পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতিরিক্ত যাত্রী ছিল লাল বোটে : স্বজনহারাদের আহাজারি
স›দ্বীপ (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : স›দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ৩২ জনকে। ঘাটে নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। স্বজনহারাদের কান্নায় গুপ্তছড়া ঘাটে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
রোববার রাতে নৌকাডুবির পর গভীর রাতে একে একে লাশ ভেসে ওঠে। এ পর্যন্ত যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেনÑ স›দ্বীপ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনমোহন জলদাসের পুত্র বরদা জলদাস (৫০), বাউরিয়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খুরশেদ আলমের পুত্র সালাউদ্দীন (২৭), হরি জলদাসের পুত্র সচিন্দ্র জলদাস (৫৫), নোয়াখালীর হাজী রুহুল আমিন (৫০)। এছাড়া স›দ্বীপ বাতেন মার্কেট মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ আমিনুর রসুলের (৫০) লাশ নোয়াখালী সুবর্ণচর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। নৌ দুর্ঘটনায় এখনও ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। দুর্ঘটনার প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর এখনও পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। সরকারিভাবে নিখোঁজের সংখ্যা ১৮ জন নির্ধারিত করা হলেও প্রকৃতভাবে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। স›দ্বীপ থানা এবং উপজেলা প্রশাসন ৩০-৩২ জন উদ্ধারের কথা জানালেও তাদের কাছে এর সমর্থনে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যাদি পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে প্রাপ্ত নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জোবায়ের, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওসমান গনি, ইউছুপ আলম, আনোয়ার হোসেন শিপন, মো: নিজাম-বাউরিয়া, কামরুজ্জামান বিক্রয় প্রতিনিধি ইনসেপ্টা, হারুনুর রশিদ-কিশোরগঞ্জ, সামছু-টেকনাফ, শিশু তাহসিন ও তার বোন শিশু নিহা-মুছাপুর, হাফেজ উল্ল্যা-মুছাপুর, মাইনুদ্দীন-কাছিয়াপাড়, মাসুদ-মুছাপুর, হাসান-বাউরিয়া, শিশু সামান্তা ও তার মা বারেয়া আক্তার সুমনা-বাউরিয়া।
রোববার রাত ১২টায় প্রথমে মাইটভাঙ্গা খেয়াঘাট থেকে ২ জন, পরে ওই স্থান থেকে আরো একজন এবং গতকাল সকাল ৭টায় কাছিয়াপাড় খেয়াঘাট থেকে অপর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুরে হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া একটি লাশের পকেটে প্রাপ্ত মোবাইল সিমের সূত্র ধরে তাদের স্বজনের কাছে খবর এলে জানা যায়, বাতেন মার্কেট মসজিদের ইমাম এবং প্রাইম লাইফের মাঠকর্মী হাফেজ আমিন রসুলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে তার স্বজনরা রোববার রাত ৮টা থেকে গতকাল সারাদিন গুপ্তছড়া ঘাটসহ স›দ্বীপের বিভিন্ন উপকূলীয় পয়েন্টে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
এদিকে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিখোঁজদের স্বজনরা এবং স›দ্বীপের সচেতন মহল। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর যাত্রীদের তাৎক্ষণিক উদ্ধারের জন্য লাইফ জ্যাকেট বা অন্যান্য উদ্ধার সামগ্রী দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি এসটি সালাম সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ। এ অভিযোগ ডুবন্ত লাল বোট থেকে উদ্ধার হওয়া স্কুলশিক্ষক মাসুদুল আলমের। বোট উল্টে যাত্রীরা যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল তখন তাদের উদ্ধারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সি-ট্রাকে থাকা যাত্রীরা করুণ আকুতি জানালেও বাস্তবমুখী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রাইমারি প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় শিক্ষক সমিতি নেতা মাস্টার আনোয়ারুল হক।
অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে যাত্রী ওঠানামায় ব্যবহৃত লাল বোট ও ছোট নৌকাগুলোর কতটা উপযুক্ততা রয়েছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ ৩০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লাল বোটটিতে যাত্রী নেয়া হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। যাত্রীরা বোটে ওঠার সময় এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও তাদের উল্টো ধমক দেয়া হয়েছে বলে জানান উদ্ধার হওয়া যাত্রী মাস্টার নুরুল হুদা। তিনি জানান, ধারণক্ষমতা থেকে বেশি যাত্রী নেয়ার কারণে যাত্রীদের ঠাসাঠাসিতে বোটটি ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যায়।
এ ব্যাপারে বিআইডবিøউটিসির ডিজিএম (বাণিজ্য) গোপাল কৃষ্ণ মজুমদার জানান, এ ঘাটে ব্যবহৃত সি-ট্রাকটি চার্টার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও স›দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শাহজাহান বলেন, এ ঘাটে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে বিআইডবিøউটিসির মনিটরিং নেই বললেই চলে। তাদের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পরপর কোস্টগার্ডের স্বল্প সংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও যাত্রী উদ্ধারে তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ার মতো ছিল না। সাবেক ছাত্রনেতা রাজিবুল আহসান সুমন জানান, কোস্টগার্ডের সদস্যদের উপস্থিতির আড়াই ঘণ্টা পর সাধারণ জনগণের প্রচেষ্টায় ঘাট থেকে অদূরে ডুবে যাওয়া বোটটি উদ্ধার করা হয় এবং সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একজন মহিলা ও ২ জন পুরুষ যাত্রীকে নৌকার ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত স›দ্বীপ চ্যানেলে কোনো সংস্থা কর্তৃক উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়নি। যদি উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হতো তাহলে আরো অনেক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো। সরেজমিন দেখা গেছে, বোটটি ডুবে যাওয়ার পর ঐ এলাকা ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। ফলে ঘাটে থাকা স্পিডবোট এবং অন্যান্য নৌযানগুলো উদ্ধার অভিযানে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এ সময় নদীতে প্রবল ভাটার টানে ডুবে যাওয়া যাত্রীরা ভেসে সাগরের দিকে চলে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। স›দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা জানান, সকাল থেকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার স›দ্বীপ চ্যানেলের ওপর লাশ উদ্ধারে অনুসন্ধান চালায়। তিনি আরো জানান, সাগর উত্তাল থাকায় নৌবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতায় ব্যাঘাত ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।