Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিশ্লেষণ

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে সব মহলেই আলোচনা এখন তুঙ্গে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরে ভারতের প্রধান চাওয়া হলো- সামরিক চুক্তি অথবা অন্তঃত একটি সমঝোতা। অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের দাবি হচ্ছে- তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায়সঙ্গত হিস্যা আদায়। ভারত তাদের প্রাপ্তি আদায়ে আটঘাট বেধে নামলেও বাংলাদেশের পক্ষে তেমন জোরালো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয় বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। বরং তিস্তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জনগণকে হতাশ করেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এই সফরে প্রতিবেশী দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো গভীর হবে। আবার কারো মতে, সফরে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে, তাতে কতটা দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে তা নিয়েও রয়েছে আশঙ্কা।
সরকার বলছে, এবারের সফরে সই হতে পারে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। এর মধ্যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উন্নয়ন, পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, রেলওয়ে ও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প। আলোচনায় আছে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টিও। যদিও বহুল আলোচিত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত। এ সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও কেউ কেউ মনে করছেন, অধিকাংশ চুক্তিতে ভারতের স্বার্থই বেশি। এ জন্য চুক্তিগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশকে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ তাদের। তারা মনে করেন, নানান কারণে বাংলাদেশ এখন গুরুত্ব বহন করে। তাই নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নিতে হবে বুঝেশুনে।
প্রধানমন্ত্রীর এবারকার ভারত সফরে ভারতের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যাশা পূরণে নেয়া হচ্ছে সব রকমের পদক্ষেপ। ভারতীয় প্রস্তাবগুলো আকর্ষণীয় করে তারা উপস্থাপন করছে। কোনোকিছুতেই ঘাটতি রাখছেন না তারা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এখন সাজ সাজ রব। শেখ হাসিনাকে বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়াদিল্লি। দু’দিন আগেই গতকাল বুধবার ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ শোভিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকায়। দিল্লির রাজপথে শোভা পাচ্ছে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি সম্বলিত বিশালকায় সব ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড। শেখ হাসিনাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে এ সফরে রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা সফর করে গেছেন ভারতের সেনাপ্রধান। ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলনে আগত ভারতীয় লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাদা করে অনির্ধারিত বৈঠক করেছেন। যাকে নিয়ে তিস্তার পানি বণ্টনে সমস্যা সেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও শেখ হাসিনার সম্মানে দেয়া ভারতীয় রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে শেষ মুহূর্তে যোগদানের খবরে নয়াদিল্লিতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্দীপনা। ভারতের কংগ্রেস দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার ছেলে রাহুল গান্ধীও দেখা করবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। সফরের প্রথম দিনে বিকেল তিনটায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘ফোর কোর্টে’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হবে গার্ড অব অনার। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে যাবেন। এরপর হায়দ্রাবাদ হাউজে চলবে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠকের আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একান্তে আলাপ করবেন। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর হিন্দি অনুবাদ মোড়ক উন্মোচন করবেন হাসিনা-মোদি। এরপরই তারা দেবেন যৌথ ঘোষণা। একই সাথে কলকাতা-খুলনা বাস চলাচল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। বিকেল সাড়ে তিনটায় দিল্লি ক্যান্টনমেন্টে মানিকশো সেন্টারে শেখ হাসিনা ৭১’ এ শহীদ ভারতীয় যোদ্ধাদের স্বজনদের হাতে সিলভার ক্রেস্ট ও পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেবেন। তৃতীয় দিন ৯ এপ্রিল আজমীর শরীফে গিয়ে হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। বিকেলে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে প্রণব মুখার্জির দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা। নরেন্দ্র মোদি ও মমতা ব্যানার্জি সেখানে হাজির থাকবেন। সফরের শেষ দিন ১০ এপ্রিল সকালে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। বিকেলে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরবেন।
এদিকে ভারতের আনন্দ বাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সফর ঘিরে ভারতের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই দালাই লামা-বিতর্ক এই সফরের ওপর ছায়া ফেলেছে। সাউথ বøকে মঙ্গলবার সারাটা দিন ছিল এ নিয়েই ব্যস্ততা। বাংলাদেশেও চীনের প্রভাব বিস্তারে ভারত চিন্তিত। চীন থেকে বাংলাদেশের ডুবোজাহাজ কেনাকে ভারতের নীতিনির্ধারকেরা খুশি মনে মেনে নেননি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে, তার প্রধান লক্ষ্যও চীন। শেখ হাসিনার সফরের ঠিক আগে দালাই লামার অরুণাচল সফর নিয়ে তৈরি বিতর্ক নিছকই কাকতালীয় হলেও দিল্লি আপাতত এই নিয়ে আচ্ছন্ন। কারণ গত মঙ্গলবার চীনের সরকারি প্রচারমাধ্যম বলেছে, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবেই সঙ্ঘাতের দিকে এগোচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণœ করে ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি করবেন না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি এ নিয়ে বিএনপির বিরোধিতাকে আমলে নিচ্ছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু অপরদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে সাংবাদিকরা তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেছেন, সেখানে একটি বিষয় হলো কি হলো না, সেটি তেমন বড় কিছু নয়। এটা নিয়ে এখন আর কিছু বলতে চাই না।
ইতোমধ্যে ৫ এপ্রিল সকালে অগ্রবর্তী দলের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান বাংলাদেশ হাইকমিশনে। হাইকমিশনার ও কর্মকর্তারা তার সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করেছেন। কর্মকর্তারা জানান, মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে সব আয়োজন। এবার শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের অপেক্ষা।
ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারকার ভারত সফরে স্থলসীমানা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পানি নিয়েও আলোচনা থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক এই ভারতীয় হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকেও দেখছেন খুবই ইতিবাচক সফর হিসেবে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, বিষয়টা এমন জটিল হয়ে গেছে যে, অনেক কিছু জানা যায়, আবার অনেক কিছু জানা যায় না। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, জানা যাচ্ছে মমতা ব্যানার্জি আপত্তি জানাচ্ছেন। তাহলে তো কেন্দ্র বলে কিছু থাকল না।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা থাকার কথা। এখানে বাংলাদেশের থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তি হওয়ার কথা সেখানে জাতীয় পর্যায় আসার কথা নয়। জটিল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে চুক্তি হচ্ছে সেটা কি পানি ভাগাভাগি হবে? এটা তো জানা যায়নি। সিকিম অনেকগুলো বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখেছে; কিন্তু তা নিয়ে কোনো কথা নেই, মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিভিন্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের অ্যাজেন্ডা কী তা জানানো হয়নি। সংসদেও আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো কথা হয়নি, জনগণ অন্ধকারেই আছে। দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হলেও সকলের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল।
তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য শক্তিশালী অবস্থান বলতে যা বুঝায় তা আমরা দেখছি না। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের গণমাধ্যম যেভাবে খবর দিচ্ছে তাতে জনগণ সন্তুষ্ট নয় এবং মন্ত্রীরা একেক জন একেক কথা বলছেন। একজন বলছেন তিস্তা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে তাদের।
আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি অনুযায়ী পানি আসছে না এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু তিস্তাই নয়, চুক্তি অনুযায়ী অন্য নদীর পানিও আসছে না। টিপাই বাঁধ বন্ধ করল কি-না সেটা পরিষ্কার নয়। আন্তঃনদী সংযোগে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বক্তব্য নেই এবং ৫৪টি নদী পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ হবে কি-না তার সঙ্গে আরো অনেক বিষয়ে কথা নেই। এখানে বলা হচ্ছে- প্রতিরক্ষা চুক্তি, এটা কি পানির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। তিন দিকেই ভারত। ফলে ভারতের দিকে থেকে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করা হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী বলেন, ভারতের সাথে একবারে এতগুলো চুক্তি হচ্ছে এটা অনেক বড় বিষয়। একটি দেশের সাথে অন্য একটি দেশের সম্পর্ক অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এটি একটি বহুমাত্রিক বিষয়। তবে দেশের স্বার্থ নষ্ট করে কোনো চুক্তি করা ঠিক হবে না। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরিপক্কতা অনেক। আমি মনে করি, এমন কোনো চুক্তি তিনি করবেন না, যে চুক্তিতে দেশের ক্ষতি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে যে ধরনের চুক্তির কথা আমরা শুনছি তার ওপর সম্পর্কের বিষয়টি নির্ভর করছে। অন্যান্য দেশ যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ কিন্তু সেই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁঁকিতে নেই। সুতরাং প্রতিরক্ষা চুক্তির তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার মনে হয় না।’
বেসরকারি থিংকট্যাংক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহানের মতে, ভারতের দিক থেকে একটি মত রয়েছে যে, আমরা যদি পরস্পরের নিরাপত্তা বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে সেটা সামরিক সহযোগিতায় বিস্তৃত হতে পারে না কেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে- একে একটি বাধ্যবাধকতামুক্ত সমঝোতা স্মারক বা এর চেয়েও বড় কিছুতে পরিণত করার প্রয়োজন আছে কি-না। ভারত এটা মনে করে থাকতে পারে যে, বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে একই ধরনের বিষয় ভারত পারবে না কেন।
তবে একই সঙ্গে আমি মনে করি, ভারতকে বাংলাদেশের জনমতের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার দরকার রয়েছে। এটা ভারতকে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশের নিজেরও কিছু ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। আমরা এখনো তিস্তা পানি চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় আছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আমি তাই সর্বাগ্রে বলব- আসুন, যেসব এলাকায় অমিল রয়েছে, তা বাদ দিয়ে যেসব এলাকায় মিল রয়েছে, সেদিকে গুরুত্বারোপ করি।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, যা সবার হৃদয়কে আলোড়িত করে। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত যাচ্ছেন। তিনি সেখানে যাতে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন সেজন্য তার ভারত যাওয়ার আগে আসুন সমস্যাটির সমাধানে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং তার হাতকে শক্তিশালী করি।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের মতে, তিস্তার পানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পানির হিস্যা দেয়ার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে ভারত রাষ্ট্রের। কাজেই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তির সময় কোনো রাজ্যেরই কোনো ভ‚মিকা সেখানে থাকার কথা নয়। ভারতের সংবিধানের ২৫৩ অনুচ্ছেদ অনুসারেও তার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভারত সরকার সে কাজ না করে বাংলাদেশকে তিস্তার পানি না দেয়ার অজুহাত হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তিকে খাড়া করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশকে পানি দেয়ার ব্যাপারটি স্থগিত রেখেছে।
তিনি বলেন, এবারো প্রধানমন্ত্রী এক বড় বহর নিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন। তিনি সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে থেকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আতিথেয়তা উপভোগ করবেন। এই সঙ্গে তিনি যে ভারত সরকারের সঙ্গে কয়েকটি সামরিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করবেন এটা ইতোমধ্যেই দুই পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এই চুক্তির দ্বারা বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র লাভবান হবে না। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও দেশরক্ষাবিষয়ক সব তথ্যই এর মাধ্যমে ভারতের হস্তগত হবে। এর দ্বারা বাংলাদেশের ওপর ভারতের বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ আরো বৃদ্ধি পাবে।



 

Show all comments
  • md ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ৬:১১ এএম says : 0
    I heard that BD will do 33 agreements. Why we need 33 agreements, just give ............. to them. I never heard any country did too many agreement just one visit. What we are getting?? Dilleka LAddo????
    Total Reply(0) Reply
  • sahed ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:৪২ এএম says : 0
    no defence deal with india
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ