Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৩৩ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দু’দেশের মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে চুক্তি। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের সাথে সামরিক চুক্তির বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশের প্রায় সব বিরোধী দল এবং আন্তর্জাতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে নেতিবাচক মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ভারত শুধু তাদের স্বার্থে আমাদের সাথে চুক্তি করতে চাচ্ছে বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হলে দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কে দূরত্ব বাড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও। এমন মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে যেসব বিষয়ে চুক্তি হতে যাচ্ছে তার অধিকাংশই ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। দেশের স্বার্থ রক্ষায় তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে সরকারের প্রতি পরামর্শ দেন তারা।
বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শাহিদুজ্জামানের মতে, নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা ইস্যুর নিষ্পত্তি চায় না। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরেও এ ইস্যুর সমাধান না হলে তা শুধু দুদেশের জনগণের মধ্যেই নয় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের রাজনীতিতেও।
আরেক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের মতে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতার সুসম্পর্ক না থাকা আর তিস্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করেছেন তাতে এ বিষয়ে দ্রæত সমাধান সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তিস্তা সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা বিবেচনা করে ভারতেরই উচিৎ বাংলাদেশকে তার পানির ন্যায্য হিস্যা মিটিয়ে দেয়া বলে মত দেন তারা।
তবে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির রূপরেখা ও দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। যেটা হবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে পারলে। আর তা না হলে কেন্দ্র এককভাবে চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করবে বলে ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে জোর আলোচনা হচ্ছে।
ভারত সফরে কূটনৈতিক সফলতা বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের কূটনৈতিক সফলতা নির্ভর করছে তিস্তা চুক্তির উপর। সেটাই এখন আমাদের মূল ইন্টারেস্ট। তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের সমর্থন বিষয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন,  সেটা তারা আভ্যন্তরীণভাবে দেখবেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকা দরকার তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ভারতের দাবীকৃত সামরিক চুক্তি নিয়ে বিশিষ্টজনেরা তাদের মত প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারতের সঙ্গে সরকার কোনো ধরনের সামরিক চুক্তি করার আগে আরও তিনটি চুক্তি করতে হবে। তিনি বলেন, এই তিনটি চুক্তি হলো, ১. সীমান্তে বিএসএফ আর কোন মানুষ হত্যা করতে পারবে না। ২. তিস্তার পানিবণ্টন এবং ৩. ভারতের বিশ কোটি মুসলমানের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার। তিনি বলেন, এই তিন চুক্তি করতে পারলে দেশবাসী চিন্তা করবে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে কি না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সাথে প্রথম সামরিক চুক্তিটা হয়েছিল, সেটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করেন নাই। করেছিলেন তাজউদ্দিনের প্রবাসী সরকার। বঙ্গবন্ধু দেশে এসেই খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ওই চুক্তিকে অগ্রাহ্য করে বাতিল করেছিলেন।
নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভারতের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু নিউ কলোনিজম (উপনিবেশবাদ) চাই না। ভারতের সাথে যে সমস্ত সমস্যা আছে, সেগুলো নিষ্পত্তির কোনো পদক্ষেপ নেই।
মান্না আরো বলেন, ভারতের সাথে যে সমস্ত সমস্যা আছে, সেগুলো নিষ্পত্তির কোনো পদক্ষেপ নেই। অথচ নতুন নতুন চুক্তি মাধ্যমে দেশকে পরাধীনতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এধরনের চুক্তি হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তি হয় এমন দেশের সঙ্গে যার সঙ্গে কোন সংঘাতের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সংঘাত তো ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে। ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জায়গা দিয়েছিল। সেই দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক হলে তা কি জাতীয় স্বার্থে যায়? এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতের অকেজো অস্ত্র কিনবে বাংলাদেশ বলেও দাবি করেন তিনি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, গণতন্ত্র থাকলে চুক্তির কথা আগেই জানতে পারতাম। এই সরকারের শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নয়। দেশের মানুষ জানে না, এমপিরা জানে না। আমলারা সব ঠিক করে দেয়। দেশের মালিক জানে না, কর্মচারীরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। দেশের এর চেয়ে বড় দুর্গতি আর হয় না।
বৈঠকে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তির কিছু যুক্তি আছে। একথা ঠিক ভারত একটি বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই বৃহত্তর অস্ত্র আমদানিকারক দেশের অস্ত্র যখন পুরনো হয়ে যায় তখন তো তা রফতানি করতেই হবে। আর পৃথিবী তো এখন যুদ্ধ অর্থনীতির মধ্যে ডুবে গেছে। এর মধ্যেও ভারত ঢুকেছে। এছাড়া পুরো বাংলাদেশের ওপর তার কর্তৃত্বটা প্রতিষ্ঠাও করতে চায় দেশটি। আসলে এই প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি দিয়ে কিছুই হবে না। ইতোমধ্যে সব কিছুই শুরু হয়ে গেছে। যৌথ মহড়া থেকে নিয়ে সমস্ত কিছুই চলছে। আসলে বর্তমানে হতে যাওয়া সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে একটা ফিনিশিং দেয়ার কাজ হচ্ছে মাত্র।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গত বুধবার ঢাকায় ভারতীয় একদল সাংবাদিকের কাছে জানিয়েছেন, ভারত পরিপূর্ণ একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সফরকালে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রশ্নে একটি ‘নথি’তে সই হবে। এটা হবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতামূলক নির্দিষ্ট মেয়াদভিত্তিক। এইচ টি ইমামের বরাত দিয়ে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিনিধি সুহাসিনি হায়দার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সরকারি ভাষ্য। এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের কাছে তিস্তা নিয়ে আলোচনায় চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
দ্য হিন্দু পত্রিকায় বলা হয়েছে, যে সমঝোতা হবে তাতে বলা থাকবে, ভারত বা বাংলাদেশের নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা একে অন্যকে সাহায্য করবো। তবে যৌথ সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র উৎপাদন এতে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না- সে ব্যাপারে এইচ টি ইমাম কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তাছাড়া সামুদ্রিক সহযোগিতা নিয়ে কতটুকু সম্পৃক্ততা থাকবে- সে ব্যাপারেও তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে এটুকু বলেছেন, সহযোগিতার মধ্যে ‘তথ্য, পরামর্শ, সন্ত্রাসদমন প্রশ্নে অভিজ্ঞতা’ বিনিময়ের বিষয়গুলো থাকবে।
এদিকে চীন ও জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুধু জমি বরাদ্দ দেয়ার কাজটুকুই করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে নিয়মের। এক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে দেশটি। ভারতের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দেশটির অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন ও অর্থায়ন করতে চাইছে বেজা। একইভাবে বাগেরহাটের মংলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারতকে এরই মধ্যে বরাদ্দ দেয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটিরও উন্নয়ন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এ বাবদ নেয়া ঋণ সুদসমেত আবার ফেরত দিতে হবে ভারতকেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, মিরসরাইয়ে হাজার একরের ওপর জমি চেয়েছে ভারত। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারত তৃতীয় ঋণ চুক্তিতে সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। এখানে বাইরেরসহ ভেতরের অবকাঠামোও উন্নয়ন করে দেবে বেজা। তবে অবকাঠামোর চেয়েও জরুরি বিষয় হলো, কত শিগগির ভারত থেকে বিনিয়োগ নিয়ে আসা যায়। এখানে বাংলাদেশেরও অংশীদারিত্ব থাকবে।
ভারতকে বরাদ্দ দেয়া এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব কতটুকু হবে বা আদৌ থাকবে কিনা, সে বিষয়টি এখনো নির্দিষ্ট নয়। এ নিয়ে স্বাক্ষরিত এমওইউতে বলা হয়েছে, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা এবং দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে অঞ্চলগুলোয় ব্যবসা স্থাপিত হবে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ভারতের বিধানসভা বলে আসছে, বাংলাদেশের ২০ থেকে ২২ টি পণ্যে শুল্ক ফ্রি। কিন্তু আসলে তা বাস্তবায়ন হয় না। কারণ বিধানসভা মানলেও রাজ্যসভা তা মানে না। ফলে কোনো প্রদেশে রপ্তানিতে শুল্ক ফ্রি, আবার কোনোটিতে শুল্ক দিতে হয়। এ কারণে ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাধা পুরোপুরি দূর হয়নি আদৌ। এছাড়া অশুল্ক বাধা তো আছেই। তাই সফরে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করতে আমরা জোর দাবি তুলবো’।
এছাড়া স¤প্রতি ভারতে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে যে এন্টি ডাম্পিং শুল্ক (বাজার দখলে কম দামে পণ্য ছাড়ার শাস্তিস্বরূপ শুল্ক) আরোপ করেছে। এ প্রক্রিয়া যেন বন্ধ করা হয় সে বিষয়েও দাবি তোলা হবে বলে জানান ভারত-বাংলাদেশ ব্যবসায়ীদের এ সভাপতি।
জানা গেছে, ভারতের সাথে আলোচিত পাঁচ বছর মেয়াদি এমওইউ খসড়ায় প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতার পাশাপাশি এই শিল্পের বিকাশে যৌথ উদ্যোগ, মহাকাশ প্রযুক্তি, কারিগরি সহায়তা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে এক দেশ অন্য দেশকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমারেখায় সমন্বিত টহলসহ যৌথ ও সমন্বিত অনুশীলন করবে দু’দেশ। এছাড়া উভয়পক্ষ আন্তর্জাতিক আইন, নিজ নিজ জাতীয় আইন, শর্তগুলো, নীতি এবং প্রথা মেনে নিজস্ব স্বাভাবিক কর্মকান্ড কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে সক্রিয়ভাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করবো। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র্র সচিব মো. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, নরেন্দ্র মোদি একটি নিমন্ত্রণপত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর পৃথক এক নিমন্ত্রণপত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।  
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হবে নাকি চুক্তি হবে- এমন প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক হবে বলে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, এটা গোপন কোনও বিষয় না। আপনারা সবকিছুই জানতে পারবেন। আমাদের নিন্দুকেরা যা বলছে সেটি ঠিক নয়।
তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক এখন যে অবস্থানে আছে, সেখানে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। সেখানে একটি বিষয় হলো কি হলো না, সেটি তেমন বড় কিছু নয়।
দুদেশের মধ্যে চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকের বেশির ভাগই সীমান্ত হাট স্থাপন, তথ্য ও স¤প্রচার, বেসামরিক পারমানবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূতাত্তি¡ক বিজ্ঞান, ভারতের প্রদেয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা সম্পর্কিত বলেও জানান মন্ত্রী।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুদেশের দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কোলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল, ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
অনুষ্ঠান থেকে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে। এবারের সফরে বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন, তাদের মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে সাত জন শহীদকে সম্মাননা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ১৬৬১ জনকে এই সম্মাননা দেয়া হবে।
১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দুদেশের ব্যবসায়ীদের একটি বিজনেস ইভেন্টে অংশ নেবেন। সেই ইভেন্টে বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, আইন ও বিচার মন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ৭:১৮ এএম says : 0
    What is my observation this visit will be totally failure for the Bangladesh but it will be favour for the india.Also all this agreements wil make us like under control of india,only by the name of bangladesh,our government will be ........... of india
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ৮:৪২ এএম says : 1
    মননীয় প্রধানমন্রী আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন ও নিবেদন করছি। দেশ ও জনকল্যাণে চুক্তি করুন। দেশ ও জাতীর বিপক্ষে যায় এমন চুক্তিতে হাত দিবেন না। স্বাক্ষর করবেন না। জনগণ বার বার বলছে, সামরিক ও অন্যান ক্ষতিকর চুক্তি করবেন না। জনগণ ভুল করে না। তাই দেশবাসী সঠিক কথা বলছে। আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্তে দেশের অঢেল ক্ষতি হবে। যা কোনদিন পোষনীয় হবে না। তাই আবার বলছি জনগণ ভুল করে না। ভুল করে নেতা, নেত্রী ও শাসকেরা। ভুল থেকে বাঁচুন, ইতিহাস সৃষ্টি করুন। আবার ও বঙ্গকন্যার কাছে গণতন্র ও ভেটাধিকারের জন্য আবেদন নিবেদন করে শেষ করছি। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • ওলিউল ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:৪৮ এএম says : 0
    সামরিক চুক্তি করতে হবে। ...................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ