Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নতুন ইতিহাসের আলো জ্বলবে সন্ধ্যায়

প্রধানমন্ত্রী আজ উদ্বোধন করবেন আইপিইউ সম্মেলন

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমন্ত্রণ পায়নি বিএনপি
পঞ্চায়েত হাবিব : সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন সেøাগানকে প্রতিপাদ্য ধরে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংসদের বাইরে থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হবে একাত্তরের ২৫ মার্চসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার চিত্র।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে রাজধানীতে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংসদের মূল ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সংসদ এলাকার ভেতরের সড়কগুলোতে রং-বেরঙের বাতি সজ্জিত গাছ বসানো হয়েছে। বিমানবন্দরসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও ঝলমলে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। উদ্বোধনী পর্বের বিশেষ আলোকসজ্জার মহড়া চলছে প্রতিদিনই। গতকাল রাতেও অনুষ্ঠানের মহড়া চলতে দেখা গেছে। ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল- এই পাঁচদিন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে আইপিইউ সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনসহ পুরো রাজধানী। সম্মেলন উপলক্ষে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।
আইপিইউভুক্ত ১৭১টি দেশের মধ্যে ১৩৫টি দেশের মন্ত্রী-এমপিসহ দুই হাজারেরও বেশি অতিথি অংশগ্রহণ করবেন সম্মেলনে। এছাড়াও সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় আইপিইউ সম্মেলন বিষয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুং।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)-এর ১৩৬তম সম্মেলন। এতে ৮২টি দেশের স্পিকার ও   ডেপুটি স্পিকাররা যোগ দিচ্ছেন। এই সম্মেলন বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিদের বন্ধন সুদৃঢ় করার  ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্পিকার আরও জানান, পাঁচদিনের এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বৈষম্য বিলোপ করে সবার জন্য মর্যাদা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা’। আইপিইউ-এর ১৩৮ বছরের ইতিহাসে এবারের অনুষ্ঠানটি হবে গ্রিন কনফারেন্স এবং এবারের অনুষ্ঠানে আইপিইউ ওয়েব টিভি উদ্বোধন করা হবে। এবারের অনুষ্ঠানে ১৬৪টি প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ১৩২ সংসদীয় প্রতিনিধি দল। বাকিরা পর্যবেক্ষক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ‘বড় অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি চর্চার ক্ষেত্রে আইপিইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং তিন তিন বার দলটি ক্ষমতায় ছিল। তারপরও আইপিইউ-এর মতো একটি বড় সম্মেলনে দাওয়াত পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তার মানে এটা নিয়ে সরকার কিছু একটা করছে। তিনি বলেন, বিশ্ববাসী জানে বর্তমান সংসদের প্রধানমন্ত্রী স্পিকার ডেপুটি স্পিকারসহ ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত। এ কারণে সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোকে বড় ভয় পায় সরকার। সে জন্য এ সম্মেলনে ডাকা হয়নি।  
সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় সংস্থা আইপিইউ। এ সংস্থাটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে এ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও আইপিইউ যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। উদ্বোধনীর পর প্রতিদিন কয়েকটি সেশনে ভাগ হয়ে অধিবেশন চলবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন দেশের সংসদীয় বিধি-বিধান, এমপি-মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, সংসদীয় কার্যবিধি, এমপিদের ক্ষমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার, রাষ্ট্রহীন মানুষের অবস্থা, দুর্দশা ও বিশ্ব মানুষের সংহতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
আইপিইউ সংশ্লিষ্টরা বলেন, আইপিইউ সম্মেলন বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারলে বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা অন্য উচ্চাতায় পৌঁছাবে। বিশ্ববাসী নতুন করে বাংলাদেশকে চিনবে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সংসদের ভালো প্র্যাকটিসগুলো নিয়ে বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিদেশী এমপিদের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সেশন নিয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে ২৫টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সম্মেলনের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ডিএমপি। পোশাকধারী ৮ হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে। সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজধানীর তারকা মানের আবাসিক হোটেল বুকিং দিয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও আইপিইউ যৌথ আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ মার্চ থেকে অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। সম্মেলনের সার্বিক তথ্যাবলি সংবলিত মিডিয়া সেন্টার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। এতে ২০০ সাংবাদিকের বসার ব্যবস্থা ও প্রেস কনফারেন্স করার সুবিধা থাকছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ডা. দিপু মনি, আবুল কালাম আজাদ, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল এবং বিরোধীদল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও  মো. ফখরুল ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, সকল শঙ্কা কাটিয়ে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সবচেয়ে বড় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজনে যাতে  কোন ধরনের ত্রæটি না থাকে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে আইপিইউ’র এই সম্মেলন বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সংসদ সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব কর্মকর্তারা জানান, সম্মেলনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে সংসদ ভবনে দর্শণার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে। সংসদ অনুমোদিত পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে পাস দেয়া হয়েছে।
ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘অতিথিদের চলাচল নির্বিঘœ করতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্মেলন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি সড়কে ডাইভারশন দিয়ে বিকল্প সড়কে যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইপিইউ সম্মেলনের মূল অনুষ্ঠান চলবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি)। এ দুইটি ভেন্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি সড়কে ডাইভারশন দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি সড়ক বন্ধ থাকবে। অতিথিদের বিমানবন্দর থেকে হোটেলে এবং হোটেল  থেকে ভেন্যু পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ট্রাফিক বিভাগ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদ ভবন, সংসদ এলাকা, বিআইসিসি এলাকায় দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সংসদ এলাকা সেজেছে অপরূপ সাজে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইতিহাসের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন, সাফল্য ও সম্ভাবনাগুলোকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে। এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো ফুটিয়ে তোলা হবে লেজার শো’র মাধ্যমে। এছাড়াও সংসদের ভেতরের রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে নানা রঙের মরিচবাতি শোভিত বৃক্ষ। সংসদ ভবনের নতুন সাজ দেখে থমকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন পথচারীরা।
শিশুবিষয়ক সংসদীয় ককাস : সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদেশি অতিথিদের মাঠপর্যায়ের পরিদর্শন কর্মসূচি নিয়েছে জাতীয় সংসদের শিশুবিষয়ক সংসদীয় ককাস। আগামী ৩ এপ্রিল অতিথিদের মিরপুর অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ককাসের সভাপতি মীর শওকাত আলী বাদশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ