাইব্যুনালে ১৬ হাজার ১৮২টি, বরিশাল বিভাগের ৩টি ট্রাইব্যুনালে ৬ হাজার ৫৯টি এবং সিলেট বিভাগের ৪টি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে ১০ হাজার ৮৯৯টি মামলা।
এছাড়াও ১৮টি জেলা জজ আদালতে ১৫ হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এসব অবস্থা বিবেচনা করে ২০১৫ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সারা দেশে আরও ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ করে। জেলাগুলো হলÑ রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, ল²ীপুর, খাগড়াছড়ি, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর ও ভোলায় একটি করে ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। এছাড়া মামলার সংখ্যার বিবেচনায় আরো ১৭ জেলার মধ্যে ২২টি ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি আরও ২৯টি ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে। সুপারিশটির সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় একমত পোষণ করেছে। গত বছর ট্রাইব্যুনাল গঠনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে হয়ে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।