পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এম এম উমেদ আলী/আনোয়ার হোসেন জসিম : মৌলভীবাজারের বড়হাট এলাকায়র জঙ্গি আস্থানায় পরিচালিত অভিযান সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থগিত করেছে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গতকাল সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম তিনি বলেন, আলোর স্বল্পতার কারণে আপাতত এ অপারেশন স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল (শনিবার) সকালে আবার অভিযান শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, ভেতরে একাধিক জঙ্গি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের বড়হাট জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত। এ অপারেশনকে ‘জটিল অপারেশন’ বলে মন্তব্য করেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় প্রচুর বিস্ফোরক ও একজন বিস্ফোরক এক্সপার্ট জঙ্গি আছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মৌলভীবাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস বিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সাথে ছিলেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল। প্রেস ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সোয়াত পরিচালিত অভিযান শুরু হয়েছে, নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন ম্যাক্সিমাস। এটি একটি জটিল অপারেশন কারণ ভেতরে একাধিক ভবন রয়েছে এবং ভবনে অনেকগুলো কামরা রয়েছে। আমাদের কাছে খবর রয়েছে, এখানে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক এবং একজন বিস্ফোরক এক্সপার্ট রয়েছে। সে কারণেই এখানে অপারেশন সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।’ তিনি বড়াহাটের জঙ্গি আস্তানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও জানান।
সিলেটের আতিয়া মহলের সূত্র ধরে মৌলভীবাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হযরত আবু শাহ (র.) দাখিল মাদরাসার পাশের একটি বাড়ি বুধবার ভোররাতে ঘিরে রাখে পুলিশ। টানা তিন দিনের মাথায় গতকাল শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকাল পৌনে আটটার দিকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ স্থলে অবস্থান নেয় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট ও কাউন্টার টেররিরজম ইউনিটের সদস্যরা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সকাল ১০টার দিকে তারা অভিযান শুরু করে বলে জানায় পুলিশের একটি সূত্র। অভিযান শুরুর পর থেকে থেমে থেমে গুলি চললেও দুপুর বারোটার পর থেকে ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত মূহুর্মুহু গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। ১২টা ৫২ মিনিটে ভয়ঙ্কর শব্দে একটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনা যায়। এরপর থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় কোন ধরনের গুলি বা বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়নি। সাড়ে ৪টার পর আবারো পাঁচ থেকে সাত মিনিট মূহুর্মুহু গুলি ও একটি বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। এরপর আরো দুয়েকবার কিছু গুলির শব্দ শোনা গেছে। এদিকে অপারেশন চলাকালে বড়হাট এলাকা থেকে কয়ছর আহমদ (৩০) নামের এক পুলিশ সদস্যকে আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি অকিল উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি একজন কনস্টেবল। পুলিশের অপর এক সদস্য ছোঁড়ার গুলির খোসা এসে তার গলায় লাগে। এতে তিনি আহত হয়েছেন। তার চিকিৎসা চলছে। গত বুধবার ভোররাত থেকে পুলিশ বড়হাটের এই ‘জঙ্গি আস্তানা’ ঘিরে রাখার পর এখানে বিভিন্ন সময় গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিকট শব্দে এই আস্তানা থেকে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে ওই জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এলাকায় গত বুধবার থেকেই ১৪৪ ধারা এখনো জারি আছে। বুধবার থেকে শুক্রবার এই তিন এ এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। তবে গতকাল (৩১ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও এরপর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকা বিদ্যুৎ ছিল না।
গন্ধামতিতে জঙ্গি নেই আছে বোমা
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, জঙ্গি আস্তানা নিয়ে গত দুইদিন ধরে ব্যাপকভাবে আলোচিত কুমিল্লার কোটবাড়ি গন্ধামতি এলাকার আরমানি নামের এক সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে সোয়াট টিম ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে মেলেনি কোনো জঙ্গির অস্তিত্ব। গত বুধবার বাড়ি ঘেরাওয়ের বিষয়টি টের পেয়ে জঙ্গিরা পালিয়েছে বলেও ধারণা পুলিশের। তবে ওই বাড়িতে জঙ্গিদের রেখে যাওয়া দুইটি বড়ো বোমা ও হ্যান্ড গ্রেনেড রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম।
কুমিল্লার কোটবাড়ি গন্ধামতি এলাকায় বুধবার দুপুরে জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কারের খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকার জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। সিটি নির্বাচনের আগের দিনের এ ঘটনা সেখানকার ভোটের এলাকায় প্রভাব না ফেললেও উদ্বিগ্ন ছিলেন লোকজন। নির্বাচনের কারণে জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান স্থগিত রাখা হলেও জঙ্গি চিহ্নিত বাড়ি ঘেরাওসহ গোটা এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে আসা সোয়াট টিম ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা কোটবাড়ির গন্ধামতি এলাকার আরমানি নামের বাড়িটিতে ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’ অভিযান শুরু করে। নিরাপত্তার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। কোটবাড়ি এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ধারা। ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর বিষয়টি দেখভাল করেন। গতকাল বিকেলে আভিযানিক টিম ওই বাড়িতে ঢুকে কোন জঙ্গি খুঁজে না পেলেও পাঁচ কেজি ওজনের দুইটি বোমা পেয়েছে। আর এমনটিই জানালেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
কোটবাড়ির গন্ধামতির ওই জঙ্গি আস্তানায় দুইজন জঙ্গির অবস্থান ছিলো এমনটি দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি বলেন, ওই বাড়িতে আনাস ও রনি নামের দুইজন জঙ্গি ছিলো। তাদের বয়স ২০-২৩ বছর হবে। আনাসের বাড়ি নোয়াখালি ও রনির বাড়ি রাজশাহীতে। তারা মার্চের প্রথম দিকে কুমিল্লার এ বাড়িটি ভাড়া নেয়। মিরসরাই থেকে আটক দুই জঙ্গি থেকে এ ধরনের তথ্য পাবার পর কুমিল্লার এ বাড়িটির ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে আমরা নিশ্চিত হই। ডিআইজি বলেন, বুধবার বাড়িটি চিহ্নিত করার পর সকালে জঙ্গি আনাস ও দুপুরের আগেই জঙ্গি রনি পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, আভিযানিক দল ওই বাড়িতে ঢুকে জঙ্গিদের পায়নি। তবে তাদের রেখে যাওয়া একটি ট্রলিতে পাঁচ কেজি ওজনের দুইটি বোমা, চারটি হাতে বানানো গ্রেনেড ও দুইটি সুইসাইড ভেস্ট রয়েছে। জঙ্গিদের অচেতন করার জন্য ওই ভবনে গ্যাস ছোড়া হয়েছিল। গ্যাসের কার্যকারিতা থাকায় বোম ডিসপোজাল ইউনিট কাজ করতে পারছে না। বোমা নিষ্ক্রিয় কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। শনিবার সকালে কাজ শুরু হবে বলেও জানান ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।