পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে দেশের ইতিহাসে কলঙ্ক তিলক হয়ে থাকবে
স্টাফ রিপোর্টার : পাকিস্তানকে তাড়িয়ে দিয়ে কি এখন দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য মুখোমুখি হলাম? এমন প্রশ্ন রেখেছেন সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। তিনি বলেছেন, একাত্তরে ভারত আমাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সেজন্য জাতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাদের এই ঋণ কি কেয়ামত পর্যন্ত শোধ করতে হয়, সেটাতো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে নিজস্ব সার্বভৌমত্ব, নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য। গতকাল বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’র উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত পানি সমস্যা শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু যৌথ নদী কমিশনের কোনো বৈঠকই হচ্ছে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ তার নদীর ন্যায্য হিস্যা পাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বর্তমানে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে যাদের ভোটের প্রয়োজন হয় না। তারা ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে পারে। আর এজন্য তারা বলে তিস্তার পানি পেলাম কি পেলাম না তাতে কিছু যায় আসে না। ক্ষমতা দখলকারী এই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তারা দায়বদ্ধ অন্য দেশের কাছে।
তিনি বলেন, তিস্তা-গঙ্গা নদীর পানি আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত। এগুলোর ন্যায্য হিস্যা না পেলে ভারতের সাথে কিসের সম্পর্ক?
গত মঙ্গলবার আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তা চুক্তি না হলে কিছু আসে যায় না। আসলে এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই তাদের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। আর এ কারণেই চেয়ারের লোভে সরকারের মন্ত্রী মারাত্মক এই কথা বলছেন।
ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে আমাদের প্রতিরক্ষা হুমকিতে পড়বে মন্তব্য করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, ভারত একটি যুদ্ধবাজ রাষ্ট্র। তারা পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই চুক্তির ফলে ভারতের সঙ্গে কারো যুদ্ধ হলে আমাদেরও সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। ৩৩টি চুক্তির সবগুলোই ভারতের অনুকূলে যাবে। এই সমস্ত চুক্তি থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে, নতুবা আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের প্রয়োজন নেই। এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অনাকাক্সিক্ষত ফল বয়ে নিয়ে আসবে। তার পরও যদি চুক্তিটি করা হয় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্ক তিলক হয়ে থাকবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুপুরের মধ্যেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ৮ টি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছিল। তার পরেও নীরব বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। কারণ, জনগণ ভোট চোর আওয়ামী লীগ থেকে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
সেমিনারে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ভারত সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায় করা। পানির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা ভুগছি। তিস্তার কারণে উত্তরাঞ্চলে মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি ২০১১ সালে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত নানা অজুহাতে এই চুক্তি হয়নি। ভারত তার সুযোগ-সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আদায় করে নিচ্ছে। উল্টো অভিন্ন নদীগুলোর ওপরে বাঁধ দিয়ে দেশের প্রায় ৪০টি নদী আজ পানিশূন্য।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সাথে পানি সমস্যার সমাধান না করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। মানুষ খুন করলেই মানবতাবিরোধী অপরাধ শুধু হয়, তা নয়। পানির অভাবে, যে কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, এটাও মানবতাবিরোধী কাজ। পানির সাথে শুধু মানুষ নয়, প্রতিটা জীব-জন্তুর জীবন জড়িত- যে কারণে আমাদের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের সাথে সেই পানি সমস্যার সমাধান না করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। তাদের সাথে কি করে সম্পর্ক রাখা যায় আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে। এই জাতীয় সরকারের সাথে যদি আমাদেরকে চলতে হয় তাহলে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চলতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রতিটি জায়গায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জঙ্গিবাদ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর সৃষ্টি মন্তব্য করে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, দেশে এখন জঙ্গি জঙ্গি খেলা চলছে। লাখে লাখে জঙ্গি মরে শেষে দেখা যায় কয়েকটা শিশু মরে। তিস্তা চুক্তির মূলা ঝুলিয়ে ২০১৯ সালের ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে তারা যা খুশি তাই করছে। কিন্তু তারা জানে না বাংলাদেশের মানুষ এত বোকা নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার ভারত সফরে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের অন্তত একটি চুক্তি প্রত্যাশা থাকবে ভারতীয় বিএসএফ যেন সীমান্ত হত্যা বন্ধ করে। ১৯৭১ সালে ভারত মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার বিনিময়ে ভারতের জন্য বাংলাদেশ এখন বিরাট একটি বাজার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করার আহŸান জানান তিনি।
সেমিনারে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ভারতের নীতি হচ্ছে কর্তৃত্ব করা। তারা প্রতিবেশীকে নতজানু হিসেবে দেখতে চায়। এর ফলে আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বড় নদী মরে যাওয়ায় ছোট নদীগুলোও মরে যাচ্ছে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।