Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লভ্যাংশের প্রভাবে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে বড় দরপতন

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বিনিয়োগকারীরা ধারণা করেছিল অন্যান্য বছরগুলোর মতো এ বছরও ইসলামী ব্যাংক বড় অঙ্কের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটি ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণায় হতাশ হয়েছে বিনিয়োগকারী। এ কারণে ওই ঘোষণার পরের কার্যদিবস গতকাল ব্যাংকটির শেয়ার দরে বড় পতন দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির দর পতনের কারণে গতকাল শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেনে বড় ধস নামে।
স¤প্রতি ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখন ইসলামী ব্যাংক থেকে আরও বেশী কিছু পাবার সময় হয়েছে এমনটাই ভেবে আশাবাদী হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সেই আশায় চিড় ধরিয়েছে নতুন কর্তৃপক্ষ। যার প্রভাব গোটা পুঁজিবাজারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিটি বছরই ইসলামী ব্যাংক ভালো মানের লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কিন্তু এ বছর ইসলামী ব্যাংকের লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। যার প্রভাবে গতকাল বাজারে পতন হয়। তবে ইসলামী ব্যাংক কেন এই ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করলো তা ব্যাংকটির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা উচিত।
রোববার মতিঝিলের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিনের মতো গতকালও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের ভিড় ছিল। তবে তাদের সবার মুখেই ছিল ইসলামী ব্যাংকের হতাশ করার অভিব্যক্তি। কেউ কেউ বলেছেন, এ কোম্পানির নতুন কর্তৃপক্ষকে শাস্তির মুখোমুখি করা উচিত। এদিকে লভ্যাংশের খবরে রোববার ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৮০ পয়সা হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। গতকাল ব্যাংকটির শেয়ার ৩৪ টাকাও লেনদেন হয়েছে। ওই লেনদেন হিসাবে আগের দিনের চেয়ে প্রতিটি শেয়ারে কমে ৭ টাকার উপরে। সর্বশেষ বাজারে শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩০ টাকায়।
সর্বশেষ অর্থবছরে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বাড়লেও লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কম। এ সময় সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ দশমিক ৭৮ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছর ছিল ২ দশমিক ১২ টাকা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ০ দশমিক ৬৬ টাকা বা ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে (সমন্বিত) ৩০ দশমিক ৩৪ টাকায়। আগামী ২৩ এপ্রিল ব্যাংকটির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিএসই’র ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক গড়ে ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশও দিয়েছিল ব্যাংকটি। এছাড়া শেয়ারবাজারে মহা ধসের মধ্যেও ব্যাংকটি ২০১১ সালে ২০ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। কিন্তু ব্যাংকটিতে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরই লভ্যাংশ ঘোষণায় ধস নেমেছে।
রোববারের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টপ টেন লুজারের শীর্ষে ছিল ইসলামী ব্যাংক। গতকাল কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। টপ টেন লুজারে উঠে আসা অপর ইস্যুগুলোর মধ্যে- ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, ফাঁস ফাইন্যান্সের ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, সেস্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ও প্রাইম ব্যাংকের ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ দর কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত কার্যদিবসের চেয়ে সূচক ও লেনদেন উভয়ই কমে শেষ হয়েছে গতকাল কার্যক্রম। ডিএসইর প্রধান সূচক ২৮ দশমিক ২৩ পয়েন্ট এবং সিএসইর প্রধান সূচক ৬৫ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমেছে। উভয় পুঁজিবাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ৭৯৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। গত কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৮৭৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন হয়েছে ৭৪১ কোটি ০৬ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৮১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সুতরাং এক কার্যদিবসের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৯১ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৫টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১১০টির, কমেছে ১৭৯টির এবং কোনও পরিবর্তন হয়নি ৩৬টি কোম্পানির শেয়ার দর।
এছাড়া টাকার অঙ্কে ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানি হলো- লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইডিএলসি, ইফাদ অটোমোবাইল, ওয়ান ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, আইসিবি, ন্যাশনাল পলিমার এবং অ্যাকমি ল্যাবরেটরিজ।
অন্যদিকে সিএসইতে মোট শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার। সুতরাং সিএসইতে গত কার্যদিবসের চেয়ে শেয়ার লেনেদেন কমেছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বেশি। সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৬৫ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৬৮৮ পয়েন্টে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৩৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ১৩৪টির এবং কোনও পরিবর্তন হয়নি ২৭টি কোম্পানির শেয়ার দর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ