Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

র‌্যাব গোয়েন্দা শাখা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে দাফন

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে বিস্ফোরণে নিহত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা ঢাকা সেনানিবাসে তার প্রথম জানাজা এবং বেলা তিনটায় উত্তরা র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে তার দ্বিতীয়  জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। লাশ দাফনকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে র‌্যাবের এ চৌকশ কর্মকর্তা ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান।
এদিকে মেডিক্যাল সূত্র জানায়, মাথায় বোমার স্পিøন্টার ঢোকার কারণে র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে আজাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এ কথা জানান। তিনি বলেন, বোমার সিøন্টার চোখের ভিতর দিয়ে তার মাথায় ঢুকে যায়। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে কোথাও আর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এর আগে সকাল ৮টার কিছু আগে তার লাশ নেয়া হয় ঢামেক হাসপাতাল মর্গে
ময়নাতদন্ত শেষে বাদ জুমা তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ র‌্যাব-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও নিহতের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা ৩টায় তার লাশ উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতরে নেয়া হয়। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। এসময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় বিউগলের করুণ সুরের সাথে যোগ হয় স্বজন ও সহকর্মীকে হারানোর কান্নার রোল। বাতাসে ভেসে আসা এই কান্না যেন থামবার নয়।
 দ্বিতীয় জানাজার জন্য বিকেল ৩টার দিকে যখন আজাদের লাশ র‌্যাব সদর দফতরে আনা হয়। তখনই ওখানকার পরিবেশ এভাবে ভারী হয়ে উঠে। সাহসী ও চৌকশ একজন কর্মকর্তাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকর্মীরা। জানাজায় অংশ নেয়া স্বজনরাও হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। র‌্যাব সদর দফতরের প্রধান ফটকের নিচে আজাদের বড় ছেলে আফনান ইশরাত জারিফকে জড়িয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ভাই ইউসুফ হিমেল। ভাই হারানো হিমেল বলেন, আমার ভাই রাসেল (ডাকনাম) খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি গণমানুষের কাছেই ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। সর্বশেষ ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল ঘটনার তিন দিন আগে। তিনি রাত সোয়া ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে কাজের কথা বলে ফের বেরিয়ে পড়েন। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। আমার ভাইয়ের তিনটা সন্তান। এই তিন শিশুকে নিয়ে এখন কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। জারিফ তবুও কিছুটা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু মেয়ে জারা ও জারির কিছুই বুঝে না। ছোট ছেলে জারির বয়স এখন ২ বছর তিন মাস। বাবার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা কিছুই জুটবে না ওর কপালে। কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্না দেখে চোখে পানি রাখতে পারেননি পাশে থাকা স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষী ও সহকর্মীরা। যদিও নিহতের সহকর্মীরাই শোককে শক্তিতে পরিণত করে হিমেলকে সান্তনা দিচ্ছেন। হিমেলের সাথে থাকা আজাদের অবুঝ ছেলে আফনান ইশরাত জারিফের চোখে ছিল সর্বস্ব হারানোর বেদনা। আজাদের এভাবে চলে যাওয়া শুধু তার বাহিনী-ই নয়; অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের মাঝেও কান্না, শোক আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আজাদের মৃত্যুর খবরের পর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে খুনিদের রক্ষা নাই বলে ওইসব জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফেসবুকে এই কর্মকর্তার দেয়া স্ট্যাটাসে কিছু অংশ হলো- সহযোদ্ধার মৃত্যু বেদনা দেয় একথা যেমন সত্য, তেমনি সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে মানবকূলে সৃষ্ট দানব ধ্বংসে আমাদেরকে আরও বেশি সংকল্পবদ্ধ করে! আজাদ, আপনাকে ফিরে পাবো না জানি, কিন্তু কথা দিচ্ছি আপনার হত্যাকারীদের রক্ষা নাই। সমূলে তাদের বিনাশ অনিবার্য করে তুলবোই!
উল্লেখ্য, গত শনিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানার কাছে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন আবুল কালাম আজাদ। বিস্ফোরিত বোমার স্পিøন্টার তার বাঁ চোখের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখান থেকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পর দিন রোববার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে বুধবার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় এনে সিএমএইচের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান আবুল কালাম আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। আজাদ থাকতেন মিরপুরের একটি বাসায়। তিনি র‌্যাব-১২ এর সিও এর দায়িত্ব পালন শেষে র‌্যাব গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
জীবন বৃত্তান্ত :
 ১৯৭৫ ইং সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ০৭ জুন ১৯৯৬ সালে ৩৪তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পরবর্তী নবীন অফিসার হিসেবে তিনি ৬ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাসদর, প্রশাসনিক শাখা, জাতিসংঘ মিশন ব্যানব্যাট-৫ (আইভরিকোস্ট), ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন, ১৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন) এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন কমান্ডো ছিলেন।
গত ২৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখ হতে ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ পর্যন্ত তিনি র‌্যাব-১২ এর কোম্পানি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ হতে ০৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতর, ইন্টেলিজেন্স উইং (টিএফআই সেল) এর উপ-পরিচালক এবং ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখ হতে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কর্মজীবনে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সুনামের সাথে পালন করেছেন।



 

Show all comments
  • তানবীর ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৪ পিএম says : 0
    তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ