Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে বান ডেকেছে তিস্তায় : ব্যাপক ফসলহানি

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত : তিস্তায় হঠাৎ করে অসময়ে বন্যার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তিস্তাপাড়ের কয়েক শত কৃষক এখন তাদের ফসল হারিয়ে চোখের পানিতে ভাসছে। এদিকে তিস্তার উজানে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তিস্তার পানি।
এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা বর্তমানে পানির অভাবে শুকনো বালুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে তিস্তার সেচ কমান্ড এরিয়ার সেচ কার্যক্রম। তিস্তাপাড়ের কয়েকশ’ কৃষক নিরুপায় হয়ে তিস্তা বুকজুড়ে জেগে উঠা বালিচরে আবাদ করেছে বিভিন্ন জাতের ফসলের। ধীরে ধীরে তিস্তার বালিভূমি কৃষকের ফসলের মাঠে পরিণত হওয়ায় নতুন করে আশায় বুক বাঁধে কৃষক। কিন্তু হঠাৎ করে ফসল ঘরে তোলার পুর্ব মুহূর্তে গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে তিস্তার ঢলে নদী সংলগ্ন নীলফামারী ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, পূর্বছাতনাই ও খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চরগ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হয়। এতে ওই সব চর গ্রামের ব্যাপক ফসল ক্ষেত নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। তিস্তাপাড়ে এখন শোনা যাচ্ছে সব কিছু হারানো সর্বস্বান্ত কৃষকের বিলাপ। পানি ছেড়ে দিয়ে তিস্তাপাড়েরর কৃষকদের সর্বস্বান্ত করার এ ঘটনাটি ঘটলো প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পূর্ব মুহূর্তে। তিস্তাপাড়ের লক্ষ লক্ষ অধিবাসী জানেন না এতে দাদাবাবুরা কি বার্তা দিল তিস্তা অববাহিকার কৃষকদের। গত কয়েক দিনের আবহাওয়া বার্তায় উজানে বৃষ্টির তেমন কোন রেকর্ড না থাকলেও হঠাৎ করে তিস্তায় পানি আসাকে উজানের ঢল ও বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বলে প্রচার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের পূর্বে তিস্তাপাড়ের কয়েকশ’ কৃষকের ফসলহানি ঘটিয়ে কি বার্তা জানান দিচ্ছে বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্র ভারত তা জানে না তিস্তা অববাহিকার অধিবাসীরা। তিস্তাপাড়ের অদিবাসীরা জানান কখনো পানি না দিয়ে তাদের শুকিয়ে মারছে আবার কখনো ফসলের ভরা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে । জানা যায়, অসময়ে তিস্তায় পানি আসার কারণে জেলার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী এলাকা নিয়ে নতুন একটি চ্যানেল তৈরী করেছে তিস্তা। অসময়ের এ সৃষ্ট বন্যার ফলে তিস্তা অববাহিকায় ভুট্টা, বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, গম, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, স্কোয়াসসহ কয়েকশ’ হেক্টর বোরো ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে মর্মে নিশ্চিত করেছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকেরা। গত এক সপ্তাহ আগেও তিস্তা মরুভূমিতে থাকলেও গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করায় তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি সুইচ গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতেও শেষ রক্ষা হযনি। পাউবো সুত্র মতে, গত রবিবার থেকে সোমবারের পানি প্রবাহ বেড়েছে দশমিক ৭৫ মিটার। দেশের সর্ববৃহত সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে রবিবার পানি প্রবাহ ৫০ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার থাকলে সোমবার দুপুর ১২টায় তা বেড়ে ৫১ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। উজান হতে পানি আসার কারণে তিস্তায় ঘোলা পানির সাথে কচুরীপানা আসায় তিস্তায় পানির গতি তীব্র হয়। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন সাংবাদিকদের জানান, অসময়ে বন্যার কারণে টেপাখড়িবাড়ী মৌজার চরখড়িবাড়ী গ্রামসহ আশেপাশের ১০টি গ্রামের বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেয়ে তরমুজ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত। এছাড়া এলাকায় ভুট্টা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাউবোর কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী সাংবাদিকদের জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে তিস্তার উজানে চরাঞ্চলের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আকস্মিক বন্যার কারণে ভুট্টা ক্ষেতগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান হঠাৎ পানি বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল ব্যারাজের কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছিল।



 

Show all comments
  • এস, আনোয়ার ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৮ এএম says : 1
    প্রান-বন্ধুর আগাম উপহার। কৃষকদের জন্য একটু হাহাকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ