Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেরানীগঞ্জে রাজউকের অধিগ্রহণ কাজ বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাজার হাজার উদ্বিগ্ন বাসিন্দার মানববন্ধন বিক্ষোভ
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা : কেরানীগঞ্জে রাজউকের ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা না করলে পরবর্তীতে আরো কর্মসূচি গ্রহণ করাসহ কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে তিন ইউনিয়নের ভ‚মি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে। গতকাল আবার সরেজমিনে এলাকায় গেলে ভ‚মি রক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন ফারুক এই তথ্যটি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সোমবার আমরা হাজার হাজার লোক নিয়ে রাজউকের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা আমাদের দাবী আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাব। এদিকে তারানগর, কলাতিয়া ও সাভারের ভাকুর্তা এই তিনটি ইউনিয়নের ১৬ মৌজায় রাজউক কর্তৃক প্রায় সাড়ে ৫ হাজার একর ভ‚মি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে গত সোমবার সকাল ১০টায় হাজার হাজার ভুক্তভোগী এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। কলাতিয়া বাজার এলাকা থেকে শুরু করে বছিলা সেতু পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জানান, রাজউক তিন ইউনিয়নে ১৬ মৌজায় সাড়ে ৫ হাজার একর ভ‚মি অধিগ্রহণ করলে এলাকার সকল, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বসতবাড়ি, কৃষিজমি, কবরস্থানসহ সকল জমিজমা থেকে এলাকাবাসীকে সমূলে উচ্ছেদ হতে হবে। আমরা জীবন দিব তবু বাপদাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে যাব না। মানববন্ধন কর্মসূচিটি সকাল ১০টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। মানববন্ধন কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহŸায়ক শাহীন আহমেদ, তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশরাফ হোসেন ফারুক, কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহের আলী, শাক্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন লিটন, আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে কলাতিয়া বাজার থেকে বছিলা সেতু দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। তবে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রাজউকের অধিগ্রহণের তালিকাভুক্ত ভূমির মৌজাগুলো হচ্ছে, কলাতিয়া, তারানগর ও সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের আহাদীপুর, নিশানবাড়ি, বাড়িলগাঁও, কাশারিয়া, ভাওয়াল, নিমতলী, দেউলি, বেউতা, দক্ষিণ বাহের চর, উত্তর বাহের চর, বাকুরতা, বিনামালি, ছাগলাকান্দি, বাছুলিসহ আরো কয়েকটি মৌজা। কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, তারানগর, কলাতিয়া ও সাভারের ভাকুর্তা এলাকায় চারশ’ বছরের বসতি। সম্প্রতি পত্রিকায় খবর পড়ার পরে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজউক এই জমি অধিগ্রহণ করলে আমাদের ভিটেমাটি কবরস্থান সবই হারাতে হবে। আমি আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেরানীগঞ্জের মানুষের এই আন্দোলন বুঝতে পারলে তিনি রাজউকের এই অধিগ্রহণের হাত থেকে কেরানীগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নের মানুষকে রেহাই দিতে পারে। তিনি আরো জানান, আমি রাজউকের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন অধিগ্রহণের ব্যাপারটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। সরকার ইতিমধ্যে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও পোর্ট, কেন্দ্রীয় কারাগার, বিসিএস একাডেমি, ওয়াসাসহ বিভিন্ন কাজে হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন। আমরা রাজউককে তার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করছি। কলমার চরের কৃষক মহসিন বলেন, আমাদের ৪ বছরের বসতি ভিটেমাটি ও কৃষিজমি রাজউককে দেব না। জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশরাফ হোসন ফারুক বলেন, তারানগর, কলাতিয়া ও ভাকুর্তা এই তিনটি ইউনিয়নে দেড় লক্ষ লোকের বসবাস। এখানে প্রায় ৪ হাজার পাকা বাড়িঘর রয়েছে। আমাদের এই বসত বাড়ি ও কৃষি জমি কোনভাবেই উচ্ছেদ হতে দিতে পারিনা। এই তিনটি ইউনিয়নে ৪শ’ বছরের বসতি। আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আবেগ অনুভূতি আছে। আমরা যুগ যুগ ধরে একই সংস্কৃিত ও সামাজিক বন্ধনে বসবাস করে আসছি। আমাদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা হলে আমরা অন্য কোথায়ও যেয়ে খাপ খাওয়াতে পারব না। এখানে স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা, কবরস্থান রয়েছে। কিছু ভোগবিলাসী মানুষের পরিকল্পনা আমরা কোনভাবেই মানতে পারব না। আমাদের এই জমি অধিগ্রহণ করলে এখানকার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পথে বসা ছাড়া আর তাদের কোন পথ থাকবে না। তাই যেকোন মূল্যে আমরা রাজউককে এখানে জমি অধিগ্রহণ করতে দিব না। তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনির হোসেন মিনু বলেন, আমাদের এই জমি নিয়ে গেলে আমরা কোথায় যাব। তাই সরকারকে অনুরোধ করব সরকার যেন তার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে তাহলে আমরা আন্দোলন করব। মরে যাব। কিন্তু আমাদের বাপ-দাদার বসতভিটা ও কৃষি জমি দেব না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ