Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কইয়ের তেলে কই ভাজার ফন্দি ওরিয়নের

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঋণের দায় ব্যাংকের কাঁধে ফেলতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের না
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঋণের দায় ব্যাংকের ওপর ফেলার ফন্দি এঁটেছে বহু বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপ। গ্রুপটির ব্যবসায় ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককে অংশীদার করতে চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এজন্য খোদ ব্যাংক কোম্পানি আইনেই সংশোধন চাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের মালিকানাধীন গ্রুপটি। আইনের ২৬ক এবং ২৬খ ধারায় সংশোধন চেয়ে জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে অরিয়ন গ্রুপ। অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চাইলে ‘না’ করে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন কয়েকটি পাওয়ার প্লান্টে বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর কাছে ওরিয়ন গ্রæপের শেয়ার ধারণের আইনী সীমা বৃদ্ধি, পাওয়ার প্লান্টের মালিকানায় ব্যাংকের অংশগ্রহণ এবং এককভাবে কোন ব্যাংকের ঋণ বিতরণ করতে ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ (সংশোধীত ২০১৩) এর ২৬ক এবং ২৬খ ধারা সংশোধনের আবেদন করেছে গ্রুপটি।
২৬ক ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যাংক স্বীয় আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস-এর মোট ৫ শতাংশের বেশি মূল্যের অথবা যে কোম্পানীতে বিনিয়োগ করবে তার আদায়কৃত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। তাছাড়া কোন ব্যাংকের মোট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ (সব ধরনের শেয়ার, বন্ড, ইত্যাদি) স্বীয় আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আনিংস-এর মোট পরিমাণ ২৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।
এই ধারার সংশোধনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১-এর ২৬ ক সংশোধন করে ওরিয়ন গ্রুপকে অব্যাহতি দিলে ব্যাংক একই সময়ে কোম্পানীগুলোর ঋণদাতা এবং শেয়ারধারক হলে কোম্পানীর ব্যবসায়িক ঝুঁকি ব্যাংকের উপর বর্তাবে। ঋণগ্রহিতা কোন কারণে দেউলিয়া হলে ব্যাংকের ঋণ আদায় অনিশ্চিত হবে যা আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণœ করবে। ব্যাংকের কাজ আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদান করা। ব্যাংকগুলো এরূপ কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায় জড়িত হলে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১-এর ২৬ খ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রæপকে মোট ঋণ সুবিধার আসল অংকের পরিমাণ ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমার (বর্তমানে ১৫ শতাংশের) বেশি হতে পারবে না এবং নির্ধারিত সীমা কোন অবস্থাতেই ২৫ শতাংশের বেশী হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ওরিয়ন গ্রুপের পাওয়ার প্লান্টে কোন ব্যাংককে এককভাবে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে ব্যাংকের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়বে। কেননা উক্ত বৃহদাঙ্ক ঋণগ্রহিতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকের উপর বিরুপ প্রভাবও বড় আকার হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআপিডি সার্কুলার ২/২০১৪ ও ৪/২০১৬ এর মাধ্যমে সরকার বা সরকারি গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ প্রদান, বহুজাতিক-আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ প্রদান, সরকারি কার্যাদেশের বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণের জন্য গৃহিত ঋণের ক্ষেত্রে বিধান শিথিল করে নির্ধারিত ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ২৬ খ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, সরকারের ঋণ বা সরকারের গ্যারান্টির বিপরীতে যেকোন খাতের ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কেস টু কেস ভিত্তিতে একক ঋণগ্রহিতার সীমা হতে অব্যাহতি দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য, কোন প্রকল্পে বড় অংকের ঋণের প্রয়োজন হলে সিন্ডিকেট ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ঋণ সরবরাহ করলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে। তাই ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারণের সীমা বৃদ্ধি ও এককভাবে কোন ব্যাংকের ঋণ প্রদানের কোন যৌক্তিতা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১০ আগস্টের ৯৪৪তম পর্ষদ সভায় ওরিয়ন গ্রæপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওরিয়ন খুলনা পাওয়ার লিমিটেডকে (ওপিকেএল) প্রাথমিকভাবে ৯৪৬ কোটি টাকা অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংক সিন্ডিকটের মাধ্যমে অর্থায়নে ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাব দিলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। যে কারণে আটকে আছে অর্থায়ন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ওরিয়ন গ্রæপের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রæপটির ফার্মাসিউটিক্যালস, কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, রিয়েল এস্টেট, হাইটেক এগ্রো, হোটেল, গার্মেন্টস, এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা রয়েছে।
এছাড়াও ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড, ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড থেকে ৩০২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় চর্তুথাংশ থেকে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা লিমিটেড ও ওরিয়ন পাওয়ার খুলনা লিমিটেডের।
উল্লেখিত, প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ঋণ ও ২০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ওরিয়ন গ্রæপের। ফলে দেশীয় ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ও বিদেশী উৎস থেকে ৩ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। এছাড়া ওরিয়ন গ্রæপ অর্থায়ন করবে ১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
বাগেরহাটের মংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে এ প্রকল্প নির্মাণ শুরু হয়েছে, যার মেয়াদ হবে ২৫ বছর। তবে ঋণটির মেয়াদ হবে ১৫ বছর। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে মাস ভিত্তিতে ২৫ বছর বিক্রি করা হবে। যদিও মাটি ভরাট ছাড়া এখন পর্যন্ত প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোন কাজ হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ