Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লার রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে কুসিকের জয়-পরাজয়

| প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু জয়লাভ করবেÑ শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা বিএনপির এমন বিশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে।
অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘দাপট’ ভোটের মাঠে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে তা দৃশ্যমান করতে পারেনি দলটি। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতাদের অতি আত্মবিশ্বাসই তাদের প্রার্থীকে ডুবিয়েছে। কেননা নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশাস নিয়ে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিলো। দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্রিয় ও স্থানীয়ভাবে নানারকম প্রশ্ন ওঠে আসলেও কুসিক নির্বাচনের ফলাফল ঘিরে কুমিল্লার আগামীর রাজনীতির গতিপথ কেমন হবে এনিয়ে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধীদল বিএনপির মধ্যে ভাবনা-দুর্ভাবনা জেঁকে বসেছে।
জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সীমার পরাজয় দুর্ভাবনায় ফেলেছে আওয়ামী লীগকে। কুমিল্লার রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের জটিল সমীকরণ শুরু থেকেই গুরুত্ব পায়নি কেন্দ্রিয় নেতাদের চোখে। তারা স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার কাজটি সফলভাবে করতে পারলেও ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থী সীমাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনোভাব কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিরূপণে ব্যর্থ হয়েছেন। শুরু থেকে সীমার ভরসা ছিলো কেন্দ্রিয় নেতাদের ওপর। আর ভেবেছিলেন ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছুটা হলেও নমনীয় ভাব ও তাদের শিথিলতা থাকবে। কিন্তু কোনটাই না থাকায় নির্বাচনী পরিবেশ হয়ে ওঠে কঠোর। আর এমন কঠোর পরিবেশেও সীমা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কুমিল্লায় আফজল খান ও এমপি হাজী বাহারের ব্যক্তি দ্ব›েদ্বর প্রভাবের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তথা আফজল খানের মেয়ে সীমা হেরেছে এমন যুক্তি সঠিক নয়, কেননা আওয়ামী লীগের লোকজন ভোট দেওয়াতেই নৌকা ৫৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে। নির্বাচনে নারী ভোটারের অধিকহারে উপস্থিতি ভোটের ফল পাল্টে দিয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থী সাক্কু নারী ভোট বেশি টানতে পারায় তার জয় নিশ্চিত হয়েছে। যেখানে মাত্র এগার হাজার ভোটের ব্যবধানে সাক্কু জয় পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে সীমার দল আওয়ামী লীগ নারী ও সাধারণ পুরুষ ভোটারের ভোট টানতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল, দ্ব›দ্ব কোনটাই দায়ী নয়, দায়ী নৌকা প্রার্থীর পারিবারিক ইমেজ সঙ্কট। যা সাধারণ ভোটাররা উপলব্ধি করতে পেরেই মন্দের ভালো হিসেবে সাক্কুর দিকে ঝুঁকেছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার জয় নিয়ে কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা শতভাগ আশাবাদী ছিলেন। নেতাদের ধারণা ছিলো সীমার ব্যক্তি ইমেজ ও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে যে বাড়তি সমর্থন মিলবে তারসাথে নৌকা প্রতীকের বিপুল সমর্থন তার জয় নিশ্চিত করবে। কিন্তু ভোটের আগেরদিন স্থানীয় নেতাদের সাথে কর্মীদের ভালো বুঝাপড়া ও সমন্বয়ের অভাব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলোতে। অথচ নির্বাচনী প্রচারণার কমপক্ষে পনেরদিন কেন্দ্রিয় নেতাদের কর্মপরিকল্পনা, বিচক্ষণতা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাবের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার সামনে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুকে অসহায় মনে হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাক্কুর কর্মীদের ধরপাকড়ের ঘটনাও কম ঘটেনি। আবার নির্বাচনের মাঠে কিন্তু এসব ঘটনা সাধারণ ভোটারের মনে আওয়ামী লীগের অতিরঞ্জিত প্রভাব হিসেবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বলেও জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নির্বাচন নিয়ে খোদ সাক্কু নিজেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু তার ধৈয্য ও বিচক্ষণতা শেষ মুহূর্তে তাকে অসহায়ত্বে জায়গা থেকে তুলে আনে। যে কারণে সাক্কুর নির্বাচনী কর্মকৌশলের কাছে শেষ সময়ে এসে ধরা পড়ে সীমার কৌশল। ভোট গ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোকজন নিশ্চিত ছিলেন সীমার নৌকা জয়ী হচ্ছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশে বিএনপির নীরব ভোট বিপ্লব সাক্কুর জয় নির্ধারণ করে দেয়। ভোটের অংকের হিসাবে দেখা গেছে যেসব কেন্দ্রে সাক্কু জয় পেয়েছে সেখানে সীমার প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান প্রায় অর্ধেক। আর যেখানে সীমা জয় পেয়েছে সেখানে সাক্কুর ব্যবধান কিছুটা কম। সাক্কুর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নেতারা বলেছেন, সব কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের জয়ে আরও বেশি ভোটের ব্যবধান থাকতো। এখানে ধানের শীষের রিজার্ভ ভোট থাকলেও সাক্কুর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা সাধারণ মানুষের ভোট তার জয়ের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী দিনের রাজনীতিতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়টি যেমন ওঠে এসেছে তেমনি দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যাত্রা কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়ার কমিটমেন্টও পূরণ করেছেন নির্বাচন কমিশন। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিএনপির জন্য ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের এই দুইটি বার্তা কুসিক নির্বাচনে ছিলো বলে মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কুমিল্লায় এখনো বিএনপি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কুমিল্লায় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে অজ¯্র মামলা-মোকদ্দমা থাকলেও দলের জনপ্রিয়তায় ঘাটতি দেখা দেয়নি। যার প্রমাণ সদ্য শেষ হওয়া কুসিক নির্বাচনে দেখা গেছে। এনির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়লাভ করলেও ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত আসনে বিএনপি ও শরীকদল জামায়াত মিলে প্রায় ১৪টি কাউন্সিলর পদ পেয়েছে। বিএনপির জয়ের এ প্রভাব গোটা কুমিল্লা জেলায় পড়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে পরাজিত হলেও ভোটের অংকের হিসেবে দলটি অনেক দূর এগিয়েছে। এ নির্বাচনের পরাজয়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভাবনায় এনে শোধরাতে পারলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে কুমিল্লায় বিএনপির সবকটি দুর্গে আঘাত হেনে যেভাবে আওয়ামী লীগ জয়ের পথ সুগম করেছে তেমনি আগামীতেও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐকে সামনে রেখে ভালো কিছু দেখাতে পারবে দলটি। সবমিলে কুসিক নির্বাচনের জয়-পরাজয় আগামীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ