Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বন্ধ করতে হবে : বাংলাদেশ

আইপিইউ সম্মেলনে এশিয়ান পার্লামেন্ট করার প্রস্তাব

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : গণতন্ত্র, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি বা কোনো একটা মিথ্যা ইস্যু নিয়ে পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলো অন্য দেশের ওপর আক্রমণ করে। এসব মিথ্যা ঘটনা বন্ধের বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম অ্যাসেম্বলিতে। একই সাথে এ সম্মেলনে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মত এশিয়ান পার্লামেন্ট করা যায় কি না এমন একটা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম অ্যাসেম্বলির দ্বিতীয় দিনে ‘একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের নাক গলানো প্রতিরোধে সংসদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।  অ্যাসেম্বলি শেষে সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, আইপিইউ-এর স্ট্যানডিং কমিটি-১ এ আলোচনাটা ছিল, জেনেভাতে পূর্ববর্তী আলোচনায় একটা রেজ্যুলেশন তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক পিস এন্ড সিকিউরিটি নিয়ে। ঐ রেজ্যুলেশনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশসহ ৪০ দেশ আলোচনা করেছিল। রেজ্যুলেশনটা পরিবর্তন করা দরকার। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো কোনো উন্নত শক্তিশালী দেশ কখনও দুর্নীতি, কখনও গণতন্ত্র, কখনও জঙ্গিবাদ বা কোনো একটা ছুঁতো ধরে কোনো কোনো দেশের মধ্যে ইন্টারভিন করে, হিউমেন রাইটসের নাম করে ইন্টারভিন করে এবং এরফলে ওই দেশের অবস্থা ভাল হয় না বরং সারা পৃথিবীর অবস্থা খারাপ হয়। তিনি বলেন, সুতরাং এ ইন্টারভিনের জায়গাটা বন্ধ করা দরকার এবং ঐসব দেশের মানুষের কালচারকে রেসপেক্ট করতে হবে। তিনি বলেন, উন্নত দুই-একটা রাষ্ট্র বলছে, এই রেজ্যুলেশনটা ভাল। কিন্তু ৩৫ দেশই বলেছে যে, এটাতে চেইঞ্জ করা দরকার। কেউ কিন্তু বলেনি রেজ্যুলেশনটা বাদ দাও। তবে কেউ কেউ কিছু জায়গায় চেইঞ্জ করার কথা বলেছে। আমরা আশা করেছি এটা বিবেচনায় নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ইমার্জেন্সি আইটেমের মধ্যে ছিল, প্যালেস্টাইনের রাজ্যকে দখল করে ইসরাইলের পার্লামেন্টে যে একটা রেজ্যুলেশন নেয়া হয়েছিল, প্যালেস্টাইনের দেশের মধ্যে যেয়ে সেটেলমেন্ট কর। কিভাবে একটি আইপিইউ-এর সদস্য পার্লামেন্ট এ ধরনের আইপিইউ’র বিরোধী একটি রেজ্যুলেশন নেয়? তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে দুর্ভিক্ষ চলছে সে ব্যাপারে। এছাড়া আমরা একাত্তরে গণহত্যার কথা এবং রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরেছি। সম্মেলনে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মত এশিয়ান পার্লামেন্ট করা যায় কি না এমন একটা প্রস্তাব আসছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্যে একাত্তরের গণহত্যার কথা তুলে ধরে বলেছি, এই গণহত্যা বন্ধ করা দরকার। রোহিঙ্গা সমস্যার কথা বলেছি, সেখানেও কিন্তু এক ধরনের অত্যাচার হচ্ছে। আগামীতে একটা খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি বলেন, বর্তমানে অনেক দেশ এনজিও’র মাধ্যমে অন্য দেশে নাক গলানোর চেষ্টা করে। এটি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। ডা. দীপু মণি  সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় এক বছর আলোচনার পর এ রেজ্যুলেশনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি দেশ এ খসড়ার বিরোধিতা করে এটিকে বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। তবে ভারত এ রেজ্যুলেশন সমর্থন করে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি রেজ্যুলেশন ভোটে দেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের অধিকার আছে নিজেকে শাসন করার এবং কীভাবে উন্নয়ন করবে সেটি ঠিক করার। তবে অনেক দেশ মনে করে তারা ইরাক বা সিরিয়াতে নাক গলানোর অধিকার রাখে এবং এর ফলে সে দেশে সন্ত্রাসী গ্রæপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা যার মাধ্যমে ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে এবং দুই লাখ নারীকে অসম্মান করা হয়েছে সেটির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ এটিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশ অন্য দেশের কোনও বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য আরও বলেন, শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খুব প্রয়োজন পড়ে তবে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে ইন্টারফেয়ার করা যেতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো সরকারকে কোনও মিলিটারি বা অন্য যেকোনও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টাকে এ খসড়া প্রস্তাবে চরম নিন্দা জানানো হয়। অন্য দেশের নাক গলানোর ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ যাতে ভূমিকা রাখে তার জন্য সংসদকে উৎসাহিত করার আহŸান জানানো হয়েছে এ খসড়া প্রস্তাবে। এ খসড়া সমর্থন করে চীন জানিয়েছে, বিদেশি শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমণ করেছিল কিন্তু পরে দেখা গেছে সেখানে এ ধরনের কোন অস্ত্র নেই। রাশিয়া এ খসড়া সমর্থন করে জানিয়েছে, এটি বাতিল করা হলে সারাবিশ্বে একটি ভুল বার্তা যাবে। গ্রæপ-১২ প্লাস জোটে মোট ৪৭টি সদস্য দেশ এ খসড়ার চরম বিরোধিতা করছে। এ জোটের সদস্য জার্মানি জানিয়েছে, ইতিহাসে শত শত নাক গলানোর উদাহরণ আছে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে নাক গলাতে হয়। তাই এ খসড়া বাতিল করা উচিত। একই সুরে কথা বলে ইউক্রেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক। রাশিয়া ইউক্রেনের অংশ ক্রিমিয়া দখল করেছে। কিন্তু তারপরও অন্য দেশের নাক গলানো বন্ধের এ রেজ্যুলেশন বিরোধিতা করে ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার সংসদ ক্রিমিয়া দখলের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল। তাই এ ধরনের খসড়ার কোনও গুরুত্ব নেই। বেলজিয়াম বিরোধিতা করে জানিয়েছে, এটি ভারসাম্যপূর্ণ খসড়া নয়। অন্যদিকে তুরস্ক এই আইপিইউ সম্মেলনে এ খসড়া নিয়ে আলোচনা না করার আহŸান জানায়। এ খসড়াটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ