Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাওর রক্ষা বাঁধে ধস আহাজারি বাড়ছে কৃষকের

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে কয়েক লাখ হেক্টরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগ


ইনকিলাব ডেস্ক : অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে কয়েক লাখ হেক্টর জমির বোরো ফসল। সেই সঙ্গে লীন হয়ে গেছে কৃষকের সব স্বপ্ন-আশা। ফলে কৃষক পরিবারে চলছে আহাজারি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পাউবো ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে সময় মত বাঁধ সংস্কার না করা এবং নামকাওয়াস্তে সংস্কারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাওর অঞ্চলের একমাত্র অর্থনীতি তথা কৃষকের ভাগ্য বোরো ফসল। হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা এখন দিশেহারা।
সুনামগঞ্জে কৃষকের কান্না থামছে না
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ও অতিবৃষ্টিপাতে জেলার বিশাল বিশাল হাওরের ফসল ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে, তা এখনও অব্যাহত আছে। গত কয়েকদিনে জেলার ১১ টি উপজেলার অধিকাংশ হাওর ডুবে গেছে। যে কয়েকটি হাওরের ফসল এখনও আছে, তাও ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যে কোন সময় এ সকল হাওর তলিয়ে যেতে পারে পানিতে। অতিবৃষ্টি,পাহাড়ি ঢল ও দুর্বল হাওর রক্ষা বাঁধের কারণে জেলার এ সব হাওরের ফসল এখন পানির নিচে। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাওর এলাকায় কৃষকদের কান্না থামছে না। কাঁদতে কাঁদতে তাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। জেলার ৩ লক্ষাধিক কৃষক পরিবারে অন্ধকার নেমে আসছে।
সুনামগঞ্জে এবার ২ লক্ষ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। কিন্তু বৈশাখ মাস আসার আগেই ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় এক এক করে তলিয়ে যায় হাওর। ধানের ছড়া বের হতে না হতে বৃষ্টির পানি ও বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া কৃষকদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। দেখতে দেখতে জেলার অধিকাংশ হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। সুনামগঞ্জ সদর, ধর্মপাশা, দিরাই, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর, শাল্লা, ছাতক ও তাহিরপুরের বড় হাওরগুলো নিমজ্জিত। এ সকল হাওরের কৃষক পরিবারে দেখা দিয়েছে মহাদুর্যোগ । তাদের সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে বৈরী আবহাওয়া ও দুর্নীতিবাজ হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণকারীরা। এ এলাকার কৃষকদের একমাত্র ভরসা বোরো ফসল। এক ফসলী বোরো জমির উপর নির্ভর করে তাদের জীবন জীবিকা। কৃষকরা বোরো ফসল ঘরে তুলে আগামী দিনের পথ চলার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু এ ফসল হারিয়ে তাদের মাথায় এখন হাত। তারা এখন সর্বস্বান্ত। অনেক কৃষক ঋণ করে বোরো চাষাবাদ করেছিলেন। কীভাবে তাদের ধার দেনা শোধ করবেন সে চিন্তায় বুক ফেটে যাচ্ছে। মধ্যনগর থানার কৃষক সাইদুল বলেন, চোখের সামনে ফসল তলিয়ে গেল। ফসল তলিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। ফসল হারানোর বেদনা যে কত কষ্টদায়ক, তা বুঝানো মুশকিল। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। তার ক্ষেত ছিল ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল সোনা মড়ল হাওরে। এ হাওরটি সোমবার রাতে বাঁধ ভেঙ্গে ডুবে গেছে। বৃহৎ হালির হাওরের ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। জামালগঞ্জ উপজেলার বিশাল মাটিয়ান হাওরসহ ছোট বড় প্রায় সকল হাওরের ফসল ডুবে গেছে। ধর্মপাশার একমাত্র ধানকুনিয়া হাওর ছাড়া প্রায় সব ক’টি হাওর ডুবে গেছে। সবচেয়ে বেশী ফসল তলিয়েছে ধর্মপাশা উপজেলায়।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ শ’ ২০ কোটি টাকা। সরকারী হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ এত কম দেখালেও প্রকৃত পক্ষে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশী। জেলার ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টরের মধ্যে অধিকাংশ জমি ডুুবে গেছে। তাই বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা দাবি করছেন বোরো ফসলের হাওর নাই বললেই চলে। জেলার প্রায় ৮০ ভাগ ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলার অধিকাংশ হাওর বাঁধ ভেঙ্গে ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা পানি উন্নয় বোর্ড, ঠিকাদার ও পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন কমিটি) কে দায়ী করেছেন। সচেতন মহলসহ কৃষকরা বাঁধ নির্মাণকারী দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও পিআইসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরদ্ধে স্থানে স্থানে বিক্ষোভ করছেন এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন।
দিরাইয়ে নতুন করে বাঁধ ভেঙে হাওর প্লাবিত
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার, দিরাই থেকে জানান,
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বশীলদের গাফিলতির কারণে এ বছরও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে বাঁধের টেকসই কাজ না করেই। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আর এ কাজে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সরাসরি তদারকিতে না থাকায় সরকারি অর্থ লোপাটকারী দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও কার্যত তারা এ কাজে সংশ্লিষ্ট না থাকায় কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। সময়মতো বেড়িবাঁধের কাজ না করায় গতকালও দিরাইয়ে একটি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পৌরসভার ঘাগটিয়া বাঁধটি গতকাল (মঙ্গলবার) ভেঙে জারলিয়া নামক হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। ফলে হাওরে থাকা জমিসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৪শ’ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
কিশোরগঞ্জে কৃষকের মাঝে কান্নার রোল
এ কে নাছিম খান জানান, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অন্তত ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক বাঁধ। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের মাঝে কান্নার রোল পড়ে গেছে। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার হাওরের পাঙাইয়া বাঁধটি ভেঙে কয়েকশ’ একর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। পাশের হাসনপুর বাঁধটি রক্ষার জন্য শতাধিক কৃষক দিন রাত পরিশ্রম করছেন। বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে মিঠামইন, করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের স্বপ্ন বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এই চিন্তায় কৃষকদেরকে পেয়ে বসেছে। কেবল বাঁধ ভেঙ্গে নয়, হাওরের ভিতর দিয়ে প্রবহমান নদীগুলোর পাড় উপচে পানি বোরো জমিতে গিয়ে পড়ছে। আর তার সাথে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। পুরো হাওর এলাকার একই চিত্র। অনেক কৃষক জমিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
বিস্তীর্ণ হাওরে সোনালী রঙ ধারণ করছিল ধান। বৈশাখে ধান কাটার স্বপ্ন দেখছিল কৃষক। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ধান। অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কোনো রকমে কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। মিঠামইনের পাঙ্গাইয়া বিলের বাঁধ ভেঙ্গে জমিতে পানি ঢুকায় কৃষক সবুজ মিয়ার ২০ একর কাঁচা বোরো জমি তলিয়ে গেছে। এখন তিনি ওই জমির ধান কাটতে শ্রমিক পাচ্ছেন না। কৃষক দানিছ মিয়া জানান, তার জমি পুরোটাই পানির নিচে। ধারদেনা ও ঋণ করে তিনি এবছর বোরো আবাদ করেছিলেন। জমি পানির নিচে থাকায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। মিঠামইন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ময়না আক্তার জানান, হাওরের কৃষকরা যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে বোরো মাড়াই করার কথা। ঠিক সে সময় বোরো ফসল পানির নিচে থাকায় তারা কাঁদছে। তাদেরকে সান্ত¦না দেয়ার কোনো ভাষা নেই।
মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাফিউল ইসলাম জানান, কেবল মিঠামইনেই অন্তত ৫ হাজার একর বোরো জমি বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
নেত্রকোনায় তলিয়ে গেছে
২শ’ কোটি টাকার ফসল
এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ভারী বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের চর-হাইজ্দা বেড়িবাঁধের জালালপুরে ও খালিয়াজুরী উপজেলার কির্তনখোলা বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার হাওরের সোনালী ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে ১৬টি ফসল রক্ষা বাঁধ । এছাড়াও অব্যাহত বর্ষণে জেলার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলের কাঁচা পাকা ধানের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মোহনগঞ্জের চর-হাইজ্দা ফসল রক্ষা বাঁধ গত রোববার দুপুরে এবং খালিয়াজুরীর কির্তনখোলা বাঁধ গত সোমবার সকালে ভেঙ্গে হাওরের কাঁচা-পাকা ফসল তলিয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন বাঁধ উপচিয়ে হাওরে হু হু করে পানি ঢুকছে। নেত্রকোনা জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ২টা পর্যন্ত সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯.৯৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে, কংশ নদীর পানি বিপদ সীমার ৮.২২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে, ধনু নদীর পানি বিপদ সীমার ৫.১৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে, উব্দাখালী নদীর পানি বিপদ সীমার ৩.৬২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ী ঢলে ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে খালিয়াজুরী উপজেলার চুনাই বাঁধ, ধৈলং বাঁধ, মাক্লাইন বাঁধ, হরিপুর বাঁধ, নালুয়ার বাঁধ, আশাখালি বাঁধ, নাওটানা সøুইস গেইট বাঁধ, গঙ্গাঁবদর বাঁধ, ঝালখালির বাঁধ, পাইয়ার বাঁধ, আশালিয়া কুড়ির বাঁধ, মায়ারচর বাঁধ, মালিহাতা বাঁধ, গোরস্তানের নামা বাঁধ, ফেনির বাঁধ ও বয়রা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা জানায়, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো দুই তিন দিনের মধ্যে মেরামত করা না হলে এসব বাঁধ ভেঙ্গে পাঙ্গাসিয়া হাওর, ছায়ার হাওর, চৌতারা হাওর, হালদা হাওর, নাজিরপুর হাওরের ফসল যে কোন সময় পানির নীচে তলিয়ে যেতে পারে। এতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছানোয়ারুজ্জামান জোশেফ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতে স্থানীয় কৃষকদের এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। এতে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার সংগ্রাম করছেন।
নেত্রকোণা জেলা পরিষদ সদস্য ও খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম আবু ইছহাক বলেন, এ উপজেলায় পাউবোর কাজে এ বছর বাঁধে বরাদ্দের চার ভাগের এক ভাগ কাজও তারা করেননি। সময় মতো ও সঠিক নিয়মে তারা কাজ না করায় এখানকার সবগুলো বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধগুলো টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। প্রতি বছরই পাউবো এমন করে থাকে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
খালিয়াজুরি কৃষক লীগের সভাপতি তপন বাঙালি ও কৃষক মোহন দেব রায় বলেন, পাউবো যদি এখানে বরাদ্দের শতভাগ কাজ সঠিক সময়ের মধ্যে শুরু ও শেষ করতো তাহলে হাজার হাজার একর ফসল আজ হুমকির মাঝে পড়ত না।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, নেত্রকোনা জেলায় ছোট বড় ১শ’ ৪০টি হাওর রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার দুটি বাঁধ ভেঙ্গে এবং মদন, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতি ২শ’ ৯ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে জানতে নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু তাহের-এর ফোনে বার বার চেষ্টা করলেও মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সিলেটে তলিয়ে গেছে ২৩ হাজার হেক্টর জমি
খলিলুর রহমান জানান, সিলেটে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বেড়েছে পানি। যে কোন সময় বন্যা হতে পারে বলে ধারণা করছেন নদীপাড়ের মানুষ। এছাড়াও বৃষ্টিপাত ও ঢলের প্রভাবে বৃহত্তর সিলেটের সব হাওরের ধানের জমি এখন পানির নিচে। অসময়ের এ বন্যায় সিলেটের ২৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে না এলে এবং বৃষ্টি না থামলে উপরিভাগের জমিও পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, বুধবার (২৯ মার্চ) থেকে সিলেটে কখনো মুষলধারে, কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। উজানে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় পানি বেড়েছে সিলেটের নদী ও হাওরগুলোতে। তারই প্রভাবে উজানের ঢল নামতে শুরু করে।
সিলেটের আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, গত ২৯ মার্চ থেকে সিলেট বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১শ’ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে এখনও প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পানি আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়ার এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ