Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাওরাঞ্চলে কৃষক পরিবারে হাহাকার

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রতিদিনই ডুবছে নতুন নতুন এলাকা মানুষ ও গো-খাদ্যের সঙ্কট তীব্র

ইনকিলাব ডেস্ক : বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বেশির ভাগ হাওর তলিয়ে গেছে। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে এ অঞ্চলের বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এতে করে কৃষক পরিবারে দেখা দিয়েছে তীব্র হাহাকার। বাজারে চাল-আটাসহ খাদ্যপণ্যের সঙ্কট, বাড়ছে দাম, পাশাপাশি দেখা দিয়েছে খাদপণ্যের চরম সঙ্কট।
গো-খাদ্যের অভাব
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : বোরো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় সুনামগঞ্জে কৃষক পরিবারে দেখা দিয়েছে হাহাকার। একদিকে ফসল হারানোর বেদনা, অন্যদিকে তাদের হাতে নেই টাকা, ঘরে নেই খাবার। তাই সব মিলিয়ে কৃষকরা মারাত্মক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের ঘরে দেখা দিয়েছে মহা দুর্যোগ। ভাটির এ জনপদের প্রতিটি কৃষিজীবী পরিবারে দেখা দিয়েছে এ দুর্যোগ। পাশাপাশি তারা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন আরেক বিপদে। গবাদি পশুর অন্যতম খাদ্য ধানের খড়। এবার এলাকায় ধান নেই, খড়ও নেই। পশুখাদ্য না থাকায় কৃষকরা গরু-বাছুর ঘরে রাখতে পারছেন না, আবার ক্রেতার অভাবে বিক্রিও করতে পারছেন না। গরু-বাছুর মরার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে জেলার প্রতিটি কৃষিজীবী পরিবারে।
ধর্মপাশা উপজেলার বানারশিপুর গ্রামের কৃষক আবদুুল খালেক, হাবিবুর রহমান ও শানবাড়ী গ্রামের শুদিন্দ্র এবং গিরইল গ্রামের আরব আলী জানান, ‘ফসল হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। হাতে নেই টাকা, ঘরে নেই খাবার। এর মধ্যে গরু-বাছুর নিয়ে পড়েছি আরেক সঙ্কটে। গরু-বাছুরের নেই খাবার (খড়)। গরু-বাছুর ক্রেতার অভাবে বিক্রিও করতে পারতেছি না। গরু-বাছুর বাঁচিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। তাই গো-খাদ্যের অভাবে গরু-বাছুর মরার উপক্রম হয়েছে। শুধু ধর্মপাশা উপজেলায়ই নয়, প্রায় অনেক উপজেলার কৃষকরা এ রকম অবস্থার কথা জানিয়েছেন। এবার জেলার ১১টি উপজেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছিল। এ জমিতে ১২ লাখ ৫৪ হাজর ৫০০ মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। যার বাজার মূল্য দুই হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু এবার এ এলাকায় বৈশাখ মাস আসার আগেই দেখা দেয় ভারী বৃষ্টিপাত। এতে দেখা দেয় হাওর এলাকায় পানিবদ্ধতা। ডুবে যায় হাওরের ফসল। হাওর ও নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়তে থাকায় হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে বড় বড় হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। বলতে গেলে ইতোমধ্যে জেলার অধিকাংশ ফসলি হাওর পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় এখনো যে দুয়েকটি হাওর ঠিকে আছে; তাও যায় যায় অবস্থায় আছে। এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে দিন-রাত কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর, শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর ও দিরাই উপজেলার কালিকোটার হাওর। এ ছাড়া ছোট ছোট কিছু হাওর টিকে থাকলেও ফসলি জমির পরিমাণ খুবই কম এবং টিকে থাকা হাওরের ফসলও পানিবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষকদের ফসলহানির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত দুর্বল বাঁধ নির্মাণকারী পিআইসি ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দায়ী করছেন কৃষকসহ সচেতন মহল। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বম্বপুর উপজেলায় পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, বাঁধ নির্মাণকারী ঠিকাদার ও পিআইসির বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল বের করেছেন কৃষক ও জনতা। এদিকে হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ১৩ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। হাওর রক্ষা বাঁধে সময়মতো কাজ না করায় সম্প্রতি ফসলহানির বিষয়ে ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির হলরুমে এক সাধারণ সভা আহŸান করেছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন কৃষিমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ফসলহানির কারণে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে জমি
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসায় নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে নতুন করে অনেক জমি তলিয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদীর পানিতে ওই ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী অনেকের বাড়ির আঙিনায় পানি উঠে যাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তলিয়ে গেছে প্রায় ১৭০ হেক্টর জমি। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা। এ পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলায় মোট দুই হাজার ৫০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে বলে কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
সিলেটে চালের দাম লাগামহীন
পরিদর্শনে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
সিলেট অফিস : সিলেটে উজানের পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টর বোরো ধানের ফসল। অসময়ের বৃষ্টি আর অকাল বন্যার পানি সব হাওরে প্রবেশ করছে হু হু করে। সবকটি হাওরের ধান এখন পানির নীচে। গতকাল (শুক্রবার) নতুন করে আরো কিছু হাওর তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। চারদিকে বন্যার পানি। বোরো ফসল হারিয়ে কাঁদছে কৃষকেরা। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারছে না কষ্টের ফসল। চোঁখের সামনে সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়া সহ্য করতে পারছে না কৃষকরা। পানি যেভাবে ঢুকছে তাতে এখন গবাদিপশু ও বাড়িঘর রক্ষা করাও কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। কোথাও কোথাও বাড়িঘরেও পানি উঠতে শুরু করেছে। এদিকে কৃত্রিমভাবে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মহাজনরা। এতে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকেরা। দাবি উঠেছে চালের মূল্য বৃদ্ধি রোধসহ খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির। চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধের জন্য সচেতন মহল সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
সøুইস গেইট কৃষকের গলার কাঁটা : সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার একটি সøুইস গেইট কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় হিতে বিপরীত হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে হাওরগুলোর কাঁচা ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। উসমানপুর ইউনিয়নের হাউনিয়া-ছানিয়া হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সøুইস গেইট বন্ধ থাকায় হাওরগুলোর ভেতরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। সøুইস গেইটের কারণে হাওরের ভেতরে প্রায় চার ফুট উঁচু পানি আটকে আছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা জানিয়েছেন।
কুশিয়ারা প্রকল্পের কারণে জকিগঞ্জের বালাইর হাওর, চালিয়ার হাওর, মইলাট হাওর, যুগনী বিল, কাকড়াকুঁঁড়ি বিল, হাকাই বিলসহ কোনো বিল ও হাওরের পানি নদীতে যেতে পারছে না। ফলে উপজেলার বারহাল, খলাছড়া, বিরশ্রী, সুলতানপুর, মানিকপুর, বারঠাকুরী, জকিগঞ্জ সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে। উপজেলার বড়চালিয়া, বিরশ্রী, কেছরী, চকসহ বিভিন্ন এলাকার নদীর বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, উপজেলার প্রায় সব কয়টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা এ বছর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি বলে জানান তিনি।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার মানববন্ধন
সিলেটের সচেতন মহল ও ক্ষতিগ্রস্তরা, হাওরাঞ্চলের কৃষকদের সব কৃষিঋণ ও এনজিওদের ঋণ মওকুফ করা, হাওরাঞ্চলের জলাশয়গুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়ার জোর দাবি জানান। একই সাথে হাওর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং হাওর অঞ্চলের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি করেন। গত মঙ্গলবার ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’র সভাপতি কাসমির রেজার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পীযুষ রঞ্জন পুরকায়স্থ টিটুর পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও সিলেট মহানগরের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেটের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ সমিতি : সুনামগঞ্জ জেলার অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় জেলার কৃষকদের সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ‘সিলেটের সুনামগঞ্জ সমিতি’র নেতৃবৃন্দ। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওর-গুলোর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করলে কৃষকের ফসল নষ্ট হতো না। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রকল্প কমিটির সদস্য ও ঠিকাদারদের শাস্তির দাবি জানান তারা। বিবৃতিদাতারা হচ্ছেনÑ ‘সুনামগঞ্জ সিলেটে’র সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, সাবেক সভাপতি লে. কর্নেল অধ্যক্ষ আতাউর রহমান পীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আহবাব খান প্রমুখ।
ইউএন অফিস ঘেরাও : জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের ফসল ডুবির পর গতকাল আরো কয়েকটি হাওরের বেড়িবাঁধ ভেঙে ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার দ্বিতীয় বৃহৎ মইয়ার হাওরের নারিকেল তলা এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুইটি বেড়িবাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে চার হাজার হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। জগন্নাথপুরে হাওরের বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা লুটপাটকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি সদস্যদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ সাত দফা দাবিতে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে কৃষক-জনতা।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সদরের স্থানীয় পৌর পয়েন্টে এক বিশাল মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে ইউএনও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন তারা। জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আবদুুল মনাফের সভাপতিত্বে ও হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ছিদ্দিকুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হাওরপাড়ের চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুুল হান্নান চৌধুরী, হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল, সাবেক কাউন্সিলর মো. লুৎফুর রহমান প্রমুখ। পরে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. শামীম আল-ইমরান কৃষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে বেলা ২টার দিকে কৃষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
সিলেট কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হাশেম জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৩৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এ হিসাব আরো বাড়তে পারে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মনজুরুল হান্নান ইতোমধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জের হাকালুকি, দামড়ি এবং গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করেন।
নেত্রকোনায় মসজিদে মসজিদে মোনাজাত
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা : অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে উঠতি বোরো ফসল পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ঘরে ঘরে এখনো আহাজারী ও কান্নার রুল অব্যাহত রয়েছে।
হাওরাঞ্চলের সারা বছর খেয়েপড়ে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল চোখের সামনে তলিয়ে যেতে দেখে তারা শোকে মূহ্যমান। বৈশাখে ফসল উঠার আগ মুহূর্তে বেশির ভাগ পরিবারের সংসারের খোরাকি শেষ হয়ে যায়। তখন তাদেরকে এক মাস বাজার থেকে চাল কিনে খেতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ ও কোনো কাজ না থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অসহায় দুর্গত কৃষকদের অভিযোগ, তাদের সাহায্যার্থে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, এনজিও কিংবা সমাজকর্মী এগিয়ে আসেননি। নির্বাচন আসলে জীবন বাজী রেখে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের নামে যারা কথার ফুলঝুড়ি ছড়াতে সেখানকার কৃষকদের ঘরে ঘরে ধর্ণা দিতো, আজ এই চরম দুর্দিনে শান্তনা দেয়ার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এই দুঃসময়ে কেউ তাদের পাশে না দাঁড়ালেও হাওরাঞ্চলের কৃষকের কষ্টার্জিত স্বপ্নের ফসল রক্ষা ও কৃষকদের কল্যাণ কামনা করে আলেমসমাজ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে মোনাজাত করেন।
ওলামা মাশায়েখগণের উদ্যোগে গতকাল (শুক্রবার) জুমার নামাজ শেষে নেত্রকোনা জেলা শহরের মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও হাওরাঞ্চলের কৃষকরা মহান আল্লাহপাকের দরবারে দু’হাত তুলে আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের জল ফেলে তাদের ফসল রক্ষার জন্য দোয়া করেন। ফসল রক্ষার আশায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষগণ পূজা অর্চনা ও উলুধ্বনি দিয়ে প্রার্থনা জানান। আবার অনেকে গঙ্গাদেবীর পূজাও করছেন।
দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি
এদিকে অতিবর্ষন, পাহাড়ী ঢল, শিলাবৃষ্টি এবং আগাম বন্যায় হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিসহ বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে সরকার ও বিত্তশালী ব্যক্তিদেরকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে নেত্রকোনায় মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।‘নেত্রকোনার সচেতন নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে পৌরসভার সামনে সড়কে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, জেলা সুজন সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল, অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী, নেত্রকোনা সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি দেব শংকর সাহা রায়, প্রকৃতি বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি তানভীর জাহান চৌধুরী এবং কবি পলাশ চৌধুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ