পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : ভূপৃষ্ঠে পানি নেই। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে দ্রæত। নদ-নদী শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। সেচনির্ভর কৃষিজমি রক্ষা করার জন্য মাঠে মাঠে দিশেহারা কৃষক। পানি তুলে জমিতে দেয়ার সাথে সাথে শুষে নিচ্ছে। মাটি যেন তপ্ত কড়াই। ঘর-গৃহস্থালিতে খাবার ও গোসলের পানি তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায় পানি একেবারেই উঠছে না টিউবওয়েলে। রাতের বেলায় কোনরকমে পানি তুলে লোকজন জরুরি প্রয়োজন মিটাচ্ছেন। পানির জন্য চারিদিকে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। চৈত্রের মাঝামাঝি সময় থেকে এই অবস্থায় পড়েছে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে. প্রতিদিনই পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০ফুট নীচে নেমে গেছে পানির স্তর। সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার খরতাপে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন মাঠের কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এক সময় নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি দিয়ে দোনা ও সেউতি পদ্ধতিতে সেচ দিয়ে চাষাবাদ হত। এখন আর সেই সুযোগ অবশিষ্ট নেই। সেচনির্ভর কৃষি জমি রক্ষার্থে ভূপৃষ্ঠে পানির অভাবে পুরোপুরি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে। সেখানেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়ার সুযোগ নেই। সেজন্য কৃষকের ত্রাহি অবস্থা। সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়ন মাঠের কৃষক আলম গতকাল জানান, আগে ১০বিঘা জমিতে সেচ দিতে গভীর সেচযন্ত্র ৮ঘন্টা চালালেই হতো। এখন এর ডাবল সময় লাগছে। তাও পানি উঠছে চুইয়ে। তার উপর বিদ্যুৎ সমস্যাও রয়েছে। তার কথা কৃষক বোরো আবাদ নিয়ে বিপদে রয়েছেন।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ চলছে। এখন আবাদের ভরা মৌসুম। এ অঞ্চলে গভীর, অগভীর, লো-লিফট পাম্প ও পাওয়ার পাম্প সেচের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে মোট ৩লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৬টি। অধিকাংশেই পানি উঠছে কম। ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার এক কষ্ট, তার ওপর বিদ্যুতের অভাব। কৃষকদের কথা, বোরো আবাদের প্রথমদিকে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা খোঁজ নিতেন, এখন নেন না । কারণ বিদ্যুৎ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুৎ- মনিরামপুরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সরবরাহের অনিয়মসহ নানামুখী অভিযোগ উঠেছে। বোরো ধানে বøাস্ট রোগের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষিকর্তারাও তোপের মুখে পড়তে হবে সেই ভয়ে মাঠে পারতপক্ষে নামছেন না বলে অভিযোগ। যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, গত শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর তুলনামূলক কম নেমেছিল। এবার ভয়াবহ অবস্থার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সহসা বৃষ্টির কোন লক্ষণ নেই। সূত্রমতে, অস্বাভাবিক শুষ্কতার ফলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে কৃষি, শিল্প, মৎস্য, বনজ ও পরিবেশ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদী পদ্মার শাখা প্রশাখা। পদ্মা শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। সেখানে শাখা নদ-নদীর অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। যশোরের ভৈরব, মুক্তেশ্বরী, কপোতাক্ষ, নড়াইলের চিত্রা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার নবগঙ্গা, শৈলকুপার কুমার ও চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ ক’টি নদ-নদীর কোন কোন পয়েন্টে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। খাল-বিলেও শুকিয়ে গেছে। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন, প্রাণীকুল, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, জীব-বৈচিত্র্য, বনজ ও মৎস্যসম্পদ মারাত্মক হুমকির মুখে। মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে পরিবেশ। টানা ৪০ বছর ধরে ভারতের পানি আগ্রাসনে চোখের সামনেই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে নদীগুলো। ঘটছে জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন। বাড়ছে খরা ও মরুকরণ প্রবণতা। পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত।
পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বাংলাদেশের নদী ধাবমান। নদ-নদী বাঁচানোর ন্যূনতম উদ্যোগ নেই। হয়নি ফারাক্কা আর মিনি ফারাক্কার মাধ্যমে পানি প্রতিবন্ধকতার কোন সুরাহা। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়ছে। জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। নদী ভাঙনে উদ্বাস্তু হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদ-নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অভিন্ন নদী শাসন বাংলাদেশের বিশাল এলাকার জীবন-জীবিকার উপর বড় ধরনের আঘাত দিচ্ছে।
সরেজমিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে নড়াইলের মধুমতি, ঝিনাইদহের কুমার ও নবগঙ্গা, যশোরের ভৈরব, মুক্তেশ্বরী, সাতক্ষীরার ইছামতি, চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা ও কুষ্টিয়া গড়াই নদীর বর্তমান চেহারা দেখা গেছে গত বছরের চেয়ে এবার আরো করুণ। নদ-নদীর চেহারা জানান দিচ্ছে এবার ভরা শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট তীব্র হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।