Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণ বলে চুক্তির প্রয়োজনীয়তা প্রমাণেই জঙ্গি মহড়া : গয়েশ্বর

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সাথে সম্ভাব্য সামরিক চুক্তি বা স্মারকের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে জঙ্গি দমন অভিযান চালানো হচ্ছে কি না প্রশ্ন তুলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র  রায়। গতকাল এক সভায় তিনি বলেছেন, লোকজন বলাবলি করছে ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তির আগে জঙ্গি দমন অভিযান চালিয়ে সামরিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করছে সরকার। আদতে কী যে ঘটছে আমরা কিছু বুঝতে পারছি না।
ভারত সফরের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামরিক বিশেজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে যুব জাগপার ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সামরিক চুক্তি-গোলামি চুক্তি, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
জঙ্গি প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জঙ্গিটঙ্গি শুনছি, এটা ভালো-মন্দ বুঝি না। হয়তোবা আছে কিন্তু জনগণ বিশ্বাস করে না। মানুষ নানা ধরনের কথা বলে এবং তাদের কথা পত্রিকায় লেখা হয় না, আমরা কানে শুনি। জনগণের ধারণাটা হলো সরকারের প্রতি তাদের (জনগণ) কোনো আস্থা নেই। সরকার যদি ভালো কাজও করে তাহলেও জনগণ বলে আরে রাখ, এটার মধ্যে প্যাঁচ আছে। ভারতের সাথে সামরিক চুক্তির আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। চুক্তিটা যে যৌক্তিক, এই যৌক্তিক করার জন্য কিছু একটা ঘটনা ঘটবে। দিস ইজ দ্য পারসেপশন অব কমন পিপলস।
ভারত-বাংলাদেশের সাথে সামরিক চুক্তি হবে, এই চুক্তিটি হওয়ার আগে কয়েকটা মহড়া দরকার আছে। কয়েক দিন পরে দেখবেন চুপচাপ হয়ে গেছে- এটা সাধারণ মানুষের পারসেপশন। তাহলে কী বলবেন?  
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে এক হয়ে জনমত গড়ে তোলা দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে এটাকে মোকাবিলা করার জন্য এক হতে হবে। সেজন্য বছরখানেক আগে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের আহŸান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এটা গ্রহণ করেনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশকে আক্রমণ করতে পারে এমন দেশটি কোথায় সীমান্ত এলাকায়, সে দেশটির ঠিকানা তো আমরা জানি না। আমাদের তিন দিকের সীমান্ত ভারতের সাথে আর দক্ষিণে সাগর। ভারতের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেবে এমন সম্ভাবনা কিন্তু নেই। তাহলে কী কারণে সামরিক চুক্তি বা স্মারক? আমাদের  সেনাবাহিনী আছে, সামরিক বিশেষজ্ঞ আছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা আছেন, তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে, তাদের সাথে কোনো আলাপ না করে, গোপনে-আড়ালে-আবডালে, কেন এত দৌড়-ঝাঁপ, কী কারণে জরুরি হলো এই মুহূর্তে সামরিক চুক্তি বা স্মারক।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমাদের তিস্তা চুক্তি, গঙ্গার পানির হিস্যা এসবের কোনো খবর নেই। আমরা মনে করি না, দেশের জন্য সামরিক চুক্তির প্রয়োজন আছে। সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বসুন, সামরিক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেন, সকলের সাথে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করুন দেশটাকে বাঁচাতে। দেশটাকে যদি পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেন, তাহলে এই পৈতৃক সম্পত্তি বাঁচানোর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত হোন কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য ভারত যাবেন না।
তিনি বলেন, চুক্তি হতে পারে ভারতের প্রয়োজনে। কারণ, ভারতের চার পাশে বিভিন্ন দেশ আছে। যে দেশগুলোর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হয়, তাহলে ওই চুক্তির কারণে ভারতের শত্রæপক্ষ দ্বারা বাংলাদেশে আক্রান্ত হতে পারে।
পুলিশ-র‌্যাবের বিচারবহিভর্‚ত হত্যারও কঠোর সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, গোটা দেশটা আজ আশঙ্কা-আতঙ্কে। দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে, কসাইখানা বানানো হচ্ছে, নীরবে-নিভৃতে শুধু মানুষ খুন, গুম, হত্যা। প্রতিবাদ করার কোনো লোক  নেই, সবাই চুপচাপ। প্রতিবাদের ভাষাকে আমাদের শাণিত করতে হবে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, স্বাধীনতার এই মার্চ মাসে দেখছি, আমার দেশে ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশে। এই মার্চ মাসে আমরা দেখছি, তথাকথিত জঙ্গির নামে যে উৎসব শুরু করা হয়েছে, মানুষ হত্যার উৎসব। এটা কিসের আলামত? আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কোনো গোলামি কিংবা দাসত্বের বন্ধন আমরা মেনে নেব না। সামরিক চুক্তি ও গোলামির চুক্তির নামে অসম চুক্তি হলে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা জীবন দিয়ে তা প্রতিরোধ করবে। তিনি সরকারকে এ ধরনের রাষ্ট্রবিনাশী চুক্তি না করার আহŸান জানান।  
যুব জাগপার সভাপতি ফাইজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুব জাগপার সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ উদ্দিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, সহ-সভাপতি মাস্টার এম এ মান্নান, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, শেখ জামাল উদ্দিন, যুব জাগপার সহ-সভাপতি সাইদুজ্জামান কবির, যুগ্ম সম্পাদক ইবরাহিম জুয়েল, আরিফুল হক তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ রহমান, নগর যুব জাগপার সভাপতি খুরশীদ আলম সুমন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবলু, জাগপা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ