পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিডল ইস্ট মনিটর : গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির মস্কো সফরকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার সর্বশেষ নিদর্শন বলে পাশ্চাত্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রেক্ষাপটে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রুহানির এ সফরকালে বাণিজ্য ও অর্থনীতি ছিল প্রধান আলোচনার বিষয়, বিশেষ করে ইরানের জ¦ালানি খাতে রুশ বিনিয়োগ। কিন্তু সিরিয়া ও ব্যাপকভিত্তিক আঞ্চলিক বিষয়গুলোও আলোচনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নিঃসন্দেহে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রুশ অস্ত্র বিক্রয়সহ সামরিক সহযোগিতা প্রেসিডেন্ট রুহানি ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যকার আলোচনায় ছিল বলে ধারণা। কিছু খবর অনুযায়ী, রাশিয়া ইরানে এক হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির কথা বিবেচনা করছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কিছু বলা হয়নি।
তবে খবরের শিরোনামের পেছনের খবর যা শোনা যাচ্ছে তা হলো রাশিয়া ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্কে জটিলতা ও পারস্পরিক অবিশ^াসের সৃষ্টি হয়েছে। কৌশলগত ক্ষেত্রে দু’দেশের অবস্থান অভিন্ন হলেও অন্যান্য বিষয়ে তাদের মধ্যে মত ও প্রত্যাশার ব্যাপারে পার্থক্য রয়েছে। তবে সিরিয়াতে তারা একপক্ষ হয়ে লড়াই করছে। অস্বস্তিকর সম্পর্ক ঃ পাশ্চাত্য মিডিয়া এবং এমনকি বিশেষজ্ঞরাও ক্রমবর্ধমানভাবে রাশিয়া-ইরান সম্পর্ককে কৌশলগত জোট বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে কঠোর ভাষায় বললে ইরান রাশিয়ার সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক জোটে নেই। বস্তুত ইরানের একজনই আনুষ্ঠানিক মিত্র, আর সে হচ্ছে সিরিয়া।
আরো কথা হচ্ছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান শক্তিধর দেশগুলোর সাথে কোনো জোটে প্রবেশের বিরোধী। বাস্তব ক্ষেত্রে ইরানি পররাষ্ট্রনীতিতে ১৯৭৯ সাল থেকে হয় সমপর্যায়ের নয় দুর্বলতর দেশগুলোর সাথে (যেমন সিরিয়া) এবং এমনকি রাষ্ট্রবিহীন সংগঠনের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। তবে একই সাথে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে শক্তির ভারসাম্য নীতি অনুসরণের কথাও বলা হয়েছে।
রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দু’দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের পক্ষে নয়। ১৮ ও ১৯ শতকে রাশিয়া-পারস্য যুদ্ধসমূহ পারস্য সা¤্রাজ্যকে ছোট করে আনে এবং ককেশাসের নিয়ন্ত্রণ ইরানের হাতছাড়া হয়ে যায়। ককেশাস হারানো এবং তার বেদনা আধুনিক ইরানি মানসে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। ইরানি দৃষ্টিকোণ থেকে এ ঘটনা রাশিয়া-ইরান সম্পর্কে একটি ক্ষতিকর প্রেক্ষাপট রচনা করে রেখেছে, যা আজো অপসৃত হয়নি।
অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের সম্পূর্ণ ক্ষতির ক্ষতিপূরণের অংশ হিসেবে ইরান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে অস্বস্তিকর সম্পর্ক বহাল রাখে। এ সম্পর্ককে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা হিসেবে দেখা যেতে পারে আর আংশিকভাবে একে বলা যায় বিপ্লব-পূর্ব সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মৈত্রীর সংশোধন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সময় তা শতক না হলেও কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উষ্ণতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে নাগর্নো-কারাবাখ বিরোধ, কাস্পিয়ান সাগরের আইনি মর্যাদা আনুষ্ঠানিকীকরণ ও দ্বিপক্ষীয় জ¦ালানি খাত সহযোগিতাসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে অভিন্ন মত ও স্বার্থ রয়েছে।
সর্বোপরি ইরান ও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অভিন্ন মত পোষণ করে, আংশিকভাবে মূল্যবোধের ভিত্তিতে। তবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অধিকতর সুবিধাজনক শর্তে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকার প্রত্যাহার শুরুর লক্ষণ এ অঞ্চলে বৃহত্তর রাশিয়া-ইরান সহযোগিতা দ্রæততর করেছে, বিশেষ করে সিরিয়ায় যেখানে তাদের হস্তক্ষেপ বাশার সরকারকে আশু পতন থেকে রক্ষা করেছে।
রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে নজিরবিহীন সম্পর্ক সত্তে¡ও এ সম্পর্ককে অতিরঞ্জিত করে না দেখা এবং স্বল্প থেকে মাঝারি মেয়াদে এ থেকে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না করা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইরান ও রাশিয়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মৈত্রী জোটের আবর্তে আবদ্ধ নয়। ঐতিহাসিক, আদর্শগত ও বাস্তব ঘটনাবলি তাদের মধ্যে এ রকম কিছুর বিপরীতে।
উদাহরণ হিসেবে সিরিয়ার কথা বলা যায়। আপাতদৃষ্টিতে দু’শক্তিই একদিকে। উভয়েই লড়াইরত সিরিয়া সরকারকে দুর্বল হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সম্ভব হলে তারা সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সমবেত বিরোধী গ্রæপগুলো এবং ইসলামী জিহাদি দলগুলোকে ধ্বংস করতে ইচ্ছুক। দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের এ মিল ইরানকে সিরিয়াভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুগুলোতে বিমান হামলা চালাতে রুশ জঙ্গি বিমানগুলোকে একটি ইরানি বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি প্রদানে শক্তি জুগিয়েছে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে, যেখানে দু’দেশের লক্ষ্য এক, তাদের অবস্থান কিন্তু সম্পূর্ণ এক নয়। ইরানের প্রতি ইচ্ছাকৃত ধমক হিসেবে রাশিয়া ইসরাইলি জঙ্গি বিমানের সিরিয়ার আকাশসীমা লংঘন ও কোনো দায় ছাড়াই বোমাবর্ষণের অনুমতি দিয়েছে। কার্যত, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়া সিরিয়ার যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার পর ইসরাইল কমপক্ষে ৯ বার লেবাননি হেজবুল্লাহ ও সিরীয় লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ বিমান হামলা চালায় দু’সপ্তাহ আগে এবং এ সময় সিরিয়ার আরো অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
আরো ব্যাপকভাবে বললে, সিরিয়ার যুদ্ধের প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে রাশিয়া ও ইরানের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য বাড়ছে, যা এ যুদ্ধ অবসানে পাশ্চাত্যের উদ্যোগের প্রতি তার উন্নততর কূটনৈতিক মর্যাদার সমর্থন প্রদানের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে সরে আসার ক্ষেত্রে শক্তির অসামঞ্জস্যের বিষয়টি ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থিংক ট্যাংক শাখা রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের অন্যতম পরিচালক মোতফা জাহরানি তুলে ধরেছেন।
ইরান ও রাশিয়া বন্ধু হতে পারে, এমনকি গুরুত্বপর্ণ আঞ্চলিক ইস্যুতে অস্বস্তিকর অংশীদারও হতে পারে, তবে তারা কখনো জোটবদ্ধ হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।