পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের বর্তমান সংসদে ‘জনগনের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই’ দাবি করে দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বকারী সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা (নৈতিক অবস্থান) রাখার জন্য ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো প্রতি আহবান জানিয়েছে বিএনপি। আজ
সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এই আহবান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত সংসদীয় রাজনীতির এই মহাসম্মেলনে বাংলাদেশের জনগনের প্রকৃত কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। সংসদ সদস্য নামে যারা আজ এই সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পার্লামেন্টের পক্ষে অংশ নিচ্ছেন, তারা সবাই ভুতুড়ে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আইপিইউ সদস্যদের প্রতি আমাদের আহবান থাকবে, তারা যেন বাংলাদেশে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বকারী সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নৈতিক অবস্থান গ্রহন করেন। বাংলাদেশের জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের নৈতিক সমর্থন এদেশে সত্যিকার অর্থে সংসদীয় গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবস্থান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আইপিইউতে অংশগ্রহনকারীদের সদস্যদেশগুলোর প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী পার্লামেন্টের যেসকল সদস্য এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন, তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে এই কমিটি বিস্ময় প্রকাশ করেছে, যে দেশের সংসদ জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে না, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের মানবাধিকার লুন্ঠিত, হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জনগন জর্জরিত, সেই দেশে আইপিইউ‘র সম্মেলন একটা প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয়।
শনিবার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে বিশ্বের ১৬৪টি দেশের আইনসভার সংগঠন ‘ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের(আইপিইউ)’ এর ১৩৬তম সম্মেলন। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শনিবার সন্ধ্যায় এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সংসদীয় ফোরামের সম্মেলনের আয়োজক জাতীয় সংসদ।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। রোববার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ‘প্রহসনমুলক’ অভিহিত করে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন,‘‘ প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ওই নির্বাচন এতোটাই প্রহসনমূলক হয়েছে যে, একজন ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনাভোটে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বাদ বাকী আসনগুলোতে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ ভোট প্রদান করেছে। ৯৫ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত ছিলেন বা ভোট প্রদানের মতো মৌলিক অধিকার প্রয়োগের তাগিদ বোধ করেননি।
দশম সংসদে বিরোধী দল নেই অভিযোগ করে সাবেক স্পিকার বলেন, ‘তখাকথিত সংসদে কার্য্কর কোনো বিরোধী দল নাই। ওই বিরোধী দলের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়ে এক নজিরবিহীন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়রদ্বয়কে বরখাস্ত করার প্রসঙ্গটি টেনে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইপিইউ সম্মেলন চলাকালে দেশের দুইটি প্রধান শহরের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সিটি মেয়রদের শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এক কলমের খোঁজায় বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে দেশে গণতন্ত্র যে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও একচোখা তা আবারো প্রমানিত হয়েছে। এটা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নিগ্রহের একটি ক্ষুদ্র নমুনা মাত্র।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরীক্ষিত সর্বোত্তম সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হতে বঞ্চিত। দেশে মানবাধিকার পুরোপুরি ভুলন্ঠিত। গুম,খুন, গ্রেপ্তার, রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় জনগনের নির্বাচিত বর্তমান ও সাবেক প্রতিনিধিরা জর্জরিত। কোথাও কারো কোনো অধিকার নেই।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতি শাসকমহল পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে। চালু হয়েছে একদলীয় নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী শাসন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরপরই আমাদের ওই সময়ের (নবম সংসদ) প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল এন্ডার পি জনসনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিলো, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হয়েছে এবং ওই নির্বাচনে যে নির্বাচন নয়, ওই পার্লামেন্ট যে বাংলাদেশের ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। ওই চিঠি দেয়া হয়েছিলো ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি।
আইপিইউ‘র সদস্য দেশগুলো কি কেনো চিঠি আপনারা দেবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে মহাসচিব বলেন, আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে এটা জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলন করছি। আমরা ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ সদস্যকে জানিয়েছে যে, দেশে এই অবস্থা রয়েছে।
আইপিইউ‘র সভাপতি পদে বাংলাদেশের সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্বাচিত হওয়ার পর তারই আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে প্রতিনিধিরা এসেছে, সেক্ষেত্রে আসলে দায়ী কে, দোষটা কার ওপর বর্তায় প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যারা তাকে(সাবের হোসেন চৌধুরী) ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন, তারা জানতেন না তিনি (সাবের হোসেন চৌধুরী) এমন একজন ব্যাক্তি যিনি বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এটা যদি তারা জানতেন, তাহলে তাকে নির্বাচিত করতেন না।
কিভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো কিভাবে ভুমিকা রাখতে পারে জানতে চাইলে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইপিইউ দুইভাবে তারা ভুমিকা রাখতে পারেন। এক হচ্ছে, নিজ নিজ দেশের পার্লামেন্টের যেকোনো ডিলিগেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাঠিয়ে বলা যে, এখানে আসা আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রকৃত নির্বাচন হয়নি।
আরেকটি হচ্ছে- নিজ নিজ দেশে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলতে পারেন, আইপিইউতে আমরা ঢাকায় গিয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, সেখানে যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে, তারা এককভাবে একপেশেভাবে হয়েছেন, সেখানে(বাংলাদেশ) গণতন্ত্র নেই।
সংবাদ সম্মেলনে দলের আরো ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা সাখাওয়াত হোসেন জীবন উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।