Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই সরকারের জঙ্গি কৌশল : রিজভী

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে জঙ্গিবাদী তৎপরতাকে অভিনব কৌশল হিসেবে সরকার বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজ মানুষের মনে এই ধারণাই স্পষ্ট হয়েছে যে, পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য জঙ্গিবাদী তৎপরতা মহা-ধুমধামের সাথে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকে জনগণের চোখকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য এই অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে সরকার।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, যখন লোভী ও ক্ষমতাশ্রয়ী লোকেরা শক্তি ও অনৈতিকতার জোরে ক্ষমতা দখল করে টিকে থাকতে চায়, তখন তারা একের পর এক নির্মম, নিষ্ঠুর ও অমানবিকতার  দেয়াল তৈরি করে জনগণের দৃষ্টিকে সীমাবদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। এতে কোনো লাভ হয় না। দেশের মানুষের সবকিছু টের পায়, উপলব্ধি করে, তাদের দৃষ্টিশক্তি দিগন্ত বিস্তৃত, প্রসারিত।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সরকারের নির্মমতা ও নিষ্ঠুর শাসন ব্যবস্থার কারণে দেশে আজ জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত দুই সপ্তাহে ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে প্রায় ১০ জনের অধিক মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত মার্চ মাসে মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে ২১ জনকে। বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল আলম নুরুকে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলেছি, এই হত্যাকাÐের সাথে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত। সরকার যেভাবে সারাদেশে চক্রান্তের বেড়াজ্বাল বেঁধে গণতন্ত্র, ব্যক্তি অধিকার ও মানুষের মর্যাদাকে হরণ করেছে তাতে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাকে মানুষ এখন বানানো গল্প বলে মনে করে। ক্রসফায়ারে বিচারবহির্ভূত হত্যা মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
স¤প্রতি জঙ্গি আস্তানার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের নাটকীয়পূর্ণ কথা-বার্তাকে মানুষকে জিজ্ঞাসু করে তুলেছে। আসলে কী ঘটে চলেছে, সেটি এখন মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। জনমনে নানা ধরনের সংশয় সৃষ্টি করেছে। সেজন্য জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে সরকারের এতো অভিযানকে জনগণ সশংয়ের দৃষ্টিতে দেখছে।
কারণ কোন চরম পন্থী জঙ্গিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হলে জনগণের মনে জঙ্গিবাদের তৎপরতা নিয়ে বিশ্বাস উৎপাদন হতো। বরং সেটি আনা হয়নি। তাদের লাশ দেখিয়ে কিছুই ঠাওহ’র করা যায় না যে সেটি হত্যা নাকী আত্মঘাতী আত্মহত্যা। জনগণ এ সম্পর্কে সঠিক  কোনো তথ্য পাচ্ছে না। বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপহরণ, গুম, বাড়ি থেকে তুলে নেয়া ও জঙ্গিদের আত্মঘাতী কর্মকাÐ একরকম রক্তাক্ত নিষ্ঠুর দানবীয় উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে স¤প্রতি বিদেশী একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি তুলে ধরে রিজভী বলেন, এইচ টি ইমাম ওই সাক্ষাৎকারে অনেক কথা মধ্যে একটি কথা বলেছেন যে, যদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দেয়, তাহলে দুই দেশ একসাথে সহযোগিতা করবে।
এখানে হচ্ছে, আমাদের সবচাইতে বড় প্রশ্ন, এই বিষয়টি আমরা বার বার বলেছি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সেনাবাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সাহসী। বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীই যথেষ্ট। দেশের প্রধানমন্ত্রী জনমতকে তাচ্ছিল্য করে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি, তার গরিমা, তার কর্তৃত্বসহ সব কিছুই দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনসাধারণের জন্য হুমকি। তিনি যেমন গণতন্ত্রকে দেশ থেকে বিদায় করেছেন, তেমনি প্রতিরক্ষা চুক্তির নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ‘স্টেটস ফিউনেরেল’, রাষ্ট্রের অন্তেষ্টিক্রিয়া, রাষ্ট্রের জানাজা করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এই চুক্তি হলে বাংলাদেশের জনগণ তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে সর্বশক্তি দিয়ে তা রুখে দেবে।
ছাত্র দল নেতার হত্যার প্রতিবাদে আহূত চট্টগ্রামে অর্ধদিবস হরতাল চলাকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে বোয়ালখালী উপজেলার ছাত্রদলের মহসিন খোকন, মোহাম্মদ শাকির, পটিয়া উপজেলার গাজী মুনির, মুনসুর আলম, সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ারা উপজেলার ইফতেখার সাঈদ মুনিরকে গ্রেফতার করায় নিন্দা জানিয়ে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
ওই হামলায় ছাত্র দলের নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ