Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সীমার পরাজয় নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মন্তব্য স্ববিরোধী

কুমিল্লা আ’লীগের তৃণমূল

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনের সময় কুমিল্লায় এসে কেন্দ্রীয় নেতারা দলের ঐক্য নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। আর জয় না পাওয়ায় দলের অনৈক্য নিয়ে এখন যা বলছেন তা স্ববিরোধী বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ না থাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পরাজয় ঘটেছে বলে সিটি নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এরকম মন্তব্যকে স্ববিরোধী বলে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকেই মতপোষণ করেছেন। গতকাল নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কথায় দলীয় প্রার্থী সীমার পরাজয়ের কিছু কারণও ওঠে আসে।
কুমিল্লা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, কুমিল্লায় যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন তারা নৌকায় ভোট দিয়েছে। আর রাজনীতির সাথে যুক্ত নন এমন আমজনতা শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নে বিশ্বাসী হলেও আফজল খান পরিবারের ওপর তাদের রয়েছে যথেষ্ট অনীহা। যার কারণে সীমাকে ভোট দেয়নি। নির্বাচনী ইশতেহারের শেষের দিকে সীমা তাঁর পরিবারের কোন সদস্য দ্বারা কেউ কখনো আঘাত পেলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানালেও অতীতে খান পরিবার দ্বারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তরা সীমার সেই অনুরোধের ঢেকি গিলেননি। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলেন, টমছমব্রীজ এলাকা সীমার বাড়ির কাছাকাছি হলেও সেখানকার মানুষ তার প্রতি অসন্তুষ্ট। টমছমব্রীজ বাজারের টোল সীমা তুলে। অতীতে এ টমছমব্রীজ বাজারের টোলের ঘটনা নিয়ে কালু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর নির্বাচনী প্রচারণায় সীমার সাথে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল হত্যার চার আসামী ঘুরেছে। এসব নেগেটিভ প্রভাব সীমার ওপর পড়েছে। কেবল তাই নয়, সদরে আফজল খান পরিবারের ইমেজ সঙ্কট থাকলেও সদর দক্ষিণে এপরিবার নিয়ে তেম ঘাঁটাঘাঁটি নেই। অথচ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন নৌকা সদর দক্ষিণে কমপক্ষে ২৫ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবে ধানের শীষ থেকে। অথচ ফলাফলে দেখা গেলো গণেশ উল্টে গেছে। সদর দক্ষিণে কী কারণে নৌকা এগিয়ে থাকার বদলে প্রায় সাড়ে ৪হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়লো তাও তো খতিয়ে দেখা উচিত।
কুমিল্লা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানকার আওয়ামী লীগের কিছু নেতা রয়েছেন যারা আফজল খান পরাজিত হওয়ার ব্যপারেও সদরের এমপি হাজী বাহারকে দুষেছেন। এবার সীমার পরাজয়েও তারা একই কথা বলছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজী বাহারের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আফজল খানের ছেলে ইমরান খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যখন পরাজিত হয়েছেন তখন সেই পরাজয়কে ইমরান খানের জন্য ‘টেষ্টকেস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওইসব নেতারা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুখ থেকে আরও জানা যায়, নির্বাচনের দুইদিন আগ পর্যন্ত জামায়াতকে বগলদাবা করে সীমা তার নির্বাচনী কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল। কিন্তু ভোটের আগেরদিন সেই জামায়াত ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে চলে যায়। সীমার এলাকায় জামাতের কাউন্সিলর জয়ী হয়। সেখানে কোন পন্থায় সীমা ভোট ভাগাভাগি করেছে তা ভোটের পরই জানা গেছে। কেবল তাই নয়, কুমিল্লার হিন্দু পরিবারগুলো যেখানে আফজল খান পরিবারকে পছন্দ করেনা সেখানে এমপি হাজী বাহারের স্পষ্ট ইঙ্গিতে হিন্দুরা নৌকায় ভোট দিয়েছে। এমপি বাহারের কারণে হিন্দুদের ভোট নৌকা প্রতীকে পড়েছে। তাছাড়া কোনো নির্বাচনেই হাজী বাহারের মেয়ে সূচি প্রচারণায় নামেনি। কিন্তু এবারের সিটি নির্বাচনে সীমার পক্ষে সূচি প্রচারণা চালিয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় সূচি গণসংযোগ করে নৌকার ভোট নিশ্চিত করেছেন।
তৃণমূল নেতারা জানান, এবারের সিটি নির্বাচনে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ছিলো। কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লায় এসে সেই ঐক্যবদ্ধের জায়গাটি তৈরি করতে পেরেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লা আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ থাকার জায়গাটি দৃশ্যমান করেছেন। নৌকার প্রশ্নে কোন দ্বিধাদ্ব›দ্ব ছিলো না। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা তাদের ভাবনা-চিন্তা থেকে আফজল খান পরিবারের মেয়ে সীমাকে ভোট দেয়নি। এর দায়ভার তো সদরের এমপি হাজী বাহার নিতে পারেন না। এ দায়ভার আফজল খান পরিবারের। কেনো তারা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতির মাঠে থেকেও কুমিল্লার সাধারণ মানুষকে আপন করে নিতে পারেনি। অথচ কেন্দ্রীয় নেতারা পরাজয়ের জায়গাটিতে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের পুরনো দ্ব›েদ্বর যে ছুঁতো তুলছেন তাতে স্ববিরোধী বক্তব্যই ফুটে ওঠছে। কারণ কেন্দ্রীয় নেতারাই কুমিল্লায় এসে জোর দিয়ে বলেছেন, এখানে আওয়ামী লীগে কোন কোন্দল, দ্ব›দ্ব নেই। এমনকি দলীয় প্রার্থী সীমাও বলেছেন, কুমিল্লা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। এখন পরাজয়ের গøানি থেকে মুক্তি পেতে দলে অনৈক্য ছিলো এমন অজুহাত তোলাটা হাস্যকর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ