Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচারক সঙ্কটে আদালত

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : বিচারক সঙ্কটে নিম্ন ও উচ্চ আদালত। ব্যাহত হচ্ছে বিচারকার্য। বাড়ছে মামলার জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি। বর্তমানে সুুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাতজন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৮৬ জন মোট ৯৩ জন বিচারক রয়েছেন। এর মধ্যে অবসরে যাবেন ৫ জন। আর নিম্ন আদালতের সাড়ে ৩শ’ বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব পদ পূরণে সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেয়া হলেও এখনো পূরণ হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদালত অঙ্গনে এক ধরনের বিচারক সঙ্কট চলছে। বিচারিক সেবার মান বৃদ্ধি করতে এবং আদালতের মামলা জট ও বিচারপ্রার্থীরদের ভোগান্তি নিরসনে দ্রুত পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিচারক সঙ্কট বলা যাবে না। কারণ এর আগে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে আরো কম ছিল। তিনি আরো বলেন, খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হবে। নিম্ন আদালতের শূন্যপদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব শূন্যপদ রয়েছে তা পূরণে প্রসেসিং চলছে। আমি জুডিসিয়াল কমিশনকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতের শূন্যপদ পূরণ করা যাবে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বিচারক নিয়োগে আমরা তো কিছু বলতে পারি না। এটা সরকারের বিষয়। তবে আমরা আইনজীবীরা সব সময় চাই যাতে আদালতে মামলার জট কম কমানোর জন্য সরকারের এ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, এতে করে আদালতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি থাকবে না। সঙ্কট বলা যাবে না। তবে দ্রুত পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বর্তমানে বিচারক রয়েছেন ৯৩ জন। আপিল বিভাগে সাতজন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৮৬ জন। হাইকোর্টের ৪ জন বিচারপতি চলতি বছর অবসরে যাবেন। আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যাবেন ১ জন। বছর শেষে উভয় বিভাগে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮-তে। বছরের শুরুতে ১০১ জন বিচারক ছিলেন। বিশ্লেষণে দেখা যায়, আপিল বিভাগের মামলা অনুপাতে একজন বিচারকের নিষ্পত্তি করতে হবে মাথাপিছু ১ হাজার ৮৫৭টি মামলা। হাইকোর্টের একজন বিচারকের মাথাপিছু ৪ হাজার ৮৮৪ মামলা বিচারাধীন আছে।
২০১৬ সালের শুরুতে মামলা ছিল চার লাখ সাত হাজার ৫৮৬টি। সে বছর বিচারকের সংখ্যা ছিল ১০১। জানুয়ারিতেই দুই বিচারক অবসরে যান। বিচারক ছিলেন ৯৯ জন। ওই বছর মামলা দায়ের হয় ৮০ হাজার। সব মিলে বছর শেষে মামলার সংখ্যা আরো ৩১ হাজার ৮০টি বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে বিচারক ছিলেন ৯৬ জন। হাইকোর্ট বিভাগে ১০ জন বিচারক নিয়োগের পর ১০১ বিচারক থাকেন। বছরের শুরুতে দুই বিভাগে মামলা ছিল তিন লাখ ৭৬ হাজার ৩৮৪টি। মামলা দাখিল হয় ৭৮ হাজার ৭৫৪টি। বছর শেষে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় চার লাখ সাত হাজার ৫৮৬টি। এ বছর আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের যাত্রা শুরু হয় মোট চার লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৬টি মামলা নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও বহুবার সৎ ও দক্ষ বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ জন্য সাধারণ আইনজীবীরা আইন প্রণয়নে কথাও বলেছেন।
সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে নিম্ন আদালতে প্রায় সাড়ে ৩০০-এর মতো পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এসব শূন্যপদ পূরণ করা হয়নি। কয়েকটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব পদ পূরণসহ নিম্ন আদালতের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো এসব সমস্যার সমাধান হয়নি বলে জানা যায়।
জানা গেছে, ছয় জেলায় জেলা ও দায়রা জজের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া জেলা জজ পদমর্যাদায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পদ ২০টি, বিশেষ জজের ৪টি, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সদস্যের পদ ৩টি, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পদ ২টি এবং শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের ২টি পদ খালি রয়েছে। এর বাইরে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার প্রেষণে ৭টি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সমপর্যায়ের পদ খালি রয়েছে ৯টি। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সমপর্যায়ের ১৬টি পদ খালি রয়েছে। সিনিয়র সহকারী ও সহকারী জজ পর্যায়ের পদ খালি রয়েছে ১২৩টি। আর সবচেয়ে বেশি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদ খালি পড়ে আছে ১৫৯টি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বরিশাল ও চট্টগ্রামের পদও শূন্য রয়েছে। চট্টগ্রামের একটি এবং রাজশাহীর শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের পদও শূন্য রয়েছে।
এর বাইরে ঢাকার ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য, ঢাকার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য, ৬৪টি জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আইন কর্মকর্তার পদও বর্তমানে শূন্য রয়েছে।
সিএমএম ও সিজেএম আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ২৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৮টি, সিলেট বিভাগের ৭টি, খুলনা বিভাগের ২৬টি, বরিশাল বিভাগের ১৪টি, রাজশাহী বিভাগের ৩০টি এবং রংপুর বিভাগের ২৯টি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার ঢাকা বিভাগের ৩২টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি, সিলেট বিভাগের ৯টি, খুলনা বিভাগের ১৯টি, বরিশাল বিভাগের ১১টি, রাজশাহী বিভাগের ১৮টি এবং রংপুর বিভাগের ২৫টি খালি রয়েছে বলেও জানা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ