Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নতুন মুখের জয়জয়কার

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কেউ ধরে রেখেছেন পুরনো সাম্রাজ্য আর কারোর হাতছাড়া
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৪জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সংরক্ষিত আসনে ৪০জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই পুরনোদের হারিয়ে নতুন মুখের ১৬ প্রার্থী জয়ের রথে আরোহণ করেছেন। অন্যদিকে সিটির প্রথম ও এবারের নির্বাচন মিলে টানা দুইবার জয়ের ধারা ধরে রেখেছেন ১৪জন।
আর টানা ৩৬ বছর জয় নিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি এবং ১৬ বছর জয় ধরে রাখা প্রার্থীও চমক দেখিয়েছেন এবারের নির্বাচনে। আবার নতুন মুখের কাছে দীর্ঘদিনের জয়ের সাম্রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার অঘটনও ঘটেছে এবারের নির্বাচনে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত ভোটারের মনোভাব বুঝা কঠিন ছিলো কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে। আর তাই ৩০ মার্চের সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল শুনে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ‘থ’ হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ চোখের পানিও ধরে রাখতে পারেননি। জয় নিয়ে শতভাগ আশাবাদী কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেনে নিয়েছেন নিজের অপ্রত্যাশিত ফলাফল। এবারের ভোটের মাঠে নতুন মুখের কাউন্সিলর প্রার্থীদের যেমন জয়জয়কার ওঠে এসেছে তেমনি অধিক পুরনোদের মাত্র দুইজন ধরে রাখতে পেরেছেন নিজের সাম্রাজ্য। আবার নতুন মুখের কাছে বড় ব্যবধানে ধরাশায়ী হয়ে ঘরে ফিরে যেতে হয়েছে কাউকে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ আর ভোটারদের সঠিক সিদ্ধান্তেই কাউন্সিলরের ৩৬ পদে ১৬টি নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে যে দুইটি ওয়ার্ডে কেন্দ্র স্থগিত রয়েছে সেখান থেকেও দুইটি নতুন মুখ ওঠে আসবে জয়ের হাসি নিয়ে। আর এমনটিই বললেন নগর বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, নগর উন্নয়নে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনে নতুন পুরনো মিলে যেসব কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অনেকটাই যোগ্য। মেয়র সাক্কুর এবারের পরিষদে এসব কাউন্সিলরা যথাযথ ভূমিকা রাখতেও সক্ষম হবেন।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এবারে সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবারসহ টানা ৬বার জয়ের ধারা ধরে রেখে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন জমির উদ্দিন খান জম্পি। তিনি বাগিচাগাঁও এলাকা নিয়ে গঠিত ৯নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আর এ ওয়ার্ড থেকেই বার বার নির্বাচিত হয়ে টানা ৩৬ বছর ওয়ার্ড উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ ওয়ার্ডে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত টানা ৩৩ বছর কমিশনার ছিলেন দৈনিক রূপসী বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওহাবের পিতা এবং বর্তমানে এ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিক অমিতাভের দাদা আবদুর রশিদ। ৮৫ সালে কমিশনার আবদুর রশিদ মৃত্যুবরণ করেন। ৮৬ সালে ওই ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন মরহুম কমিশনার আবদুর রশিদের ভাতিজা জমির উদ্দিন খান জম্পি। এরপর বিলুপ্ত পৌরসভার সবকটি এবং নবগঠিত সিটি করপোরেশনের প্রথম ও এবারের দ্বিতীয় নির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে ৯নম্বর ওয়ার্ডের সাম্রাজ্য ধরে রাখেন জম্পি। এবারের নির্বাচনে জম্পি তার প্রচারণায় ভিন্নমাত্রা এনেছেন কোনো মাইক ব্যবহার না করে। গণসংযোগ আর ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল জম্পির প্রচারণা। আবার ১৬ বছর ধরে দ্বিতীয় মুরাদপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১৪নম্বর ওয়ার্ডের সাম্রাজ্য জয়ের মধ্যদিয়ে এবারো ধরে রেখেছেন সেলিম খান। অন্যদিকে প্রায় ২৮ বছর পর্যন্ত ধরে রাখা সাম্রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে টিক্কাচর ও সংরাইশ এলাকা নিয়ে গঠিত ১৬নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন খোকনের। এবারের নির্বাচনে তিনি নতুন মুখের প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল ওরফে মুহুরি বাবুলের কাছে প্রায় ১২০০ ভোটের ব্যবধানে পরাস্ত হোন। বিলুপ্ত পৌরসভা ও সিটির পুরনো মুখ সাবেক কাউন্সিলর আহমেদ সোয়েব সোহেল মনোহরপুর ও উত্তর চর্থার একাংশ নিয়ে গঠিত ১১নম্বর ওয়ার্ডে টানা ২৪ বছর জনপ্রতিনিধি থাকার পর এবারে ধরাশায়ী হয়েছেন নতুন মুখের প্রার্থী হাবিবুর আলআমিন সাদীর কাছে। এছাড়াও জাহাননগর, কাপ্তানবাজার ও ইসলামপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৪নম্বর ওয়ার্ডের টানা ২৪ বছরের আরেক জনপ্রতিনিধি সাবেক কাউন্সিলর মোসলেম উদ্দিন বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন নতুন মুখের আবদুল জলিলের কাছে।
এবারের নির্বাচনে নতুন মুখের অনেকেই পুরনোদের হারিয়ে জয়ের স্বাদ নিয়েছেন। এরমধ্যে ছোটরা এলাকা নিয়ে গঠিত ২নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর বিল্লালকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন মাসুদুর রহমান মাসুদ। গাংচরের একাংশ, রাজগঞ্জ, মনোহরপুর ও গঙ্গাগঞ্জের একাংশের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সামাদ সাগর হেরেছেন আবির আহমেদ ফটুর কাছে। নুরপুর ও দ্বিতীয় মুরাদপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১৮নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর শওকত আকবরকে পরাজিত করেছেন আফসান মিয়া। উনাইসার, কাজীপাড়া, দিশাবন্দ, লক্ষ্রীনগর এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন নতুন মুখের ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজ। উত্তর রামপুর, উত্তর হিরাপুর, মোস্তফাপুর, কচুয়া, দক্ষিণ গোপিনাথপুর, দৈয়ারা, বড় দূর্গাপুর, লক্ষ্রীপুর, শ্রীভল্লবপুর, শ্রীমন্তপুর ও দূর্গাপুর এলাকা নিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ডে শাহআলম মজুমদার। উত্তর বাগমারা, দক্ষিণ বাগমারা, ফিরোজপুর, লালমাইয়ের একাংশ, বার্ড, কোটবাড়ী, বিজিবি ক্যাম্প, পলিটেকনিক, রামপুর, সালমানপুর এলাকার ২৪নম্বর ওয়ার্ডে ফজল খান। কালিকিংকরপুর, চৌয়ারা, ছোট ধর্মপুর, ডুমুরিয়া, তারাপাইয়া, দয়াপুর ও লক্ষ্রীপুর এলাকা নিয়ে ২৫নম্বর ওয়ার্ডে এমদাদউল্লাহ। কালিকাপুর, গোয়ালমথন, চাংগিনি, ধনপুর, বল্লভপুর, বাউবন্দ, রাজেন্দ্রপুর ও মহেশপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ২৬নম্বর ওয়ার্ডে নতুন মুখের আবদুস সাত্তার জয়ী হয়েছেন। সংরক্ষিত আসনে নতুন মুখের মহিলা কাউন্সিলররা হলেন ২নম্বর ওয়ার্ডে নাদিয়া নাসরিন। ৩নম্বর ওয়ার্ডে উম্মে কুলসুম মুনমুন। ৪নম্বর ওয়ার্ডে রুমা আক্তার সাথী। ৬নম্বর ওয়ার্ডে নেহার বেগম। ৮নম্বর ওয়ার্ডে খোদেজা বেগম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ