Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লার নগর গ্রাম-গঞ্জজুড়ে চলছে বখাটেপনা

থানায় অভিযোগে অনীহা ভুক্তভোগীদের

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার নগর, গ্রাম-গঞ্জজুড়ে শুরু হয়েছে বখাটেপনা। মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বখাটেদের অশালীন উক্তি, প্রেমের প্রস্তাব, মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলাসহ নানা রকম অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। স্কুল কলেজের সামনে ছাত্রীরা যেমন ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে, তেমনি নগরীর মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করতে আসা মেয়েরাও বখাটেদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। আর নগরীর পাড়া, মহল্লায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিনিয়ত চলছে বখাটেপনা। নগরীর যেসব স্থানে এসব বখাটেপনা হচ্ছে সেখানে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সমাজের দায়িত্বশীল কেউই ইভটিজিং বা বখাটেপনা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন না। ভুক্তভোগীরা সমাজের দায়িত্বশীল কারো কাছে নালিশ বা প্রতিকার চাইতে গেলে ভুক্তভোগিদের পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের একটি বড় অংশ থানা, কোর্টের ঝক্কি-ঝামেলা পোহানো এবং পরের পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে এমনটি ভেবে থানা-পুলিশের দারস্থ হয় না। থানায় অভিযোগের ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা রীতিমত অনীহা প্রকাশ করে থাকেন।
কুমিল্লা নগরীর স্কুল ও কলেজগুলোর মধ্যে নজরুল এভিনিউ সড়কে মর্ডাণ হাইস্কুল, নানুয়া দিঘীপাড় এলাকায় শৈলরানী বালিকা বিদ্যালয়, মোগলটুলি এলাকায় কুমিল্লা হাই স্কুল, জজকোর্ট রোডে আওয়ার লেডি, কান্দিরপাড় এলাকায় ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ও ধর্মপুরে ডিগ্রি শাখায়, মনোহরপুর-চর্থা এলাকায় সরকারি মহিলা কলেজ, ধর্মসাগর পাড়ে মহিলা মহাবিদ্যালয় এবং কুমিল্লা সরকারি কলেজের পুলিশ লাইন এলাকায় প্রতিদিনই চলে বখাটেদের আড্ডা। তারা স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের অশালীন উক্তিসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। স্কুল কলেজের ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে কুমিল্লা নগরী ও বাইরের এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা বহিরাগত বখাটেদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারের সামনেও বখাটেরা হাবভাব নিয়ে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার রাস্তার মোড়ে মোড়ে মেয়েদের স্কুল ছুটির সময় টার্গেট করে দলবেঁধে ওৎপেতে থাকে বখাটেরা। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে গাংচর পুরাতন খেয়াঘাটের ড্রাইভিং স্কুলের মোড়, চাঁনপুর কবরস্থানের হারুন স্কুল মোড়, শুভপুর তিন রাস্তার মোড়, গর্জনখোলা, সুজানগর রাস্তার মোড়, ডিগাম্বরীতলা, পার্কের মোড়ে, তালপুকুর পাড়, চর্থা হোচ্ছামিয়া স্কুলের পেছনের রাস্তার মোড়, হাইস্কুলের পেছনের রাস্তা, ঢুলিপাড়া মোড়ে, ইপিজেডের উত্তর পার্শ্বে চর্থা রোডের মোড়, বড়পুকুর পাড়সহ বেশ কিছু এলাকা। নগরীর কলেজগুলোতে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। ভিক্টোরিয়া, কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে সন্তানের জন্য অপেক্ষমাণ মহিলারাও বখাটেদের অশ্লীল উক্তির শিকার হচ্ছেন। মানসম্মানের কথা ভেবে এসব অভিভাবকরা আইনের দারস্থ হতে চান না। আবার যেসব পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক আসে না পরীক্ষা শেষে এসব ছাত্রীদের পিছু নেয় বখাটেরা। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ছাত্রীরা বখাটেদের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে।
এছাড়াও কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় স্কুলের ছাত্রীরা বখাটেদের প্রেম নিবেদন থেকে শুরু করে অশ্লীল বাচন-ভঙ্গিতে প্রতিনিয়ত অসহায়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করছে। প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে অনেক বখাটে ছাত্রীকে তুলে নেয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এদিকে বখাটেরা নগরীর মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করতে আসা মহিলা, তরুণীদের গায়ে ধাক্কা দেয়া, অশোভন উক্তি করে কেনাকাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়ে না। কাছে গিয়ে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে। মার্কেটের প্রবেশদ্বারে বখাটেরা দলবেঁধে বসে থাকে। আবার মার্কেটের সিঁড়িতেও বখাটেদের দেখা যায়। অন্যদিকে পাড়া-মহল্লায় বখাটে, নেশাখোরদের আড্ডার কারণে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছে না মেয়েরা। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়া পরিবারের মেয়েরাই এধরণের পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকে। অভিভাবকদের অভিযোগ, মেয়েরা স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট পড়া বা মার্কেটে প্রয়োজনীয় কাজে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই বখাটেপনার শিকার হতে হয়। প্রতিবাদ করার সাহস পায় না, নিরবে সব সহ্য করে বাড়ি ফিরে। পরে আর স্কুল কলেজে যেতে চায় না। মার্কেটে যেতে বললেও রাজি হয় না। কারণ একটাই, বখাটেদের বখাটেপনা। অভিভাবকরা ইভটিজিং রোধে স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টারের সামনে ও মার্কেটগুলোর সামনে থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাবের টহল ব্যবস্থা এবং অনুসন্ধান টিম চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ