Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মৌলভীবাজারের জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৬ জনই দিনাজপুরের

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

লাশ গ্রহণে পরিবারের অস্বীকৃতি এলাকায় চরম আতঙ্ক
মাহফুজুল হক আনার ঘোড়াঘাট থেকে ফিরে : বাবা আমাকে মাফ করে দিয়েন। আমার সাথে আর দেখা বা কথা হবে না। এভাবেই মোবাইলে কথাগুলো বলেছে মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৬ জনের ১জন শিরিন আকতার। শিরিনের ষোড়শী কন্যা আমেনা মোবাইল করে নানার উদ্দেশে সেরকম কিছু না বলেই তার মার সাথে কথা বলতে বলে।
আর মা শিরিন এভাবেই তার বাবাকে বলেছিল। বাবা তার অবস্থান জানতে যেয়ে বলেছিল মা তুই কথায় আছিস বল আমি তোকে নিয়ে আসবো। তখন সময় নেই টিভি দেখ আমাদের দেখতে পাবা। শিরিন হলো জেএমবি শূরা সদস্য লোকমান হোসেন এর স্ত্রী। সেদিন নিহত ৬ জনের মধ্যে লোকমান, তার স্ত্রী শিরিন ও তাদের ৪ কন্যা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লোকমান ও শিরিনের নিকট আত্মীয়রা জানতেন তাদের জেএমবিতে যোগদানের কথা। কিন্তু তাদের বিপদগামীর হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসও কেউ দেখায়নি। কারণ এখনও অনেকে নিরুদ্দেশ হয়ে আছে। পুলিশসহ স্থানীয়দের অনেকেই প্রায় নিশ্চিতভাবে বলেছে তারা জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য হওয়ায় আত্মগোপনে আছে। এদিকে নিহত শিরিনের স্বজনেরা মেয়ে নাতনিদের লাশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে পুলিশের কাছে লাশ নিবে না বলে জানিয়েছে বলে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছে।
মৌলভীবাজারের নাসিরনগরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী হিসেবে নিহত ৭ জনের মধ্যে ৬ জনই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কোলাপাড়া ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বলে দাবি করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। জঙ্গি লোকমান আলী, তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার, কন্যা আমেনা খাতুন, সুমাইয়া আক্তার, ফাতেমা ও মরিয়ম আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়। নিহত নারী জঙ্গি শিরিনা আক্তার ২৯ মার্চ তার মা জোবায়দা ও বাবা আবু বক্করের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। তখন শিরিনা বলে, তোমাদের সাথে এই দুনিয়ায় আর দেখা হবে না। হাশরের ময়দানে দেখা হবে। বাবা-মা কোথায় আছে জানতে চাইলে শিরিনা তা জানায়নি। এসময় মা জোবায়দা শিরিনকে তার ৬ মাসের কন্যা সন্তান খাদিজাকে রক্ষার জন্য আকুতি-মিনতি করলে কাজের এক মেয়েসহ খাদিজাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। খাদিজা ও কাজের মেয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করলে এই দুজন আত্মঘাতি হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যায়।
২০০২ সালে ঘোড়াঘাট উপজেলার বুলাকীপুর ইউনিয়নের কলাবাড়ী গ্রামের আবু বক্করের কন্যা শিরিনা আক্তারের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র লোকমান আলীর। সংসারে ২ সন্তান জন্মগ্রহণের পর লোকমান জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি তৎপরতায়। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার চাপ দেয়া হলেও সে সময় ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করার কথা বলে লোকমান চলে যায়। প্রায় ৪ বছর ধরে লোকমান ও কন্যা শিরিনাসহ নাতনিদের সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল না। সর্বশেষ ২৯ মার্চ মোবাইল ফোনে শিরিনা আক্তার মা জোবায়দার সাথে কথা বলেন। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে লোকমান ছিল সবার ছোট। সে ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষ্ণরামপুর মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করে।
লোকমানের সৎ মা সোমেস্তা বানু জানান, তাকে ধরার জন্য ২০১১ সালে পুলিশ একবার বাসায় এলেও তাকে পায়নি। ঘোড়াঘাট থানার ওসি ইসরাইল হোসেন বলেন, পুলিশ আগে থেকেই লোকমানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানতো। তাকে ধরার জন্য একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। লোকমানের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায় ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৩৮, তারিখ- ২৫/১০/২০০৮। সে মামলায় তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়। আদালত তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ও ক্রোকি পরোয়ানা দিয়েছিলেন।
সিংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, এবছরের মার্চ মাসে ঘোড়াঘাট উপজেলায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভায় তিনি লোকমানসহ ৩ জঙ্গির নাম পুলিশের কাছে দিয়েছিলেন।
নাসিরনগরে জঙ্গি লোকমানসহ পরিবারের ৬ জনের আত্মঘাতী হামলায় নিহত সংবাদ পাওয়ার পর অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন লোকমানের পিতা নুরুল ইসলাম। লোকমানের বোন নুর জাহান, নুরবানু ও ভাই জাকারিয়া নিহতদের লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা এ লাশ নেব না। নাসিরনগরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৬ জনই ঘোড়াঘাটের বাসিন্দা হওয়ায় এখন এই উপজেলার সর্বত্র বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। অনেকের ধারণা তাদের এলাকায় আরো অনেক জঙ্গি রয়েছে।
উল্লেখ্য একই উপজেলার একই ইউনিয়নের শফিউল ইসলাম ওরফে ডন কিছুদিন আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আরও জঙ্গি যে আছে এ কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন জানেন তেমনিভাবে স্থানীয় লোকজনও জানে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় এ ব্যাপারে কোন ভীতি লক্ষ করা যায়নি কারও মধ্যে। যা কিনা প্রশাসনের লোকদের ভাবিয়ে তুলেছে।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১:২১ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ আমাদেরকে এই জঙ্গি অভিশাপ থেকে মুক্ত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • পিয়াস ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 0
    জঙ্গিবাদের ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রুম্মান ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১:২৪ পিএম says : 0
    জঙ্গিবাদ দমনে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ