Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন ২০১৭-১৮ বিএনপি এগিয়ে, আওয়ামী লীগ পিছিয়ে

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার সমর্থকদের সমন্বয়হীনতা অভাব বিএনপি সমর্থকরা ঐক্য ও সক্রিয়
মালেক মল্লিক : সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের বার অ্যাসোসিয়েশন ২০১৭-১৮ মেয়াদের কার্যনিবাহী কমিটির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিতরা এগিয়ে, আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা পিছিয়ে। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে করে ফুরফুরা ইমেজ বিরাজ করছে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মধ্যে। সরকার সমর্থিত আওয়ামী লীগপন্থী ও তাদের মিত্রদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করেছে। সমন্বয় হীনতাই পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র আইনজীবীরা। সাধারণ আইনজীবীদের মতে, বার অ্যাসোসিয়েশনে নির্বাচনে বিএনপিরা ঐক্য ও সক্রিয় থাকার কারণে অধিকাংশ পদে বিজয়ী।
পরাজয়ের জন্য আইনজীবীদের মধ্যে অন্ত:কোন্দলকে দায়ী করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন বার নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের প্রতিবাদ বলে উল্লেখ করেছে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া।
বার অ্যাসোসিয়েশন ২০১৭-১৮ মেয়াদের কার্যনিবাহী কমিটির নির্বাচন ফলাফল বিশ্লেষণে দেয়া যায়, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২৭ পদের মধ্যে ২১টি পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিতরা। এদের মধ্যে ৯টি সম্পাদকীয় ও ১২টি সদস্য পদ পেয়েছেন তারা। অপরদিকে ট্রেজারারসহ ৬টি পদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ আইনজীবীরা। এছাড়াও টাংঙ্গাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা, রংপুর, সাতক্ষীরা ও কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অধিকাংশ পদে বিএনপি সমর্থিরা বিজয়ী হয়। অপরদিকে গাজীপুর, ল²ীপুর, চট্রগ্রাম, বরিশালসহ আরো কয়েকটি আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা বিজয়ী হয়েছেন।
গত ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা বিজয়ী হয়েছে। ৬টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। নির্বাচনের আগে উভয় দলের প্রার্থীদের নিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে। কে হচ্ছেন বারের সভাপতি সম্পাদক। কারণ এবারের নির্বাচনে উভয় পক্ষের প্রার্থীর ইমেজ ভাল ছিল। কেউ যেনো কারো চেয়ে কম নয়। নিজ দলের পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠনের বলেও অনেকে মনে করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদেরকে। অধিকাংশ স্থানে বিএনপি‘র পেশাজীবী সংগঠন কোনঠাসা হয়ে থাকলেও আদালত অঙ্গণে যে এককভাবে আধিপত্য বিরাজ করছে আইনজীবীরা। অনেকে মনে করছেন আদালত অঙ্গণে পেশাজীবী সংগঠন বিএনপির সমর্থন বেড়েছে।
আইনজীবীদের নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী আবার আওয়ামী আইনজীবী এটা চলবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ উপদেস্টা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচেন আমাদের মধ্যে সমন্বয় ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়াও আমাদের প্রার্থীরাও অনেক যোগ্য ছিল। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি। শীর্ষ ২টি পদে আমরা সামান্য ভোটের পরাজিত হয়। আমি মনে করে, যে কোন বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে আরো সক্রিয়তা ও উদ্যোগী হলে আমরাও অধিকাংশ পদে বিজয়ী হতে পারতাম।
বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আইনজীবীরা আইনে শাসন ও সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে। তারা সব সময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরেছেন। আইনজীবী অধিকতর সচেতন। বর্তমান সরকার দেশে হত্যা গুম ও বিরোধীদের ওপর নানা ভাবে নির্যাতন করছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনবিহীন দেশ আজ একচরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা বারসহ বিভিন্ন বারের নির্বাচনের ভোটের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তিনি আরো বলেন, আইনজীবীরা কোন সময় পায় প্ইা না। তাদের এই প্রতিবাদ চলতে থাকবে।
পরিবেশ ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, নিবার্চনে কতগুলো বিষয় জড়িত থাকে। বিশেষ করে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ, প্রার্থীর প্রচারের কেীশল। যারা এই সব বিষয় ভালভাবে সম্পাদন করতে পারে তাদের বিজয়ী হওয়ার সহজ। এছাড়াও এখন এতটা রাজনৈতিকরণ হয়েছে নিবার্চনে প্রার্থীর জয় পরাজয় অনেকটা এটা প্রভাবিত করে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে আইনজীবীরা আমাদের প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করছে। তিনি বলেন সামনে যে সব আইনজীবী সমিতি রয়েছে সেখানেও আমাদের দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন আশা করছি।
আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয়ের মূল কারণ দলীয় কোন্দল।
সূত্রে জানা যায়, টানা অর্ধ যুগের বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত হয়ে আসছে। শুধু মাত্র গত বছর নির্বাচনে অধিকাংশ পদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। সভাপতি পদে বিএনপি খন্দকার মাহবুব হোসেন ৪ বার নির্বাচিত হন। যিনি বিএনপি‘র ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ সমিতি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং অন্ধ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান তিনি।
এবারের বিজয়ী সভাপতি জয়নুল আবেদীন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও সহ সম্পাদক হন। এবার নির্বাচনে সম্পাদক পদে বিজয়ী মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। এবার নিয়ে বারের ৫ বার সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। তিনি বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব। বারের সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী একবার নির্বাচিত হন। এছাড়া সাবেক সম্পাদক ছিলেন বদরুদোজ্জা বাদল। তিনি বিএনপির নেতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ