Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাণিজ্য ঘাটতি উদ্বেগজনক

| প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিচ্ছে বলে সরকারের মধ্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টি দেখা গেলেও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন ঋণাত্মক ধারায় মোড় নিয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে অব্যাহতভাবে অর্থনীতি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের নেতিবাচক ধারার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের স্থবিরতার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ৭ শতাংশের কাছাকাছি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাবকে সরকারের পক্ষ থেকে কৃতিত্ব হিসাবে জাহির করা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি যে মোটেও সন্তোষজনক নয় তা’ ইতিমধ্যে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। অর্থনীতির এই নেতিবাচক ধারা গত অর্থবছর থেকেই প্রকট আকার ধারণ করতে শুরু করেছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর দেশের অন্যতম থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র পক্ষ থেকে অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা দূর করতে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে যে তিনটি পদক্ষেপ দ্রæততার সাথে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল তা হচ্ছে : জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো, মুদ্রা বিনিময় হার এবং সঞ্চয়পত্রের সুদহারে সমন্বয় করা। তবে সরকার সে সব সুপারিশ গ্রহণ করেনি। এরই মধ্যে আরেক দফা জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে ফেব্রæয়ারী মাস পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে বলে গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়।
বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গতমাসে প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্টে জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম সাতমাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে যদি আমদানি ব্যয় হঠাৎ বেড়ে যায়, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন কিছু থাকে না। তবে এই ধারা মাসের পর মাস ধরে অব্যাহত থাকায় সেই সাথে রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার ফলে উত্তরোত্তর বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক প্রবণতা হিসেবে গণ্য করা করা যায়। অর্থনীতির এ ধরনের বিপরীতমুখী ও অনাকাক্সিক্ষত প্রবণতা রোধে যে সব বিষয় অ্যাড্রেস করা প্রয়োজন সরকারকে অবশ্যই তা করতে হবে। বিশেষত: সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাÐে নিরাপত্তাহীনতার মত ইস্যুগুলোকে অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই। আমদানি ব্যয় এবং রফতানি আয়ের ভারসাম্যহীনতা তথা আয়ব্যয়ের হিসাব সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিকূলে চলে যাওয়ার বাস্তবতা যে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করছে, সরকারের সংশ্লিষ্টদের তা’ স্বীকার করে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত অর্থনৈতিক প্রতিবেদন অনুসারে অর্থবছরের গত ৮ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ৬০৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময় হারে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। ক্রমবর্ধমান হারে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে দেশকে উন্নয়ন অগ্রগতির কাক্সিক্ষত সোপানে পৌঁছানো অসম্ভব। বাণিজ্য ঘাটতি নি:সন্দেহে আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতিকেও আরো প্রকট করে তুলবে। বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি তথা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। অথচ এর মধ্যেই একশ্রেণীর মানুষ দুর্নীতি ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছে এবং অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র মত প্রতিষ্ঠানগুলো লুটেরা, দুর্নীতিবাজ ও রাজস্ব ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যত তেমন কোন উদ্যোগ নিতে না পারলেও তাদের অনেক অযাচিত পদক্ষেপ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাÐে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার করছে। অন্যদিকে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কিছু তৎপরতা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তি ও নিরাপত্তামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেও চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে উন্নয়ন অগ্রগতির কোন লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব নয়। দেশে বিনিয়োগ না হলেও অস্বাভাবিক হারে আমদানি ব্যয়বৃদ্ধির পেছনের কারণ খুঁজে দেখতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও রফতানি আয়বৃদ্ধির মাধ্যমেই অর্থনীতির এ চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব হতে পারে। দুর্নীতি, লুটপাট ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ