Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত সফরের আগে সম্ভাব্য চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ৬:১৯ পিএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের আগেই ‘সম্ভাব্য চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক’ জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি, সরকার প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের পূর্বেই তার সফরকালে যেসকল চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তার সবকয়টি জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করবে। জনগণেই এদেশের মালিক। দেশে ও জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ সকল চুক্তি এবং সমঝোতার স্মারকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানার ও মতপ্রকাশ করার অধিকার তাদের(জনগণ) রয়েছে।

আমরা বলেতে চাই, জনগণকে পাশ কাটিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, জনস্বার্থ ও রাষ্ট্র বিরোধী কোনও চুক্তি অথবা সমঝোতা স্মারক জনগণ মেনে নেবে না। দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনও চিঠি পাঠাবেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, যখন টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রশ্ন উঠে, তখন আমাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন যে, আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়েছিলো যে, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই, আপনাদের হাতকে শক্তিশালী করতে চাই, আপনাদের বার্গেনিং ক্যাপাবিলিটিটা বাড়ে, তখন তারা রেসপন্স করেননি।

এখন যেহেতু আমরা কিছুই জানিনা, দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী তিনি কিভাবে এই চিঠি লিখবেন, আমরা সেজন্যই জানতে চাই, কি ধরণের, কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে যাচ্ছে, সেটা আমরা জানতে চাই। তখন এই প্রশ্নটি আসবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে আগামী ৭ এপ্রিল দিল্লী যাচ্ছেন। দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে তার সফরের সকল প্রস্তুতি চলছে।

প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সমরাস্ত্র প্রসঙ্গে

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতের সদ্য সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকরের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর, ভারতীয় সেনা প্রধানের ঢাকা সফর এবং ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের কারণে প্রতিরক্ষা চুক্তির সইয়ের ধারণাটি জনমনে আরো ঘনীভূত হয়েছে। যদি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হয়, তবে এই চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকে কী আছে বা কী থাকছে, তা আদৌও স্বচ্ছ নয়। জনগণ এই চুক্তি বা সমঝোতা সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকারে এই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনও আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়নি। অনির্বাচিত জাতীয় সংসদেও এসব চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। প্রতিরক্ষার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।”

প্রতিরক্ষার মতো চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে সকল গণতান্ত্রিক দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে পরামর্শের রেওয়াজের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই রেওয়াজ ভারতেও রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে জনগণকে কিছুই জানায়নি।

ভারতের অস্ত্র বিক্রির ক্যাপ্টিভ মার্কেট

সম্ভাব্য প্রতিরক্ষার ‍চুক্তির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে প্রতিরক্ষার নামে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলার বা চার হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করবে বলে ভারতীয় ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই ঋণ দিয়ে বাংলাদেশকে ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে হবে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে ১৯৫০ সালের পর অস্ত্র আমদানিতে এক নম্বরে আছে ভারত। যে দেশ নিজেই অস্ত্র আমদানিতে এক নম্বরে যে দেশের কাছ থেকে কেনো অস্ত্র কিনতে যাবে? সাশ্রয়ী ও আধুনিক চীনা অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ভারতের প্রস্তুতকৃত অধিক দামের অস্ত্র ক্রয় কতটুকু যৌক্তিক তা নিশ্চয়ই প্রশ্নের দাবি রাখে।অস্ত্র প্রস্তুতকারী নতুন দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে সমরাস্ত্র বিক্রির নিশ্চিত ক্যাপ্টিভ মার্কেট হিসেবে পেতে চায়।

গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়ে যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিলো তা থেকে ‘বাংলাদেশ কি পেলো বা দিলো, তা দেশবাসীর কাছে আজো স্পষ্ট নয়’ বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভারতের সাথে সব সময়েই সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক চাই কিন্তু কোনোভাবেই আমাদের সার্বভৗমত্বকে খাটো করে নয়। বিএনপি দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে আরো দৃঢ়, বন্ধুত্বপূর্ণ ও পারস্পরিক আস্থাশীল দেখতে চায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, জনগণের মধ্যকার সৌহার্দপূর্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আরো সুসংহত করাই দুই দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হওয়া উচিৎ। পারস্পরিক সমতা, মর্যাদা, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় আমাদের নীতি। আমরা কখনোই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ডকে জায়গা দেবো না।আমরা একই সঙ্গে প্রত্যাশা করি, ভারতও আমাদের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকবে। উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্জাতিক অথবা আঞ্চলিক সব ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করাই বিএনপির ঘোষিত নীতি।আমরা বাংলাদেশ-ভারত রাষ্ট্রদ্বয় এবং দুই দেশের জনগনের মধ্যে সম্পর্ক চাই, সেটাই হবে টেকসই সম্পর্ক।

সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে যদি আন্তরিকভাবে সমাধানে ভারত এগিয়ে আসে, তাহলে এদেশের মানুষের মনে সৃষ্ট আস্থার ঘাটতি দূরীভূত হবে। ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের পারস্পরিকভাবে লাভজনক ও কল্যাণমূলক সম্পর্কে প্রাকৃতিকভাবে আরো দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হবে। এজন্য আলাদা করে কোনো প্রতিরক্ষা বা সমঝোতা স্মারকের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। লিখিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতার প্রশ্ন তখনই উঠে যখন পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার ঘাটতি থাকে।”

ভারতের সাথে অমীমাংসিত বিষয়সমূহ

দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয় যেমন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি, গঙ্গাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিসসা, শুল্ক-অশুল্ক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ বাংলাদেশ সরকার দাবি করে দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে সর্বকালের উষ্ণ পর্যায়ে আছে। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে কেনো প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে তা বোধগম্য নয়।

অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের সুবিধা পাওয়ার বিষয়সমূহ যেমন নামমূল্যে ট্রানজিট প্রদান, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে বন্দর সুবিধা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ঐক্যমত্যে বাংলাদেশের অবদান অনন্য’ বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ।

যেখানে বাংলাদেশ নিজেই প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর অধিকাংশই নির্ভরশীল, সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় নাগরিকরা বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে যা রেমিট্যান্স সূত্রে ভারতীয় আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস বলে জানা যায়। সেভেন সিস্টার্স অর্থাৎ উত্তর- পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়েছে। একজন ভারতীয় কূটনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এখন ভারতের উদার হওয়া উচিত, এখন সময় দেনা পরিশোধের।

নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনী অবস্থান নিয়ে আমাদের ছাত্র –যুব কর্মীদের গ্রেফতার করছে। সারাদেশে এখন এই গ্রেফতার চলছে। আজকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গুলশান থানা যুব দলের ৪ কর্মী মো. হাসান, মো. লিটন, ইব্রাহিম খলিল ও রিপনকে গ্রেফতার করেছে। আমরা এসব গ্রেফতারের নিন্দা ও এসব বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ