পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সফল হয়েছে -শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল-খুযাইম
ইসলাম বিশ্বের সকল মানবতার ধর্ম -শায়খ ড. আব্দুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল-কাসিম
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে লাভবান হয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। তারা অস্ত্র তৈরি করে, বিক্রি করে। সেই অস্ত্রে রঞ্জিত হয় মুসলমানের রক্ত। মুসলমানের রক্তের বিনিময়ে লাভবান হয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওলামা মাশায়েখ ও আলেম-ওলামাদের মহাসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে হাতে হাত মিলিয়ে সমন্বিত প্রচারণা চালানোর জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহŸান জানিয়ে এই কাজে সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের উদ্যোগের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম, উন্নতির পথে এগিয়ে যাবার ধর্ম। ইসলাম ধর্মে অসহায় এতিমদের সাহায্য করার কথা বারবার বলা হয়েছে। এই ধর্মকে কেউ হেয় করবে, কলুষিত করবে, এটা কখনই আমরা সহ্য করতে পারি না। কাজেই এক্ষেত্রে যারা আন্তর্জাতিক বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছি তা আরো শক্তভাবে কার্যকর করতে পারব। এ প্রসঙ্গে তিনি সউদী বাদশাহর জঙ্গিবিরোধী ভূমিকায় বাংলাদেশ সবসময় সহযোগিতা দেবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় তার পাশে আছে, সেই কথাটিই আমি জানাতে চাই।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন- সউদী আরবের পবিত্র মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন নাসির বিন মোহাম্মদ আল খুযাইম এবং মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আব্দুল মোহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম। মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আল মুতাইরি উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আজকের এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সউদী আরবের যে দুই জন মেহমান এসেছেন তাদের বক্তব্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে অবস্থান তা আরও সুদৃঢ় করবে। আপনারা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তারা যে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন তারাও শুনে গেলেন। সমাজের ওলামা-মাশায়েখ ও অভিভাবকসহ সকলেই ইসলাম ধর্মের এই শান্তির বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা স্ব-স্ব এলাকায়, নিজ নিজ গ্রামে তাদের বক্তব্যে আসা পবিত্র কোরআনের বাণী পৌঁছে দিন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পবিত্র দুই মসজিদের খতিবদের বক্তব্য সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে এবং সহজ করবে।
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও সউদী আরবের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক মজবুত অবস্থানে রয়েছে। দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত এবং সউদীতে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতকে বিশেষ ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মদ-জুয়া সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো কেবল ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছে। কিন্তু ইসলামের উন্নয়ন ও প্রসারে কিছুই করে যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ইসলাম থাকবে না, ৭৫-এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ ধরনের অপপ্রচার করেছে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে যারা মদের লাইসেন্স দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সউদী আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মুসলমানদের হজে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। হজে পাঠাবার জন্যে হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজও ক্রয় করেছিলেন। অল্প খরচে সে সময়ে হজে পাঠানো হতো। কিন্তু জাতির পিতাকে ৭৫-এ হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বরং জাহাজটিকে প্রমোদ বিহার হিসাবে ব্যবহার করে। তারা মুখে ইসলামের নাম করে ইসলামবিরোধী কাজ করে। ইসলাম প্রচার-প্রসারে প্রকৃত অর্থে তারা কোন কাজই করে নাই। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থান তারাই করে।
শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর সরকারের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সংস্কার, সেখানে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, অনলাইনে আরবি, বাংলা ও ইংরেজীতে তিনটি ভাষায় পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরীফ তরজমাসহ সংরক্ষণ, দেশের সকল জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয় স্থাপন এবং তাঁদের চাকরিকে সরকারিকরণ, ৮০টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু, হজ ক্যাম্পের উন্নয়ন, হজেও কার্যক্রম ডিজিটাউজডকরণ, ১ লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীকে দ্বীনি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান, সারাদেশে মসজিদ পাঠাগার তৈরির অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৪২টি মসজিদ পাঠাগার নির্মাণ, ডিজিটাল আর্কাইভ নির্মাণ এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐ তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এই ভূ-খÐে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ইসলামের যে ধর্মীয় শিক্ষা সেটা আমাদের পালন করতে হবে। অন্য ধর্মের মানুষ এখানে বাস করে, তাদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। যেন সবাই সবার ধর্ম পালন করতে পারে। আমাদের নবী করিম (সা:) এটাই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনেই বলা হয়েছে ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন।’
ধর্মের নামে কেউ যেন কারও ক্ষতি না করে এবং জঙ্গিবাদী কর্মকাÐে না জড়ায় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেককে এক হয়ে ইসলামের জন্য কাজ করতে হবে। কেউ যেন জঙ্গিবাদের পথে না যায়। সেটা খেয়াল করতে হবে। ইসলাম সবসময় মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। ইসলাম ক্ষমা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। অসহায়দের সহায়তা করতে ইসলাম শিক্ষা দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের কথা, যারা ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া হয়। ইসলাম ধর্মের বিপক্ষে এভাবে পথে নামা, এখানেই সবচেয়ে দুর্ভাগ্য। তিনি বলেন, আমি আপনাদের আহŸান জানাবো, ইসলাম ধর্ম যে প্রকৃত শান্তির ধর্ম এমন শিক্ষা দেয়া উচিত যাতে কেউ ভুল পথে না যেতে পারে। যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে। ইসলামকে হেয় করা, কলুষিত করা কখনোই সহ্য করা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুটিকতক মানুষের জন্য শান্তির ধর্ম ইসলামকে বদনাম করা ঠিক নয়। যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গিবাদই তাদের ধর্ম। যারা ইসলামকে হেয় করতে চায়, তাদের সেই ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অনেক সময় গুটিকতক বিপথগামী মানুষের জন্য ইসলামকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়। আন্তর্জাতিক ফোরামে যখনই এ ধরনের কথা ওঠে তিনি তাঁর প্রতিবাদ করেন।
সরকার প্রধান জানান, যারা জঙ্গিবাদে চলে গছে, তারা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, তবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা সরকার করবে। অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে কোনো মানুষ না খেয়ে মরবে না, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। সবাইকে নিয়ে আমরা শান্তির দেশ গড়বো।
সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোট গঠন করায় সউদী বাদশাহকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি সউদী আরবের পবিত্র মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন নাসির বিন মোহাম্মদ আল খুযাইম ও মসজিদে নববীর ইমাম আবদুল মেহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম বাংলাদেশের আতিথেয়তা গ্রহণ করায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সফল হয়েছে Ñশায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল-খুযাইম
উলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববী কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুযাইম আল্লাহ’র শুকরিয়া আদায় এবং রাসূল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে বলেন, রাসূল (সা.) দুনিয়ায় হেদায়েত ও নূর নিয়ে এসেছেন। এই হেদায়েতের পথকে আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আজকের উলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনের মাধ্যমে সউদী-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সউদী মেহমান শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুযাইম বলেন, সউদী বাদশা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সউদী বাদশা’র পক্ষ থেকে এবং মদিনা’র আলেম ওলামাগণের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে সালাম নিয়ে এসেছি। আপনারা সালাম গ্রহণ করুন। শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুযাইম বলেন, আমার বিশ্বাস আজকের এই সফরের মাধ্যমে সউদী আরব ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ. হবে। তিনি বলেন, সউদী বাদশা গোটা বিশ্বে মুসলমানদের ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। সউদী বাদশা’র জন্য আপনারা দোয়া করবেন। তিনি বলেন, ইসলাম প্রচার-প্রসারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শায়খ ড. খুযাইম বলেন, সউদীর নেতৃত্বে বাংলাদেশসহ ২০টি দেশ জোটবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তিনি এ জন্য সউদী বাদশা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবারকবাদ জানান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যেসব দেশ সফল হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশও একটি রাষ্ট্র। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশও সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা জায়েজ নেই। একজন অমুসলিমকেও হত্যার জায়েজ নেই। আশ্চর্যের বিষয় সন্ত্রাসীরা যখন মানুষকে জবাই করে তখন তারা বিসমিল্লাহ বলে জবাই করে। পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী একজনকে অন্যায়ভাবে হত্যার জন্য জাহান্নামের আগুন অপেক্ষা করছে। যারা বিধর্মী তাদের জান-মাল হেফাজত করার দায়িত্বও মুসলমানদের রয়েছে। মুসলমানের দেশে মুসলমান হত্যা করতে পারে না। যারা হত্যাকাÐে এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে জড়িত তাদের জন্য ওয়াইল জাহান্নাম রয়েছে। মনে রাখবেন, যারা মানুষকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখে এদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের সাথে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে জড়ানো হচ্ছে। কোনো মাদরাসায় জঙ্গিবাদ তৈরি হয় না। মনে রাখবেন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ট্রেনিং দেয়া হয়। ইসলামের সবচেয়ে উত্তম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আপনার পরিবার। পরিবারে সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে হবে। মসজিদ ও সমাজে সুনাগরিক তৈরির শিক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেন, ইমামগণের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের চরিত্র উত্তম করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো। মানুষের চরিত্র সংশোধন করতে পারলেই সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। আরেকটি নেয়ামত হচ্ছে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করছেন তাদের জন্য দোয়া করা। সউদীতে মানুষের চরিত্র সংশোধনের জন্য মারকাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ কেন্দ্র নামে বিশাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
শায়খ ড. খুযাইম বলেন, ইসলামকে মজবুত করতে হলে ইসলামী সংস্কৃতির উন্নতি এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে হবে। যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের ট্রেনিং দিচ্ছে এদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য কি, তা সবাই জানেন। সন্ত্রাসীরা সউদী আরবেও হামলা চালিয়েছিল। সউদী সরকার অত্যন্ত সাহসের সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এদের নির্মূল করেছে। সউদী সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জাতিসংঘকেও সহযোগিতা দিচ্ছে। সউদীর বর্তমান যুবরাজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন। শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুযাইম বলেন, সউদী বাদশা ঘোষণা দিয়েছেন যারা ইসলামকে বদনাম করার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে হবে। বিশ্ব থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য সউদী বাদশার নেতৃত্বে ব্যাপক কাজ চলছে। তিনি বলেন, লাখ লাখ হাজী ও ওমরাহ যাত্রীদের সব ধরনের খেদমতের সুযোগ দেয়ায় আমরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। শায়খ ড. খুযাইম বলেন, সবাইকে দ্বীনের সত্যিকারের খাদেম হিসেবে আল্লাহ কবুল করুন এ দোয়াই করছি।
ইসলাম বিশ্বের সকল মানবতার ধর্ম
Ñশায়খ ড. আব্দুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম
পবিত্র মসজিদুন নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আব্দুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম আজকের উলামা মহাসম্মেলনের আয়োজন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা মুসলমান। কুরআন আমাদের শিক্ষা দিয়েছে পৃথিবীর কোনো মানচিত্র সীমাবদ্ধ নয়, আমাদেরকে আল্লাহ মুসলমান বানিয়েছেন এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দ্বীন ইসলাম আমাদের জীবন শরীয়ত আমাদের সংবিধান। আমাদের চরিত্র কি হবে কীভাবে সমাজ চলবে শরীয়তই তা শিক্ষা দিয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর উপর সর্বপ্রথম আয়াত নাজিল হয়েছে ইকরা (পড়)। আমাদেরকে জ্ঞানার্জন করতে হবে। কুরআন ও শরীয়তের উপর আমল করতে পারলেই দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি আসবে। শায়খ ড. কাসিম বলেন, আমাদের ধর্ম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত। ইসলাম একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছে। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করছে তাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম ভ্রাতৃত্ববোধ শিক্ষা দেয়। কুরআন শিক্ষা দেয় তোমরা একে অপরের ভাই। তোমাদের মধ্যে যে শক্তিশালী সে দুর্বলকে সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ইসলাম বিশ্বের সকল মানবতার ধর্ম। ইসলাম শুধু মুসলমানের ধর্ম নয়; ইসলামের দুয়ার খোলা রয়েছে। সমস্ত মানুষকে ইসলামে পুরোপুরি দাখেল হতে হবে। ইসলাম হচ্ছে ক্ষমা করার ধর্ম। ইসলামের উন্নতি হবে শিক্ষার মাধ্যমে। ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমেই ইসলাম এগিয়ে যাবে। প্রতিবেশীদের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বিধর্মীদের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, একে অপরের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা দেশ পরিচালনা করছে তাদের হাতকে শক্তিশালী করা। বাংলাদেশ থেকে হাজীদের হজে প্রেরণে ঢাকাস্থ সউদী রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করায় রাষ্ট্রদূতকে শুকরিয়া জানান। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।