Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরাজয়ের ষোলকলা পূর্ণ আফজল পরিবারের

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উন্নয়নে আস্থা রেখেই সাক্কুকে বেছে নিয়েছে নগরবাসী
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের জন্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। গত পাঁচ বছরে কুমিল্লা সিটির বিভিন্ন উন্নয়নে আস্থা রেখে এবারও ভোটাররা সাক্কুকে বেছে নিয়েছেন। সাক্কুর অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ আরো জোরালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার মধ্যদিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নেও সাক্কু অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখবেন এমন প্রত্যাশা থেকেই নগরবাসী সাক্কুকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মুখ থেকে জানা গেছে দ্বিতীয় মেয়াদে সাক্কুর মেয়র হওয়ার সাতকাহন।
এই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির ভাষার চেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে ব্যক্তি ইমেজ ও নগর উন্নয়নের বিষয়। কুসিক এলাকার মানুষ বিগত দিনের উন্নয়নে ভরসা ও আগামীর উন্নয়নের প্রতি আশা-আকাঙ্খা রেখেই সাক্কুকে বিজয়ী করেছে। কুসিকের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাÐ করেছেন সাক্কু। সাংগঠনিক কাঠামোবিহীন একটি নতুন সিটিকে সাজিয়েছেন বর্ণিল করে। রাস্তা-ঘাট সংস্কার, নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ডিভাইডার, রঙ- বেরঙের সড়কবাতি স্থাপন, ট্রাফিক চত্বর সাজানো, ফোয়ারা নির্মাণ, রাস্তার পাশের খালি জায়গায় ফুলের বাগান, নগর উদ্যানকে নান্দনিক করে শিশুদের জন্য উপযোগী করে তোলাসহ নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন সাক্কু তাঁর প্রথম মেয়াদে। এবারের নির্বাচনে নিজদল বিএনপি ছাড়াও কুমিল্লার সুধীসমাজ ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির লোকজন যারা বিগত সময়ে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগী হয়েছেন তাদের পুরো সমর্থনই ছিল সাক্কুর ওপর। এছাড়াও নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের একটি বড় অংশ সাক্কুকে ভোট দিয়েছে। সবমিলে নগর উন্নয়নে সাক্কুর বিকল্প নেই- ভোটারদের এমন ভাবনার প্রতিফলনই ঘটেছে কুসিক নির্বাচনে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পরাজয় আফজল খান পরিবারের জন্য একটি বড়ো রকমের ধাক্কা বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সীমার নির্বাচন কেবল কুমিল্লা আওয়ামী লীগের জন্যই নয়, আফজল খান পরিবারের জন্যও একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিলো। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আফজল পরিবারকে জনপ্রতিনিধিত্ব করার সমর্থন বারবার দিলেও তা হাতছাড়া হয়ে যায়। নির্বাচনে জয়ের মুখ দেখতে পারছে না পরিবারটি। পৌরসভা থাকাকালীন আফজল খান আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে এবং ২০১২ সালে নবগঠিত কুমিল্লা সিটির প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিয়েও জয়লাভ করতে পারেননি। কেবল তাই নয়, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আফজল পুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও পরাজিত হোন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়েও প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর কাছে হারলেন আফজল কন্যা সীমা। আর এ পরাজয়ের মধ্যদিয়ে যেনো ষোলকলা পূর্ণ হলো আফজল পরিবারের।
এদিকে সিটি নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে দুষেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমা। গণমাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়ায় সীমা বলেছেন, ‘ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের অতিমাত্রায় নিরপেক্ষতার নামে প্রশাসন আমাদের সাথে রূঢ় আচরণ করেছে।’ অন্যদিকে কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন ‘দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। কিন্তু জয় হয়েছে গণতন্ত্রের। বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে বলেই কুমিল্লা সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে আমাদের দলীয় প্রার্থীর জয়ের জন্য কর্মীদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া দরকার ছিলো। ভোটের জন্য ভোটারের দ্বারে দ্বারে যেতে হয়। কাউকে বাধ্য করে ভোট আদায় করা যায় না।’
এদিকে দলমতের উর্ধ্বে থেকে সকলকে সাথে নিয়ে দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে একটি সুন্দর, পরিকল্পিত ও বিশ্বমানের নগরী গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। জয়-পরাজয়ের হিসেব ভূলে গিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের সাথে নিয়ে নগরীর উন্নয়ন করে যেতে চান তিনি। গতকাল (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা শেষে গণমাধ্যমে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় পুনঃনির্বাচিত মেয়র সাক্কু এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় বিজয়ী মেয়র সাক্কুকে ঘিরে কর্মী, সমর্থক আর সাধারণ মানুষের উচ্ছ¡াস, আনন্দ বেড়েই চলছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিজয়ের ফলাফল শুনে টাউন হল থেকে নানুয়াদিঘী এলাকার বাসভবনে ফেরার পর হাজারো নারী পুরুষ সাক্কুর বাসভবনের চারতলায় দল বেঁধে গিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। শুক্রবার সকালে নগরীর দক্ষিণে দলের এক কর্মীর মায়ের লাশ দেখে এসে সাড়ে ১১টায় যোগ দেন কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক ফলাফর ঘোষণার অনুষ্ঠানে। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বলেন আজকে সারাদেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ফুটে ওঠেছে। পরে তিনি নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রাপ্তভোট উল্লেখ করে তাদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ২১ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুইটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করায় ওই দুইটি ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে পুনরায় ভোট গ্রহণ হবে বলেও তিনি জানান। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর নির্বাচন অফিস মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে নবনির্বাচিত মেয়র সাক্কু বলেন, দলমতের উর্ধ্বে ওঠে আমি কুমিল্লার উন্নয়নে কাজ করে যাবো। নগরীর উন্নয়নের যে ধারা আমি শুরু করেছি তা অব্যাহত রাখার মধ্যদিয়ে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করবো। আর সবাইকে নিয়ে পরিকল্পিত ও বিশ্বমানের কুমিল্লা নগরীর গড়ার কাজ শুরু করবো। এবারের কাজে বেশি প্রাধান্য থাকবে জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের বিষয়টি। সাক্কু বলেন, নগর উন্নয়ন কাজের পরামর্শের জন্য প্রয়োজনে বিজিত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকেও সিটির পরিষদ সভায় রাখা হবে।
কাউন্সিলর আ’লীগের ১৫ বিএনপি ৮ জামায়ত ৩
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৪জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সংরক্ষিত আসনে ৪০জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও ওয়ার্ডভিত্তিক আলোচনায় ছিলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ১৫জন, বিএনপির ৮জন, জামায়াতের ৩জন এবং স্বতন্ত্র ৪জন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- ১নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত কাজী গোলাম কিবরিয়া। ২নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মাসুদুর রহমান মাসুদ। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সরকার মাহমুদ জাবেদ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র আবদুল জলিল। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সৈয়দ আবির আহমেদ ফটু। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াতের মোশারফ হোসেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মো. শাহআলম খান। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াতের একরাম হোসেন বাবু। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের জমির উদ্দিন খান জম্পি। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র মনজুর কাদের মনি। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের হাবিবুর আল আমিন সাদী। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র ইমরান বাচ্চু। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির শাখাওয়াত উল্লাহ শিপন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সেলিম খান। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাইফুল বিন জলিল। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম বাবুল। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মো. সোহেল। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র আফসান মিয়া। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির জাকির হোসেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজ। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ফলাফল স্থগিত। তবে বিএনপির কাজী মাহবুবুর রহমান এগিয়ে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির শাহআলম মজুমদার। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আলমগীর হোসেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ফজল খান। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র এমদাদ উল্লাহ। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ফলাফল স্থগিত।
সংরক্ষিত আসনের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউছারা বেগম সুমি। ২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির নাদিয়া নাসরিন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের উম্মে কুলসুম মুনমুন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির রুমা আক্তার সাথী। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নুরজাহান আলম পুতুল। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির নেহার বেগম। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ফলাফল স্থগিত তবে স্বতন্ত্রের উম্মে সালমা এগিয়ে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী খোদেজা বেগম এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফলাফল স্থগিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ