Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিশ্বব্যাংকের আরেক প্রকল্পের অর্থ ফেরত দিলেন প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রামে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় হবে ফ্ল্যাট-ডরমিটরি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : পদ্মা সেতুর পর এবার রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রস্তাব ফেরত দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার প্রশ্নে বিদেশি বা কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। নিজেরাই করব।’
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্প ব্যয়ের বড় অংশ (১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা) অর্থায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। তবে এই প্রকল্প অনুমোদন দেননি প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রæত এ অর্থ অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যবহার করা যায় কি না- তা বিবেচনা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে ‘রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলেও এটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন না করে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে প্রকল্পটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে বাইরের প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত না করে আমরা নিজেরাই করব। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অর্থায়ন ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
গত বছর সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার বেহাত হওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগী হয় সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং খাত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তদারকি ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন করা ‘রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মন্দ ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতাও কমে আসবে বলে মনে করে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় ধরা হয় ৩৯৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিশ্বব্যাংক সহজ শর্ত দেবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়। এ অর্থের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ‘নেগোসিয়েশন’ও সম্পন্ন হয়।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য ‘বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং’ করা হবে। ব্যাংকসমূহের তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিকায়ন করা হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের লেনদেন অটোমেশনের আওতায় আসবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।
প্রকল্পটি সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মো: নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নতুন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সংযোজনের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া, নিয়ন্ত্রণ, নিরীক্ষা এবং সাইবার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে সরকারি সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা দরকার বলে মনে করে সরকার। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রকল্পে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যুক্ত না থাকাই ভালো। কেননা এর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনার সময়ও সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত।
এদিকে গতকালের একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত সরকারি বাড়ি ভেঙে আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এই প্রকল্প প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, মূলত চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ, কাতালগঞ্জ, নিজাম রোড, জাকির হোসেন রোড ও সার্সন রোডের পরিত্যক্ত সরকারি বাড়িগুলোর জায়গায় এসব নতুন ভবন তৈরি করা হবে।
এসব জায়গায় মোট ১৫টি ভবনে ৫১৯টি ফ্ল্যাট ও ৮০ কক্ষবিশিষ্ট একটি ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে। এসব ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম শহরের সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সমস্যা প্রকট উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন আবাসন পরিদপ্তর চাহিদা অনুযায়ী আবাসন সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবী নিম্নমানের ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছেন। এতে তাদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যা তাদের কর্মদক্ষতা কমিয়ে দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, চট্টগ্রামের আবাসন প্রকল্পটিসহ একনেক সাত হাজার ৮৯০ কোটি টাকার মোট সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
এসব প্রকল্পে তিন হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে আর প্রায় চার হাজার ১৪ কোটি টাকা  বৈদেশিক সহায়তা থেকে যোগান দেয়া হবে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ ‘শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্প’। এর ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
‘দেশের বিভিন্ন জেলার জেলা রেজিস্ট্রি ও সাবরেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ, ২য় পর্যায় প্রকল্প’। এতে ব্যয় হবে ৩০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলন, ২য় পর্যায় প্রকল্প’। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।
‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম (৪র্থ পর্ব)’, যেখানে ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এছাড়া ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীরের ভাঙন হতে বিভিন্ন এলাকা রক্ষাকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজ প্রকল্প’ এবং ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ- রাজশাহী জোন প্রকল্পের’ অনুমোদন দেয়া হয় একনেক বৈঠকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ