পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বহুমাত্রিক লেখক, কবি, সাংবাদিক সাযযাদ কাদির আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে তিনি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাবার রুহের মাগফিরাত কামনা করতে সবার প্রতি আহŸান জানান সাযযাদ কাদিরের ছেলে সাদ্দাম কাদির। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কবিতা পরিষদ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী প্রভৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাযার আগে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, কবিতা পরিষদের প্রফেসর মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুস, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুক ও কবি পুত্র সাযযাদ কাদির বক্তব্য রাখেন।
প্রথম নামাজে জানাযায় অন্যান্যের মধ্যে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিনুর রহমান, আবদুস শহীদ, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদসহ শতাধিক সাংবাদিক-কবি-সাহিত্যিক অংশ নেন।
সাযযাদ কাদির জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রবীণ সদস্য ছিলেন। তিনি কর্মজীবনে সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক তারোকালোক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলা বাজার, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক বাংলা, দৈনিক দিনকাল প্রভৃতি পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। এছাড়া রেডিও পিকিং-এ ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। পরে কবির লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে নিজের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাদ্দাম কাদির জানান, শুক্রবার সকাল ১০ টায় টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে দেলদুয়ারে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার দাফন সম্পন্ন হবে।
১৯৪৭ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাযযাদ কাদির। তিনি বাংলা সাহিত্যের ষাটের দশকের অন্যতম কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত। সাযযাদ কাদির ১৯৬২ সালে বিন্দুবাসিনী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৬৯ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইল করটিয়ার সা’দত কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সাযযাদ কাদির।
১৯৭৬ সালে তিনি কলেজের চাকরি ত্যাগ করে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৭৮ সালে এটি ত্যাগ করে রেডিও বেইজিং-এ যোগ দেন। ১৯৮০ সালে রেডিও বেইজিং-এর চাকরি ছেড়ে দেন এবং ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় যুক্ত থাকেন। এরপর ১৯৮৫ সালে থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কাজ করেন আগামী-তারকালোক পত্রিকায়। পরবর্তীতে এটি ত্যাগ করেন ও দৈনিক দিনকালে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দৈনিক দিনকাল হতে ইস্তফা দিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত থাকেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও সাযযাদ কাদির তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-গবেষণা, শিশুতোষ, সম্পাদনা, সঙ্কলন, অনুবাদসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায়। তার ৬০টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
সাহিত্যিক হিসেবে তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের নাথ সাহিত্য ও কৃষ্টি কেন্দ্রিক সাহিত্য-পত্রিকার শৈবভারতী পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, এম নুরুল কাদের পুরস্কার, ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব পদক, ভাষাসৈনিক শামসুল হক পদক, পশ্চিমবঙ্গের কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।